সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০১:২৪
ব্রেকিং নিউজ

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মহররমের মিছিল

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মহররমের মিছিল

  • আনিস আহামেদ
১০ মহররম পবিত্র আশুরা। এ দিনটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পবিত্র এ দিনে সংগঠিত হয়েছে বলে হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগেও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা এ দিনকে পবিত্র দিন হিসেবে পালন করত।
মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র আশুরার দিন বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীর সন্নিকটে কারবালায় স্বঘোষিত খলিফা ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শাহাদাৎবরণ করেন। সেই দিন এবং তৎপূর্ব কয়েক দিনে অসম যুদ্ধে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক হোসাইন (রা.)-এর অনুগত অসংখ্য অনুসারী ও পরিবার সদস্যরা অনুরূপ শাহাদাৎবরণ করেন। এ মর্মান্তিক ঘটনা মুসলমানদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। ফলে, সিয়াতে আলী বা শিয়া নামে মুসলমানদের মধ্যে ভিন্ন মতের জন্ম নেয়। এছাড়া সুন্নী মুসলমানরাও এ দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করে। কারবালার বিয়োগান্তুক ঘটনার পর পূর্বাপর ঘটনাগুলো ছাপিয়ে সব মুসলমানদের কাছে এ দিনটি শোকের দিনে পরিণত হয়।
মুঘল আমলে ঢাকায় স্থাপিত হয়েছে অনেক শোকগৃহ যা ইমামবাড়া বা মোকবরা নামে পরিচিত। মুঘল আমলে সুবেদার শাহ্ সুজার আমলে নিজামতের দারোগা মীর মুরাদ ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় স্থাপন করেন হোসেনী দালান (স্বপ্নদ্রষ্ট হয়ে)। যা বর্তমানে হোসেনী দালান মহল্লায় অবস্থিত এবং এর আগেই ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে সূত্রাপুর এলাকার বিবিকা রওজা হযরত মা ফাতেমা (রা.) স্মৃতিগৃহ স্থাপিত হয়েছিল।
মুঘল আমল থেকে ১০ মহররম ধর্মীয় শোক মিছিল (জুলুস) বের হওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে ঢাকা শহরে। যাকে বলা হয় মঞ্জিলের (শেষ) মিছিল। এর আগে দুটি মিছিল বের হয়, তাহলো মহররমের ৮ তারিখে সামরাত কি মিছিল (সন্ধ্যার মিছিল)। ৯ তারিখে ভোররাত কি মিছিল (ভোররাতের মিছিল)। মহররমের ১০ তারিখ সকালে প্রধান মিছিলটি বের হয় হোসেনী দালান ইমামবাড়া থেকে।
 
হোসেনী দালান ইমামবাড়া থেকে যে মিছিলগুলো বের হয় তার নিয়ন্ত্রণভার ঢাকাইয়া শিয়া ও সুন্নীদের কাছে আর ফরাসগঞ্জের মিছিল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে সুন্নী মুসলমানরা। বর্তমানে ইরান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আসা একজন শিয়া ইমাম হোসেনী দালানে সারা বছর মজলিশ ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকাইয়া শিয়াদের পরিচালিত করেন। ঢাকাইয়া শিয়াদের অধিকাংশ বর্তমানে হোসেনী দালান মহল্লা ও সাতরওজা মহল্লায় অবস্থান করে। ঢাকার আদি পশ্চিমা (হিন্দুস্তানি ভাষী) হিন্দুরাও পবিত্র মহররমের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শোক পালন করতে গিয়ে ঢাকার শিয়া ও সুন্নীরা যেসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করে তার কিছু বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
আখড়া : পুরনো ঢাকার নবাবগঞ্জ, গোড়ে শহীদ, মির্জ্জা মান্নার দেউড়ি, রহমতগঞ্জ, উর্দু রোড, জিন্দাবাহার, নিমতলী, বংশাল এলাকার লোকজন (যাদের সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে) মহররম মাস শুরু হলে আখড়া (ক্যাম্প) স্থাপন করত। তারপর লাঠি, ঢোল, তরবারি, বর্শা, অগ্নিগোলকের চরকি বানিয়ে নিজ নিজ মহল্লার অলিগলি প্রদক্ষিণ করে, তাজিয়া তৈরি ও ১০ মহররমের সিন্নির পয়সা সংগ্রহ করত। এ সময় তাদের রূপকযুদ্ধের মহড়া চলতে থাকে। ৮, ৯ ও ১০ তারিখের ইমামবাড়ার মিছিলের সম্মুখভাগে ঢোলের শব্দে তারা রূপকযুদ্ধের মহড়া দেয়। এদের লাঠির লড়াই, তরবারি ও বর্শার লড়াই অগ্নিগোলকের চাকতি ঘোরানোর কসরৎ দেখে মুগ্ধ হতে হয়। বিভিন্ন লড়াইয়ে অনেকে বিশেষভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠে। তারা মিছিলে অংশগ্রহণের সময় সবুজ গেঞ্জি পরিধান করে। তারা ১ থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত মাছ ও পান খাবে না। মাথায় তেল দেবে না এবং দাড়ি ও নখ কামাবে না। সিন্নির পয়সা দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করবে এবং সবুজ ও লাল বর্ণের কাগজ দিয়ে তাজিয়া তৈরি করে মিছিলে বহন করবে। বংশানুক্রমে ও মানতের মাধ্যমে তারা আখড়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। 
হোসেন কা বাদ্দি : নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তানের আশায় হোসেনী দালানে গিয়ে মানত করে তাদের সন্তান হলে তাকে বাদ্দি বানাবে। শিশু বয়সী ছেলে-মেয়েদের কঠিন অসুখ হলেও বাবা-মায়েরা রোগ মুক্তির জন্য বাদ্দি বানাবার নিয়ত করে থাকে। এসব ‘হোসেনের ভিক্ষুকরা’ মহররমের প্রথম ১০ দিন গলায় সবুজ রঙের ফিতা ও সবুজ কাপড় ধারণ করে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবুজ কাপড়ে ঢাকা পাত্রে ভিক্ষা করে বেড়ায়। সংগৃহীত পয়সা ও চাল দিয়ে ১০ মহররমের খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তারা আখড়াকারীদের নিয়ম পালন করে। 
বেহেশতা বা আলমে বারদার : তারা মহররমের মিছিলগুলোয় সবুজ ও লাল পতাকা বহন করে এবং ধর্মযুদ্ধের সৈনিকদের বেশ ধারণ করে। মানত ও বংশানুক্রমে বেহেশতার সংখ্যা নির্ধারিত হয়। বেহেশতারা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে থাকে, প্রত্যেক দলে একজন সর্দার (নেতা) নির্ধারিত হয়। এই সর্দাররা আমৃত্যু এ পদে বহাল থাকেন। মহররমের ৬ তারিখে তারা হোসেনী দালান ইমামবাড়ায় খিমা (তাঁবু) স্থাপন করে। প্রত্যেক গোত্রের সদস্যরা তাঁবুতে সমবেত হয় এবং সিন্নি হিসেবে লাড্ডু নিয়ে যায়। একে বলে কায়েসকা লাড্ডু। এই লাড্ডু যে-কোনো মনোবাঞ্ছা পূরণের লক্ষ্যে খেতে হয় এবং নিয়ত পূর্ণ হলে পরের কায়েসের দিন খিমায় লাড্ডু দিতে হয়। এই বেহেশতারা মিছিলে অংশগ্রহণের সময় বাদক দল নিয়ে যায়, তারা যুদ্ধ সঙ্গীত বাজায়। তারা মিছিলে নারা (স্লোগান) দেয়। নারাগুলো এরূপ- “এক নারা হায়দারিয়া-বোলো ইমাম কি লাস্কার-ইয়া হোসেন। দো-নারা আব্বাসীয়া-বোলো ইমাম কি লাস্কার ইয়া হোসেন। এক-নারা দো-নারা, নারা-নারা বেহেশতা-ইয়া হোসেন।” 
 
সন্তান ভূমিষ্ঠের আগে সন্তানের সুস্থতা ও মঙ্গলের আশায় পিতামাতা হাত বান্ধার নিয়ত করে হোসেনী দালানে গিয়ে। সন্তানের বয়স এক বা দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর মহররমের ৬ তারিখ সকালে ইমামবাড়ায় গিয়ে ইমামের মাধ্যমে সন্তানের হাতে জরির [ইমাম হোসাইন (রা.) ও ইমাম হাসান (রা.)-এর জোড়া কবরের নকশা] সাথে বাঁধা সুতলি বেঁধে দেয়। তারপর বেহেশতা ও বাদক দল সমবিহার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শরবত বিতরণ করে এবং সিন্নির টাকা সংগ্রহ করে। 
কাসেদ : তারা ইমাম হোসেনের বার্তা বাহকের নামে পরিচিত, সারা গায়ে মোটা সাদা-কালো ও সাদা-সবুজ সুতলির মধ্যে অসংখ্য ঘণ্টা লাগিয়ে শরীরে প্যাঁচ দিয়ে রাখে। তাদের বেহেশতাদের অনুরূপ নিয়ম পালন করতে হয়। তবে তাদের দ্রæতগতিতে দলবদ্ধভাবে মিছিলে হাঁটতে হয়।
মোগবরা : নিজ নিজ বাড়িতে মোগবরা স্থাপন করে, মহররম মাসের প্রথম ১০ দিন এসব বাড়িতে সন্ধ্যার পর মোগবরায় মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালানো হয়। ইমাম হোসেনের ভক্ত বধূ, মাতা, কন্যারা এই মোগবরার চতুর্দিক ঘুরে জারি পেটায় (সুর করে শোকগাথা গায়) এবং ১০ মহররম খিচুড়ি বিতরণ করে।
মার্সিয়া : পুরনো ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় মার্সিয়া দল গঠন করা হতো। তারা নিজ ভাষায় (হিন্দুস্তানি) মার্সিয়া রচনা করত এবং পালাক্রমে হোসেনী দালানে গিয়ে দলবদ্ধভাবে মার্সিয়া গাইত। বর্তমানে এই ধারা লুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম অনুযায়ী মঞ্জিলের মিছিলে কেউ জরি (ইমামদের কবর) কেউ গাঞ্জে শাহীদান (শহীদদের গণকবর), কেউ বিবিকা ডোলা (ইমামের পরিবারে মহিলাদের পালকি), কেউ ধর্মীয় পতাকা (নিশান বরদার), কেউ পাঞ্জা (ইমামের হাতের নকশাধারী পতাকা) বহন করে। তাছাড়া অনেকে নিয়ম অনুযায়ী দুলদুল ঘোড়া (যে ঘোড়ায় ইমাম যুদ্ধ করেছিলেন) ও খুনি ঘোড়া (যে ঘোড়ায় ইমামের পবিত্র মস্তক বহন করা হয়েছিল) তার দড়ি ধরে থাকে। কেউ মিছিল দেখার মানত করে। আশুরার দিন বিকেলে ফরাসগঞ্জ থেকে বোলদা গৌড়াকি মিছিল বের হয়। এই মিছিলে তাজিয়া ও একটি বিবিকা ডোলা (মা ফাতেমার পালকি) থাকে। মিছিলকারীরা শুধু গেঞ্জি লুঙ্গি অথবা প্যান্ট পরে তাজিয়া নিয়ে দৌড়ায়। অনেকে সকাল-বিকেলের মিছিলে তাজিয়াগুলোয় মানত অনুযায়ী মুরগি ও কবুতর নিক্ষেপ করে এবং শেরাসিন্নি (শলা দিয়ে তৈরি) নিক্ষেপ করে।
আশুরা উপলক্ষে হোসেনী দালান এলাকায় ও আজিমপুরে বিরাট মেলা বসত। আজিমপুরে মহররমের মেলা ছিল ঢাকা অঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলা। ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত ভিস্তিরা মিছিলকারীদের মধ্যে পানি ও শরবত বিতরণ করত। পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শরবত বহনকারী গাড়ি মূল মিছিলকে অনুসরণ করে মিছিলকারী জনসাধারণের মধ্যে শরবত বিতরণ করত এবং এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। 
আগে মহররমের সব মিছিল আজিমপুরে (একটি মাঠের নাম ছিল কারবালার) গিয়ে শেষ হতো এবং মাঠ সংলগ্ন পুকুরে অস্থায়ীভাবে নির্মিত কাঠামোগুলো বিসর্জন দেয়া হতো। ঢাকার মুসলমানরা মহররম মাসে বিয়ে-শাদি ও আনন্দ উৎসবাদী বর্জন করে চলত। প্রায় সব বাড়িতে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, সিন্নি, পোলাও-খিচুড়ি, মিষ্টি বিতরণ হতো। পেস্তা দিয়ে সুস্বাদু শরবত তৈরি করা হতো। কোরবানীর মাংস বিশেষভাবে রান্না (জাহাজী কালিয়া) করে সংরক্ষণ করা হতো। আশুরার দিন এই মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না হতো। পুরান ঢাকার বনেদি পরিবারগুলোয় এ ধারা এখনো বিদ্যমান আছে।
আশুরার দিন কোনো বাড়িতে নাস্তা তৈরি করা হতো না। আজিমপুরের মেলা থেকে খৈ, উখরা, বাতাসা ও পাতা খিরসা কিনে এনে সবাই নাস্তা করত। মহররমের মেলা থেকে কেনাকাটা করে শ্বশুরবাড়িতে ডালা পাঠানো অনেকটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল নতুন জামাইদের জন্য।
নাওয়া : মহররমের মিছিলে মাতম চলাকালে শিয়া সম্প্রদায় যে শোকগাথা পাঠ করে তাকে নাওয়া বলা হয়। 
প্রচলিত নাওয়ার একটি বিবরণ:
 
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
কারবালা কার্ব কা মাঞ্জিল এ সাদা আতি হ্যায়
কোয়ি মা রোকে হামে সায়কা গাম শুনাতি হ্যায়
কিসি বেওয়াও ইয়াতিম কি ফুর্গা আতি হ্যায়,
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
দিল সাকিসতা হ্যায় মেরা
আউর ম্যায় হু খাসতাতান
তেগ্ খাঞ্জার সে মেরে
বেটে কা জাখমি হ্যায় বাদান
রেত জাখমোমে লাগে
তো ফির হার রায়ে বাদান
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
বাপকে সিনেপে বাচ্চি জো শোয়া কারতিথি 
কায়েদ খানামে বহুত হ্যায় রোইয়া কারতিথি
বাপকে শারকো লিয়ে 
হিচকিয়া লেকে কাহা
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
গোদ উজাড়া হ্যায় মেরা
মাঙ্গ ভি উজাড়া লোগো
শের চাদার ভি ন্যাহি
হাত বান্ধা হায় লোগো
বানু কি হায় এ সাদা
তুঝপে রোতি হ্যায় কাজা
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
সিনে পে খায় সিনা হ্যায়
জোয়া শোয়া হ্যায়
জিসপে কারবালা কি জামি
আউর ফালাক রোইয়া হ্যায়
উসকি যাখমোনে কাহা
ছালনি হ্যায় সিনা তেরা
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
বে-খাতা, বে-হৃদা মুঝকো
কিয়া হ্যায় কিউ তুমনে
দারবাদার নানা ফিরায়া হ্যায়
মুঝে উম্মাত নে
রোকে জায়নাব নে কাহা
বে-কাফান ভাই মেরা
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
লিখো আজাম পাড়ো পারভেজ
সাদা হায় হোসেন
আউর পুরসাদো উনে
শায় পে জো কারতে হ্যায় বায়েন
যাহা হো ফারসে আজা
উহা আতি হ্যায় সাদা
হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান, হায় হোসেন জান।
 
[বেদনা বিধূর কারবালার স্মৃতি বারবার ফিরে আসলেই, 
কোনো মা (বিবি ফাতেমা) আমাকে ইমাম হোসেনের 
শোকগাথার বিলাপ শোনায়
একাধিক বিধবা ও একাধিক এতিমের ক্রন্দন ধ্বনি 
কানে শোনা যায়
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
আমার হৃদয় বেদনা বিধূর এবং আমি শোকে আপ্লুত
তেগ ও খঞ্জরের আঘাতে আমার পুত্রের শরীর ক্ষত-বিক্ষত
তপ্ত বালি কণিকা ক্ষতস্থানে লাগলে সে শরীর ছটফটিয়ে ওঠে
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
যে পিতার (ইমাম হোসেন) বুকে শিশু ঘুমাত
সে শিশু (ইয়াজিদের) বন্দিশালায় 
বাবার জন্য অনেক কান্নাকাটি করত
তখন পিতার মস্তক এনে দেখালে
সে শিশুর কান্নায় হেচকি উঠলো
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
হে লোক সব শোনো, আমার কোল উজাড় হয়েছে
আমার মাথার সিঁদুর মুছে গেছে
আমার মাথার চাদর খুলে ফেলেছে
এবং আমার হাত বেঁধে রেখেছে
 
বানু (শায়ের বানু ইমাম হোসেনের স্ত্রী)-এর একি করুণ অবস্থা
যা দেখে মৃত্যুরও কাঁদতে ইচ্ছে করে
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
বুকে নেজার আঘাত খেয়ে হায়
যুবক (ইমাম হোসেন) শুয়ে আছে
এতে কারবালার জমিন ও আকাশ কাঁদছে
তার (ইমাম হোসেন) শরীরের আঘাতগুলো বলছে
আপনার বুক ঝাঝরা হয়ে গেছে
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
বিনা দোষে কেন আমাকে বেইজ্জত করলে তোমরা
শহরের দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়েছে
হে নানা (হযরত মোহাম্মদ দ.) তোমার উম্মতেরা
কেঁদে কেঁদে জয়নাব (ইমাম হোসেনের বোন) বলে
আমার ভাইকে কাফনও পরানো হলো না
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।
 
আজম লিখো এ কথা আর পারভেজ পাঠ করে শোনাও
আর তাদের প্রতি সমবেদনা জানাও 
যারা ইমাম হোসেনের জন্য মাতম করে
যেখানে শোকের চাদর বিছিয়ে শোকার্ত মানুষের মুখে
সব সময় আওয়াজ আসে
প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন! প্রাণপ্রিয় ইয়া হোসেন।]
 
লেখক : ঢাকা গবেষক।

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK