শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০০:৩২
ব্রেকিং নিউজ

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শালবন দিনাজপুরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রেখেছে

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শালবন দিনাজপুরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রেখেছে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : জেলায় দেশের উত্তর অঞ্চলের  প্রাকৃতিক ও সৃজিত বেশ কয়েকটি বনাঞ্চল রয়েছে। এ দীর্ঘ বড় বন অঞ্চল গুলোই প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রেখেছে। দিনাজপুর বিভাগীয় বনাঞ্চলের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, উত্তরের জনপদ দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত এ সব বন অঞ্চলের  মধ্যে সিংড়া ফরেষ্ট, বীরগঞ্জ ফরেস্ট , নবাবগঞ্জের বন অঞ্চল উল্লেখ যোগ্য অন্যতম বনাঞ্চল হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে । কিন্তু জেলার বিরল উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত ধর্মপুর ফরেস্ট বোরো অঞ্চল অবস্থিত।  উল্লেখিত বনভূমি গুলোর থেকে আয়তনে বড় এবং শাল গাছসহ বিভিন্ন প্রকৃতির গাছপালা থাকায় ধর্মপুর বনাঞ্চল  সারা দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক  পরিচিত রয়েছে।

এ বনের বিশেষত্ব হলো জেলার বিরল উপজেলার  ২১টি মৌজা মধ্য অবস্থিত  ২ হাজার ৭৩০ একর এলাকা নিয়ে এ বনাঞ্চল। বনের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুরনো শাল গাছ। বনবিড়াল, খেকশিয়াল, বিজিসহ  ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির পাখির বসবাস রয়েছে। বন এলাকার ভিতর দিয়ে যোগাযোগের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা রাস্তা। এসব রাস্তা দিয়ে স্থানীয়রাসহ  বহিরাগত লোকজন যাতায়াত করে থাকে। রাস্তা গুলো পরিপাটি এবং আঁকা- বাঁকা। এ আঁকা-বাঁকা পথ ধরে যতই বনের ভিতরে যাওয়া যায়, চোখে পড়ে সারি সারি শালগাছ। শালগাছের মাঝারি আকারের পাতাগুলো গাঢ সবুজের সমারোহে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বনের মধ্যে হঠাৎ ডেকে ওঠে ঘুঘু পাখি। এ ডাক শুনে চমকে ওঠার কারণ নেই। কারণ ঘুঘু পাখি দীর্ঘ সুরে “ঘু-ঘুৎ, ঘু-ঘুৎ’’শব্দে হয়ত বনে আহত দর্শনার্থীদের অভিনন্দন জানায়। আবার বনের ফাঁকা স্থানে সৃজিত বন গুলোর সারি বদ্ধ ইউক্লিকটাস গাছ গুলোর লম্বা লম্বা পাতা গুলো বাতাসে সারাক্ষণ ঝিক ঝিক করে অজানা সুর সৃষ্টি করে চলে সারাক্ষণ। বীটের মধ্যে বাঁশ ও বেতের গাছ রয়েছে।
 
এ বন বিভাগের কর্মরত ফরেস্টটার মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এত বড় এলাকা জুড়ে বনটির কথা শুনে অনেকে ভয় পেয়ে থাকেন। ২১ মৌজা জুড়ে কোথাও বড় আকারে, আবার কোথাও ছোট আকারে বন থাকলেও ভীতিকর কোন পরিবেশ নেই। তারপরে এ বনে রয়েছে ১০১ সদস্য বিশিষ্ঠ বনরক্ষা নামের একটি কমিটি। কমিটির সদস্যরা বনের গাছ রক্ষাসহ দর্শনাথীদের সহযোগিতা করে থাকে।

বন বিভাগের সূত্রটি জানায়, ১৯৫২ সালে ২ হাজার  ৭৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ধর্মপুর ফরেস্ট বীট নামে সংরক্ষিত বনভূমির গেজেট প্রকাশ করেন তৎকালীন সরকার। ২১ টি মৌজা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ রয়েছে । সবচেয়ে বেশি বনভূমির মৌজা গুলো হল-ধর্মপুরে ১ হাজার  ২০০’একর, ধর্মজইন মৌজায় ৬০০একর,কামদেবপুর মৌজায় ১৬৫ একর, রানীপুর মৌজায় ১৫০ একর এবং আরও ৩৪০ একর খাস জমি সহ মোট বনভূমি ২ হাজার  ৪৫৫ একর, রয়েছে। অবশিষ্ট ২৪৫ একরের মধ্যে ৩৮ একর অর্পিত সম্পত্তি ছাড়া বিভিন্ন ভাবে রয়েছে এ সব সম্পত্তি। বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজনকে সাথে নিয়ে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বন রক্ষা নামের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বীট অফিসার ও বনরক্ষা কমিটির সদস্যরা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে াবেহাত সম্পত্তি উদ্ধার করে সৃজন করেন নতুন নতুন উডলোক বাগান।  এসব সম্পত্তি যাদের দখলে ছিল তাদেরকে উপকার ভোগীর তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এভাবে একের পর এক উদ্ধার হতে থাকে ধর্মপুর বীটের বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পত্তি এবং রক্ষা হতে শুরু করেছে ধর্মপুর বীট।

বন বিভাগের সূত্রটি জানায়, এ পর্যন্ত ধর্মপুর বীটে সৃজিত উডলোট বাগান ৬০০ একরে দাঁড়িয়েছে।  এসব সৃজিত উডলোট বাগানে উপকার ভোগীর সংখ্যা ৮০০ জনের মত। গত ২০০২ সালে সরকারের রক্ষিত শালবন থেকে ৪০% লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিল বনরক্ষা কমিটিকে। যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারি নীতিমালার মধ্যেই এ বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

বন রক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ধর্মপুর বীটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া ১০ কি:মি: দীর্ঘ নোনা নদী রয়েছে। সংস্কারে অভাবে এটি মরে যেতে বসেছে।তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এই এলাকার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য এবং  নৌ- পরিবহন  প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরীর সাথে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এ নদীটি খনরের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।  

বন বিভাগের সূত্রটি জানায়,  বনের মধ্যে রয়েছে ছোট বড় আকৃতির ৪৫ টি পুকুর। এসব পুকুর গুলো দ্বি-বার্ষিক মেয়াদে লীজ দিয়ে সরকার প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নোনা নদী এবং ৪৫ টি পুকুর সংস্কার করলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি খরা মৌসুমে জলাশয় গুলোর পানি দিয়ে বনের গাছ সেচ দেয়া সম্ভব হবে।

ধর্মপুর বীট কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান জানান, এই বন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রাখছে। সৃজিত বনে অসংখ্য দু:স্থ মানুষ উপকার ভোগী থাকায় তারা আর্থিক ভাবে কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হচ্ছে। বন কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ধর্মপুর বীটের বন রক্ষায় বন কমিটি সর্বাত্ত্বক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু গত ২০০২ সালে শালবন থেকে ৪০% লভ্যাংশ দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা অন্যান্য সদস্যদের নানা প্রশ্নের সুম্মুখীন হচ্ছি। সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী জানান, বনের অভ্যন্তরে থাকা ৪৫ টি পুকুর ও নোনা নদীটি সংস্কার কারা জরুরী হয়ে পড়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ