রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:১৭
ব্রেকিং নিউজ

টিকা নয়, করোনা কেড়ে নিতে পারে পুরুষত্ব: গবেষণা

টিকা নয়,  করোনা কেড়ে নিতে পারে পুরুষত্ব: গবেষণা

উত্তরণবার্তা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : করোনার টিকায় শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে অর্থাৎ পুরুষত্ব হারানোর ঝুঁকি রয়েছে- সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন গুজব রটেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার টিকা পুরুষের ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (লিঙ্গ উথ্থান সমস্যা) এবং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে না। বরং সত্যটা হলো, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস উভয় রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। করোনাভাইরাস বা টিকাগুলো পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে এখন অবধি খুব কম গবেষণা করা হয়েছে। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নতুন গবেষণায় এ ব্যাপারে বেশ ভালোভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। গবেষক দলটি কম বয়সী এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষ যারা সন্তান লাভ করতে চান তারাসহ সকল বয়সের পুরুষদের ওপর করোনার সম্ভাব্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব আবিষ্কার করেছেন।
 
মৃত্যুবরণ করেছেন এমন ৬ জন করোনা রোগীর অণ্ডকোষের টিস্যুর ময়নাদন্ততের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হয় এই গবেষণায়। এর মধ্যে একজন পুরুষের অণ্ডকোষের টিস্যুতে ভাইরাসটির উপস্থিতি দেখতে পান গবেষকরা, যা তার শুক্রাণুর সংখ্যা তিন গুণ কমিয়ে দিয়েছিল। অন্য আরেকজন রোগী যিনি করোনা থেকে সুস্থ হয়েছিলেন, সম্পূর্ণ সুস্থতার প্রায় তিন পর অণ্ডকোষের বায়োপসি করেছিলেন। বায়োপসিতে দেখা যায়, করোনাভাইরাস তখনো তার অণ্ডকোষে ছিল।
 
গবেষক দলটি আরো দেখতে পেয়েছেন, করোনাভাইরাস পুরুষের লিঙ্গের ওপরও প্রভাব ফেলে। দুজন রোগী যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশনের কারণে পেনাইল ইমপ্ল্যান্ট নিয়েছিলেন তাদের পেনাইল টিস্যু বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনা থেকে সুস্থতার ৭ থেকে ৯ মাস পরও লিঙ্গের টিস্যুতে ভাইরাসটির উপস্থিতি ছিল। উভয়েই মারাত্মক ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগেছিলেন, কারণ করোনা সংক্রমণ পুরুষাঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল।
 
বাকি দুজনের মধ্যে একজনের কেবল করোনার হালকা উপসর্গ ছিল। অন্যজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তাদের রিপোর্ট বলছে, করোনার হালকা উপসর্গের রোগীরাও সুস্থতার পর গুরুতর পুরুষত্বহীনতার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। নতুন এই গবেষণার ফল খুব অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কেননা বিজ্ঞানীরা জানেন, অন্যান্য ভাইরাসও অণ্ডকোষ আক্রমণ করে এবং শুক্রাণু উৎপাদন ও উর্বরতায় প্রভাব ফেলে। যেমন ২০১৬ সালে সার্স-কোভ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করা ৬ জন রোগীর অণ্ডকোষের টিস্যু বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পেয়েছিলেন, তাদের সকলের কোষ ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শুক্রাণু ছিল না বললেই চলে। এছাড়া মাম্পস এবং জিকা ভাইরাসও অণ্ডকোষে প্রবেশ করতে পারে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। দেখা গেছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ২০ শতাংশ পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
 
করোনার টিকার উপকারিতা সম্পর্কে নতুন তথ্য
মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা করোনার টিকা নিয়ে সুসংবাদ দিয়েছেন। ৪৫ জন পুরুষের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন, ফাইজার এবং মর্ডানার এমআরএনএ টিকা পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। তাদের মতে, করোনার টিকা নেওয়ার উৎসাহ প্রদানে এটি আরেকটি কারণ হতে পারে। 
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণাটি খুব ছোট পরিসরে করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অব্যাহত রাখা উচিত। গবেষকদের মতে, যেসব পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে অণ্ডকোষের ব্যাথায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাস অণ্ডকোষে আক্রমণ করেছে তা বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত। এর ফলস্বরূপ ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। এসব পুরুষদের ইউরোজিস্ট দেখানো উচিত।
উত্তরণবার্তা/সাব্বির
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK