শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১০:০৩
ব্রেকিং নিউজ

নবাবগঞ্জের জমিদার বাড়ি ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বহন করে

নবাবগঞ্জের জমিদার বাড়ি ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বহন করে

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : নবাবগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনাসমৃদ্ধ উপজেলা। রাজধানীর খুব কাছের এই উপজেলাটির অন্যতম আকর্ষণ প্রাচীন কিছু জমিদার বাড়ি। এখানে রয়েছে ইছামতি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অপূর্ব সুযোগ। সূর্যাস্তে ইছামতির রূপ মুগ্ধ করে সবাইকে। এই ইছামতির পাড়েই নবাবগঞ্জ। এখানের স্থাপনা ও দশর্নীয় স্থানগুলো কোনো না কোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বহন করে। ঘুরে দেখলে বাংলার কয়েকশ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারা যায়।
 
নবাবগঞ্জের দশর্নীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ২শ বছরের পুরানো জজ বাড়ি।  জমিদার ব্রজেন সাহা বসবাসের জন্য তৈরি করেন ব্রজ নিকেতন। পরবর্তীতে আশির দশকে এক বিচারক পরিবার ব্রজ নিকেতন কিনে বসবাস শুরু করলে এটি ‘জজ বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
 
নবাবগঞ্জের কলাকোপায় অবস্থিত জজ বাড়ির চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে এখনো মুগ্ধ হয় দর্শনার্থী। যেকোন পথিক হঠাৎ বাড়িটির কারুকাজ দেখলে থমকে দাঁড়াবে। বাড়ির সামনে রয়েছে বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছের পরিপূর্ণ বাগান। বিশালাকৃতির ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাগান ও পুকুর। যেখানে টলটলে পানিতে পা ভিজালেও ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। বাগানের হাজারো রকমের ফুল অনায়াসে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গাছগাছালির সমারোহ, পাখির কিচিমিচির শুনতে শুনতে সময় পার হয়ে যায়। এটি বিভিন্ন নাটক ও চলচ্চিত্রের শূটিং স্পষ্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিছুদিন আগে জনসাধারণের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও এখন কিছুটা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
 
জজ বাড়ির পাশে রয়েছে কোকিলপ্যারি জমিদার বাড়ি। এ বাড়িটির সামনের দিকে বিশাল বিশাল কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে। আছে দৃষ্টি নন্দন ঝুলানো বাগান। এই জমিদার বাড়ির একটু দূরেই তেলেবাড়ি। যা মঠ বাড়ি নামেও পরিচিত। ইছামতি নদী ঘেঁষে এই তেলেবাড়ি এখন ২৯ আনসার ব্যাটালিয়ানের বসবাস এবং আনসার ও ভিডিপি’র ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। যেকোনো উৎসবে এখানেও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে যায়। এটিও একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। ছায়া সুনিবিড় সুন্দর একটি পরিবেশ। পিকনিক স্পট হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। 
 
কথিত আছে তেলে বাড়ির মালিক লোকনাথ তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন বলে বাড়িটির নাম তেলেবাড়ি হয়ে যায়। তেলেবাড়ির পাড় ঘেঁষে যে কয়েকটি দালান আছে, প্রথম দালানটির নাম পাইন্না বাড়ি। এই বাড়ির অন্যতম মালিক মধুবাবু পান বিক্রি করে ধনী হওয়ায় এর নাম হয় পাইন্না বাড়ি বলে স্থানীয়রা জানান। সেই বাড়ি থেকেই নদীর ওপারের জনবসতি দেখতে দেখতে আপনার সময় পার হয়ে যাবে।
 
নবাবগঞ্জে আরেকটি অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হলো আন্ধারকোঠা। এটি খেলারামের বিখ্যাত বিগ্রহ মন্দির বলে পরিচিত। বিশাল একটা পুকুর পারে দুইতলা বিশিষ্ট আন্ধারকোঠায় রয়েছে ৯টি গম্বুজ। গম্বুজগুলো দেখতে ছনের ঘরের মত। মাঝখানেরটি সবচেয়ে বড়। যা দেখতে পূজার বেদীর মতো। আন্ধারকোঠার মাটির নিচতলায় রয়েছে অনেকগুলো কুঠুরি। এক সময় সিঁড়ি দিয়ে নিচের তলায় যাওয়া যেতো। তবে সিঁড়িগুলো ভেঙে যাওয়ায় এখন আর যাওয়া যায় না। আর উপরের তলায় যাওয়ার সিড়িগুলো ভেঙে গেছে। 
 
এই বাড়িটি নিয়ে একটা লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ছিলো পাঁচতলা ভবন। এক রাতে তিনটি তলা দেবে যায় মাটির নিচে। ভবনের ওপরের তলায় একটি বড় চৌবাচ্চা আছে। জনশ্রুতি রয়েছে খেলারাম ধনীদের ধনদৌলত ডাকাতি করে গরিবদের মাঝে দান করতেন। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিলো ইছামতি নদীর পাড়ে। নদীপথে ধন সম্পদ এনে এ সুড়ঙ্গ পথে বাড়িতে নিয়ে আসতেন খেলারাম। এছাড়া এই বাড়িটির পাশে আরেকটি বিরাট পুকুর রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত, মাকে বাঁচাতে খেলারাম সেই পুকুরে নেমে ছিলেন আর উঠে আসেননি। এই পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কিছু চাইলে তার ইচ্ছা পূরণ হতো বলে সে সময়ের মানুষ বিশ্বাস করতো।  
 
উত্তরণ বার্তা/এআর
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK