শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৯:১৮

শেখ রাসেল- শরতের উজ্জ্বল ফুল

শেখ রাসেল- শরতের উজ্জ্বল ফুল

  • আশেক মাহমুদ সোহান
বেঁচে যদি থাকতেন তাহলে আজ ৬০ বছর বয়সে পা দিতেন। এতদিনে হয়তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদলের এক সুপুরুষই হতেন। পিতা অপূর্ণ সোনার বাংলার অগ্রগতি পরিচালনার কান্ডারি হতেন তিনি নিজেই! বলা যায় না, বাবার মতোই নিজের মুক্ত স্বাধীন মনের জোরে হতে পারতেন অন্যকিছু। ক্রীড়াবিদ, প্রকৌশলী, অধ্যাপক আর কত কি! এমনও হতে পারতো, মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস সংকলনের দায় নিয়ে উপহার দিতেন আমাদের আরও চমকপ্রদ শিক্ষনীয় ইতিহাস। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর হেমন্তের জ্যোৎস্না-প্লাবিত রাতে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম যে শেখ রাসেলের, অনেক অনেক সম্ভাবনার স্বপ্নিল দোলা দিয়ে তিনি চলে গেছেন জীবনের শুরুর দিনগুলোতেই। সম্ভাবনা খোয়ানোর হতাশা নিয়েই আমরা বেঁচে থাকছি। 
 
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। সবার চোখের মনি, ঘর আলো করা এক প্রদীপ। হাসু, জামাল, কামাল ও রেহানাসহ সবার জন্য এক আনন্দের বহমান নদী রাসেল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দার্শনিক ও শান্তি আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক রার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। রাসেলের লেখা নিয়ে বেগম মুজিবের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা করতেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে শুনে শুনে বেগম মুজিবও হয়ে উঠেছিলেন রাসেলভক্ত। আর সে কারণেই হয়তো কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রেখেছিলেন রাসেল। ছেলেকে রাসেলের মতোই পৃথিবীবিখ্যাত করে তোলার স্বপ্ন হয়তো বুকে লালন করছিলেন। বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধু তো না ভেবে কিছু করতেন না। আর করতেন না বলেই তাদের স্বপ্নের সম্ভাবনাকে পুঁজি করে আমরা আজও উন্নতির চাকা সচল রাখছি। আর এই কথা ভাবলে শেখ রাসেলের সম্ভাবনার কথাও আমাদের বেদনাকাতর করে তোলে। 
 
‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, ‘আব্বা বালি চলো’। কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম, ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ’ ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।’
 
শিশু রাসেলের বেশিরভাগ সময় কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। কারণ তার বাবা রাজনৈতিক বন্দি হয়ে কারাগারে কাটিয়েছেন জীবনের বেশিরভাগ সময়। তাই তো মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে আব্বা বলে সম্বোধন করত রাসেল। এসব নিয়ে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর মনেও চাপা কষ্ট অনুভুত হত। সেই চাপা কষ্টের আজো অবসান ঘটেনি। কারণ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন নরঘাতকেরা ছাড় দেয়নি অবোধ শিশুটিকেও। শেখ রাসেলের ছিল স্বল্পায়ু জীবন। এতটুকু জীবনেই প্রাণোচ্ছল শিশু রাসেল মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিল, বঙ্গবন্ধুর আনন্দের সঙ্গী ছিল আর বাঙালির চিরন্তন পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনে তার অনাবিল উচ্ছ্বাস ছিল অফুরন্ত। ছোট্ট শিশুটি যে প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতার নির্মমতম শিকার হয়েছিল, তা এখনো বিশ্ব মানবতাকে বিচলিত করে। আর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি শিশুকে একটি সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতামুক্ত দেশ উপহার দেয়া আমাদের কর্তব্য। শেখ রাসেলের প্রয়াণদিবস আজ। স্বল্পায়ু রাসেল এখন শরতের স্নিগ্ধ এক ফুল, আমাদের মনে। 
 
লেখক: উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK