শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:০২
ব্রেকিং নিউজ

চিকিৎসাসেবায় অনন্য স্কয়ার হাসপাতাল

চিকিৎসাসেবায় অনন্য স্কয়ার হাসপাতাল

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : চিকিৎসাসেবায় বরাবরই ব্যতিক্রমী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল। দেশের ভেতরে অত্যাধুনিক বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি হাসপাতালটি। করোনা মহামারিকালেও সেই সেবা অক্ষুণ্ন রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোভিডে আক্রান্ত রোগী ও সাধারণ রোগীদের সমানতালে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। একজন রোগী হাসপাতাল থেকে যে ধরনের চিকিৎসা ও সেবা প্রত্যাশা করেন, সেটি শতভাগ পূরণের জন্য সচেষ্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

করোনা মহামারিকালে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানে যুক্ত প্রায় ৫৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে স্কয়ার হাসপাতাল। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীরা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে পায়। এছাড়া হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপেশাদার মনোভাবের কারণেও অনেকের বিরক্তির উদ্রেক হয়। কিন্তু চিকিত্সা নেয়ার স্বার্থে বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা কথা বলে না রোগী ও তাদের স্বজনেরা। এমন বাস্তবতায় স্কয়ার হাসপাতালে ঢোকামাত্রই হাসপাতাল সম্পর্কে প্রচলিত সাধারণ ধারণাগুলো পালটে যায়। মনে হয় সদিচ্ছা থাকলেই একটি হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং বিশ্বমানের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এবং সেই কাজই সম্পন্ন করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত এবং আক্রান্ত নন রোগীদের পৃথকভাবে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে দেশে সবচেয়ে সফল স্কয়ার হাসপাতাল। কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে কঠোরভাবে। এর ফলও পাওয়া গেছে, করোনা রোগীর মৃত্যুর হার অন্য বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় এখানে অনেক কম।এই হাসপাতালে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, ইএনটি, চক্ষু ছাড়াও হৃদেরাগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনিসহ সব ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন রোগীরা।

‘এট স্কয়ার, উই কেয়ার’—এই স্লোগান সামনে রেখে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ১৭ বছর হতে চলল হাসপাতালের বয়স। শুরুতে শয্যা ছিল ৩০০টি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালে শয্যাসংখ্যা ১০০ বাড়ানো হয়। আর গেল বছর রোগীদের চাপে শয্যাসংখ্যা আরো ১০০ বাড়িয়ে ৫০০ করা হয়। স্কয়ারে রোগ নির্ণয়ে রয়েছে সর্বাধুনিক ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও দুটি ক্যাথ ল্যাব। ৫১৬ জন ডাক্তার ও ৭৫২ জন রেজিস্ট্রার্ড প্রশিক্ষিত নার্স কর্মরত রয়েছেন। বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনাও বেশ আধুনিক। রয়েছেন ১ হাজার ৪২৭ জন ডেডিকেটেড স্টাফ। ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও হেলিকপ্টার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসও আছে।

বিশেষ জরুরি সেবা প্রদানে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি টিম রয়েছে। এই কোড ব্লু টিমের সদস্যরা তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে আছে সাধারণ কেবিন, ডিলাক্স ও স্যুট কেবিন। সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ, সিসিইউ, নিউনেটাল আইসিইউ, পিআইসিইউ, নিউরোলজিক্যাল আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম। আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড হাউজ কিপিং, লন্ডারিং ও ক্লিনিং ব্যবস্থা রয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে। আছে ২৪ ঘণ্টা উন্নতমানের নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্কয়ার হাসপাতালের মূল ভবনের সামনের ভবনটি পুরোপুরি কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদাভাবে সেবা দেয়া হচ্ছে। ২৫ শয্যার উন্নতমানের কোভিড আইসিইউ রয়েছে। কোভিড অপারেশন থিয়েটার আছে, যেখানে শুধু কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। কোভিড ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে। ৩০ বেডের কোভিড ওয়ার্ড রয়েছে। আছে কোভিড রোগীদের জন্য ৪৫টি কেবিন।

অর্থাৎ কোভিড মহামারিকালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদাভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য যে রোগ আছে, তারও যেন সমানতালে চিকিৎসা করা যায় সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সার্বক্ষণিক রোগীরা পাশে পেয়ে থাকে। কোভিড রোগীদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের থাকতে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় রোগী যাতে একাকিত্ব বোধ না করে, সেই দকটাও খেয়াল রাখে কর্তৃপক্ষ। রোগীর মনোবল যাতে চাঙ্গা থাকে, সেজন্য প্রতিনিয়ত ইতিবাচক মনোভাব দেখান ডাক্তার-নার্সরা। কিছুক্ষণ পর পর তারা রোগীর জ্বর ও প্রেশার মাপাসহ রুটিন চেকআপ করেন এবং সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের স্বনামধন্য চিকিত্সক ও স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান এবং পরিচালক (মেডিক্যাল সার্ভিসেস) ডা. মীর্জা নাজিম উদ্দিন।

স্কয়ার হাসপাতালের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. এসাম ইবনে ইউসুফ সিদ্দিকী বলেন, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক দিনের জন্যও স্কয়ার হাসপাতালে চিকিত্সা কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। করোনা মহামারিতে স্কয়ার হাসপাতালে ৫৮৬ জন ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের এই হাসপাতালে রেখে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেবা দিয়েছে। এ কারণে তারা কোভিডমুক্ত হওয়ার পর নতুন উদ্যমে উজ্জ্বীবিত হয়ে আবারও চিকিৎসাসেবা প্রদানে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। কোভিড রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা প্রদান কার্যক্রমে যাতে কোনো ত্রুটি না হয়, সেজন্য সারাক্ষণ মনিটরিং করা হয়।
উত্তরণ বার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK