শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৪:২৯

কাঁচা আমের ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা ১টি রেসিপি

কাঁচা আমের ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা ১টি রেসিপি

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
কেউ কেউ কাঁচা আম খেতে পছন্দ করেন ভর্তা বানিয়ে, কেউ খান সরবত বানিয়ে আবার কেউ ডালে। কাঁচা আম যেভাবেই খান না কেন, এতে আছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। 
 
কাঁচা আম কেন খাবেন?
কাঁচা আমের অসংখ্য ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি, কে, এ, বি-৬, এবং ফোলেট বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। আয়ুরবেদ শাস্ত্র হজমের সমস্যা দূর করতে, দৃষ্টিশক্তির উন্নয়নে এবং ওজন কমাতে কাঁচা আম খেতে উপদেশ দেয়।
 
কাঁচা আমের ১০টি উপকারিতা
১। ওজন কমাতে কাঁচা আম
ওজন কমাতে কাঁচা আমের জুড়ি মেলা ভার। কাঁচা আম আপনার মেটাবলিযম বৃদ্ধি করে যার ফলে আপনি আরও বেশী ক্যালরি খরচ করেন। কাঁচা আমে আছে খুব কম ক্যালরি এবং এটা টক হওয়ার ফলে এতে কোন চিনি নেই, তাই এটা ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন। 
 
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কাঁচা আমে থাকা ভিটিমিন সি, ভিটামিন এ, এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে এবং সংক্রমণ ঠেকাতে সবসময় কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। কাঁচা আমের উপকারিতা পুরোপুরি পেতে এটা রান্না করার চেয়ে কাঁচা খাওয়া ভাল। কাঁচা আমের ভর্তা যেমন উপকারি তেমনি কাঁচা আমের সরবত গরমের মধ্যে আপনাকে তৃপ্তি দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখবে। 
 
৩। কাঁচা আম অম্লতা (acidity) দূর করে
যারা বুক জ্বালাপোড়া বা অম্লতার সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁচা আম খেতে পারেন। পাকস্থলির এসিড নিউট্রালাইজ করতে কাঁচা আমের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং এমিনো এসিড এক সাথে কাজ করে, যার ফলে এসিড রিফ্লাক্স কমে এবং এসিডিটির উপশম হয়। এসিডিটির সমস্যা হলে কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন; উপকার পাবেন।
 
৪। পানি শূণ্যতা দূর করে কাঁচা আম
প্রচন্ড গরমে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সের ফলে পানি শূণ্যতা বা ডিহাইড্রেশান দেখা দেয়। কাঁচা আম দেহ থেকে ঘামের সাথে বের হয়ে যাওয়া সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। গরমের দিনে পানি শূণ্যতা থেকে বাঁচতে কাঁচা আমে সামান্য লবণ মিশিয়ে খান; পানি শূণ্যতা দূর হবে।
 
৫। লিভার পরিষ্কার বা ডিটক্সিফাই (Detoxify) করে
লিভারের সমস্যা দূর করতে অন্যতম প্রাকৃতিক ঔষধ হচ্ছে কাঁচা আম। কাঁচা আম লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে লিভারকে পরিষ্কার রাখে। আপনি যখন কাঁচা আম চিবিয়ে খান তখন এটা লিভারে বাইল এসিড নিঃসরণ বৃদ্ধি করে এবং লিভারকে ব্যাক্টেরিয়ার ইনফেকশান থেকে রক্ষা করে। কাঁচা আম খেতে ভাল না লাগলে এটা সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
 
৬। দাঁত সুন্দর রাখে কাঁচা আম
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কাঁচা আম একটি কার্যকর ফল। এছাড়া কাঁচা আম মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং দাঁতের ক্যাভিটি রোধ করে। মজবুত এবং চকচকে দাঁত চাইলে আজই অভ্যাস করুন কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়ার।
 
৭। পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে
গরমে আমাদের শরীর পানির জন্য হাহাকার করে। এছাড়া গরমে অনেকের মধ্যেই হজমের সমস্যা দেখা দেয়। কাঁচা আম ডায়ারিয়া, বদ হজম, ডিসেন্ট্রি এবং পাইলসের মত পাকস্থলীর ক্রনিক সমস্যা দূর করে। এছাড়া কাঁচা আম মর্নিং সিকনেস দূর করে এবং খাদ্য সহজেই হজম হতে সাহায্য করে।
 
৮। কাঁচা আম রক্তের রোগ দূর করে
গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা আম রক্তের রোগ যেমন এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা, রক্ত জমাট বাঁধা, হিমোফিলিয়া, ইত্যাদি দূর করে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটা রক্তনালির নমনিয়তা (elasticity) বৃদ্ধি করে এবং নতুন রক্ত কণিকা জন্মাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটা যক্ষা ও কলেরা থেকে শরীরকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
 
৯। হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে কাঁচা আম
কাঁচা আমে আছে নায়াসিন বা ভিটামিন বি-৩, যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকলে শুধু হৃদরোগই নয়, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে। এছাড়া নায়াসিন রক্ত চলাচলের উন্নয়ন করে যার ফলে হৃদপিন্ডের স্পন্দন ঠিক থাকে এবং হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে।
 
১০। কাঁচা আম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় 
কাঁচা আমে আছে প্রচুর বেটা ক্যারোটিন। হারভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা আমের বেটা ক্যারোটিন প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। 
 
২০১৪ সালে টেক্সাস এ এন্ড এম পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত আম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। গবেষকরা আমের পলিফেনল দিয়ে যখন ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোষে পরীক্ষা চালান তখন তারা দেখতে পান যে এটা ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ৯০% কমিয়েছে। 
 
রেসিপিঃ কাঁচা আমের সরবত
উপকরণ
  • কাঁচা আম ৩টি 
  • পরিমাণ মত পুদিনা পাতা
  • পরিমাণ মত চিনি
  • স্বাদ মত বিট লবন 
  • কাঁচা মরিচ ২টি (কুচি কুচি করে কাটা)
  • পানি ১ লিটার
প্রণালী
আমের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে বাটিতে রাখুন। এবার বাটিতে রাখা আমের সাথে পুদিনা পাতা, কাচা মরিচ, চিনি, বিট লবন, মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ভালো করে মেখে ১০ মিনিট রাখুন। 
এবার ব্লেন্ডারে অল্প পানি দিয়ে পুরো মিশ্রণটি ব্লেন্ড করুন। এখন গ্লাসে পানি নিয়ে মিশ্রণটি পরিমান মত দিয়ে ঘুটে নিন। বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন অথবা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করেও খেতে পারেন।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK