শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:১৬

বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন পৃথিবীর জন্য এখনো জরুরি: অমর্ত্য সেন

বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন পৃথিবীর জন্য এখনো জরুরি: অমর্ত্য সেন

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা ও দর্শন সমাজের জন্য, বিভিন্ন রাষ্ট্রের জন্য এখনো জরুরি বলে মনে করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে মতাদর্শ, তা এখনও সারা পৃথিবীর জন্য প্রাসঙ্গিক।
 
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। অমর্ত্য সেন বক্তব্য শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শব্দের অর্থ দিয়ে। তিনি বলেন, আক্ষরিক অর্থে বঙ্গবন্ধু শব্দটির মানে হলো বাংলার বন্ধু। কিন্তু তিনি ছিলেন এর চেয়েও বেশি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলা ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মানুষ ভালোবাসে মন থেকে।
 
অমর্ত্য সেন বলেন, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী স্বতন্ত্র যে ধরন ছিল, বর্তমান সময়ে তার বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। যা কেবল বাংলার জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের প্রসঙ্গ বক্তৃতায় তুলে ধরেন তিনি।
 
অমর্ত্য সেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেকুলারিজম ধারণার মানে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে না, এমন নয়। সেটা ছিল ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হবে না। সংবিধান প্রণয়নের সময় বলা হয়েছিল, এটা এমন নয় আমরা ধর্মপালন বন্ধ করব। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই তার ধর্ম পালন করবে। কেবল ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ এখন একটি আদর্শিক সংকটে ভুগছে। উপমহাদেশের দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার চিন্তা থেকে শিখতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে না, এটা তিনি বিশ্বাস করতেন না। বঙ্গবন্ধু চাইতেন, ধর্মকে যেন রাজনীতির হাতিয়ার করা না হয়।
 
বঙ্গবন্ধুর ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণার সঙ্গে সম্রাট আকবরের মতাদর্শের মিল থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও আকবরের মতাদর্শ এখনও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটা কেবল ভারতে ব্যবহৃত হতে পারে তা নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রাসঙ্গিক। ইউরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক আলোচনায় তাদের ধারণার ব্যবহার হতে পারে। এটা হয়ত কেবল ধর্মীয় দিক থেকে নয়, বর্ণবাদ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অধিকারের আলোচনায়ও আসতে পারে।
 
বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার মতাদর্শ থেকে শেখা ও অনুসরণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। অমর্ত্য সেন মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু হিসেবে বর্ণনা করা উচিত। সেটা কেন, তা–ও নানা যুক্তিতে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সবার অংশগ্রহণে সমান সুযোগের মাধ্যমে রাষ্ট্রগঠনের যে দর্শন বঙ্গবন্ধুর ছিল, তা অনুসরণ করলে শ্রীলঙ্কা তামিলদের সঙ্গে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ এড়াতে পারত।১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে অনিশ্চিত ভোটারের সামনে সমতার ধারণা তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, সমতাবাদী এই নীতিতে আওয়ামী লীগের সেক্যুলার অবস্থান ভোটে জিতে আসতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কারণ এর পেছনে ছিল জনমত গঠনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ক্ষমতা।
 
 
আলোচনায় অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের ধারণা এসেছে তার উদঘাটিত অভিজ্ঞতার আলোকে। কারণ তিনি তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে বঙ্গবন্ধুর গ্রামে-গঞ্জে পরিভ্রমণ কিংবা নিম্ন শ্রেণির কামরায় রেলভ্রমণের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, “বঙ্গবন্ধু তার নীতি পরামর্শ হিসাবে বার বার আমাদের কাছে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন, কোনো পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক নীতি কিংবা সমাজ গঠন করা যাবে না, যা সুযোগ-সুবিধা দেবে বাঙালি মধ্যবিত্তকে, যারা অচিরেই শাসক শ্রেণি হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
 
আমাদেরকে এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই হবে সম্পদ তৈরি এবং উপকারভোগী হওয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার ও শাসক। এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল এজেন্ডা। এ ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের কারণে অভিজাত শ্রেণি অনেক ক্ষেত্রে তাকে মেনে নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক অধ্যাপক মিনোশ শফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সাউথ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আল নূর ভিমানি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বক্তব্য দেন।
উত্তরণবার্তা/সাব্বির

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ