সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০২:২৫
ব্রেকিং নিউজ

লৌহমানবী শেখ হাসিনা

লৌহমানবী শেখ হাসিনা

  • মোহাম্মদ হানিফ হোসেন
 
সীমার মাঝে অসীম তিনি। উচ্চতার উচ্চাসনে যার অবস্থান। তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আজ বিশ্ব রাজনীতির অগ্রভাগের একজন তিনি। মানবসেবার অনন্যতাই তাঁকে বিশ্বাসনে অবস্থান করে দিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা দ্যুতিময়। বিশ্বব্যাপী চলছে তাঁর নেতৃত্বের জয়ধ্বনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের রোল মডেল ও বড় অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তার স্ত্রী এবং দুই কন্যাও শেখ হাসিনার ভক্ত বলে জানান তিনি।  অন্যদিকে বিশ্বের যে কোন দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়ার লৌহমানবী হিসাবে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। স¤প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার হোটেল স্যুটে তার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ওই সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। এতে শেখ হাসিনাকে মার্গারেট থ্যাচার ও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি নারী ও পুরুষ সরকারপ্রধানদের উল্লেখযোগ্যদের মধ্যেও তিনি একজন। দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের এই সরকারপ্রধান ১৭ কোটি মানুষের দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর ক্ষমতার মেয়াদের বেশির ভাগ সময়ে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ।
৭৫ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে মোট চারবার জনগণের সরাসরি ভোটে ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে দলটি। যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার চেয়েও বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলেও তিনি আশাবাদী। শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘আমি দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসাবে গড়তে চাই। শেখ হাসিনা বলেছেন, এই মুহূর্তে সত্যিকার অর্থে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার মতো কোনো দল আছে বলে আমরা মনে করি না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তহাতে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখায় লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। অবকাঠামোগত বিনিয়োগসহ এমন কিছু নীতি তিনি প্রণয়ন করেছেনÑ যার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির গতি বজায় ছিল। দুর্বল কোনো সরকারের পক্ষে এটা করা হয়তো সম্ভব হতো না। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক তাদের নিজস্ব বিষয়, সেখানে আমি কেন নাক গলাতে যাব।
একথা সত্য যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে  দেশ। নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নতুন এক উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ছয়গুণের বেশি। বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক সংকটেও সচল রয়েছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেখানে বহু দেশের অর্থনীতির অবস্থা তলানিতে, সেখানে জীবন-জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে সচল রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা পাওয়ার প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্রমবর্ধমান সংকট সত্তে¡ও ২০২৩ সালে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করে তোলার পথ খুঁজবে বাংলাদেশ। চলতি বছর বাংলাদেশকে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ এই ধরনের প্রতিশ্রুতিও। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরণের পথে হাঁটবে। শুধু তাই নয়, টেকসই উন্নয়নজনিত অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের ব্যাপারে একটি কৌশল নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ। স¤প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন আজ বিশ্বালোকিত। দীর্ঘ চার দশক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এবং ১৯ বছর সরকারের  নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও চালু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ঘর প্রদান, দুস্থ ও অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনাসহ অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা,  দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের এরকম অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে তিনি পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে  পেয়েছেন ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার। অর্জন করেছেন ‘মেডেল অব ডিস্টিনকশন’ ও ‘হেড অব স্টেট’ পদক। বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন ‘মাদার তেরসা পুরস্কার’। বিশ্বের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি তাঁকে এনে দিয়েছে ‘দ্য সিরিস মেডেল’। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে। অর্জন করেছেন জাতিসংঘের ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’। নারী রাজনীতিবিদদের  বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ‚ষিত করেছে ‘রিজিওনাল লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডে। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে অবদানের স্বীকৃতি ‘পিস ট্রি’ অ্যাওয়ার্ড, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ পুরস্কার, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএন উইমেন প্রদত্ত ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ অ্যাওয়ার্ড শেখ হাসিনার অর্জনের তালিকায় একটি জ্বলজ্বলে পালক।
সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভ‚মিকা এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘স্টেট ম্যান’। বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে বলে ‘স্টার অব ইস্ট’। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল  ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে ‘মুকুটমণি’ অভিধায় ভূষিত করেছে। এ সবই দূরদর্শী নেতা ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি। এখানেই একজন শেখ হাসিনা বিশ্বনেতৃত্ব পর্যায়ে অনন্য ও অসাধারণ। তিনি মানবিক রাজনীতির ধারক। সেই ৮১ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার সময় বলেছিলেন তার জীবন গণমানুষের জন্য উৎসর্গীত। সেই থেকে স্বৈরশাসক, জঙ্গীবাদ মোকাবেলাসহ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের অপ্রতিরোধ্য বাংলার ত্রাণ কর্তা তিনি। এই জন্য জীবনের ঝুঁকি তথা জীবনহানির চেষ্টাও হয়েছে বহুবার।  আজ তার পরিচয় বিশ্বের মানবিক নেত্রী, লৌহমানবী। সেকারণেই বিশ্ব নেতৃত্বের বিশ্বাসনে আজ শেখ হাসিনা।
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী  
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK