সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিকে বলা হয় হাইপোক্যালসেমিয়া। দীর্ঘদিন ধরে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার কম খাওয়া বা ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা থাকলে এই রোগ হতে পারে। তাই শিশুকাল থেকেই সবার উচিৎ পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখবে কাজ করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম আমাদের হৃদপিন্ড এবং পেশীর কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ৯৯% থাকে আমাদের হাড় ও দাঁতে এবং বাকি ১% আছে রক্ত, পেশী ও কোষের তরল উপাদানে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে সে অবস্থাকে বলা হয় হাইপোক্যালসেমিয়া। এর ফলে যেসব হাড়ের রোগ দেখা দিতে পারেঃ
-
অস্টিওপরোসিস
-
অস্টিওপেনিয়া
শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক কালে শরীরের উচ্চতা কম হতে পারে।
হাইপোক্যালসেমিয়ার উপসর্গ
প্রথম দিকে হাইপোক্যালসেমিয়ার উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে এই অবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে উপসর্গ ধরা পড়তে পারে, যেমনঃ
-
বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রম
-
মাংসপেশীতে খিঁচুনি
-
হাত, পা ও মুখমন্ডলে অবশ এবং ঝিম ঝিম ভাব হওয়া
-
বিষণ্ণতা
-
দৃষ্টিভ্রম, কল্পিত কিছু দেখা
-
মাংসপেশীতে ব্যথা
-
দুর্বল ও ভাঙ্গা নখ
-
হাড় খুব সহজেই ফেটে যাওয়া
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি সহজেই সারানো সম্ভব। এর জন্য খেতে হবে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার। এছাড়া ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেয়া যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে নিজে থেকেই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেয়া শুরু করবেন না। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিডনির পাথর হতে পারে।
হাইপোক্যালসেমিয়া (Hypocalcemia) রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া। যেসব খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম আছেঃ
-
পনির/চিজ
-
দই
-
দুধ
-
ক্যানের সার্রডিন (তেলে ডুবানো)
-
স্যামন (গোলাপি স্যামন, কাটা সহ)
-
সবুজ পাতার শাক (পালং শাক, পুঁই শাক, পাট শাক, ইত্যাদি)
-
ব্রকলি (রান্না করা)
-
ডুমুর (শুকনো)
-
সয়বিন
-
পাউরুটি
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি রক্তের ক্যালসিয়াম শুষে নেয়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুতগতি দেয়। ক্যালসিয়াম গ্রহণ বৃদ্ধি করতে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেতে পারেন। যেমনঃ
-
তৈলাক্ত মাছ (ইলিশ, পাবদা, পাঙ্গাশ, টুনা, স্যামন)
-
ডিম
এছাড়া ভর দুপুরে সূর্যের নীচে আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলে ভিটামিন ডি পাবেন।
জীবনধারার পরিবর্তন
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণের সাথে হাড় মজবুত ও সুস্থ রাখতে জীবনধারারও পরিবর্তন আনা উচিৎ, যেমনঃ
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
-
নিয়মিত ব্যায়াম করা
-
ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক