উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : দেশে বজ্রপাতের মৃত্যু বাড়ায় ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করে সরকার। বজ্রপাতে মৃত্যুর ৯৩ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে, এরমধ্যে ৮৬ শতাংশের মৃত্যু হয় উন্মুক্ত স্থানে। এ অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড ও যন্ত্র বসিয়ে হতাহতের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। বজ্রপাতে বছরে প্রাণহানির সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চ থেকে মে-তে বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি থাকলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাত হতে পারে। বাংলাদেশে ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এক দশকে বজ্রপাতে প্রায় ২ হাজার ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলার ১৩৫ উপজেলায় ৩৩৫টি বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড এবং যন্ত্র বসিয়ে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় মার্চ থেকেই ঝড়বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বজ্রপাত রোধে জেলার ৬ উপজেলা সদর, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর এবং শাল্লায় ২৪টি বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। ”অনেক মানুষ ও গরু ছাগল প্রতি বছরই মারা যায় বজ্রপাতে।” জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা। সিরাজগঞ্জের ৭টি উপজেলা- বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কাজিপুর ও তাড়াশে বসানো হয়েছে ১৬টি বজ্রনিরোধক দণ্ড। ”এই দণ্ড বসালে এলাকাবাসী খুব উপকার পাবে। এটার কারণে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচবে।” বলেন স্থানীয় আরেকজন।
তামা, অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতু দিয়ে তৈরি এ দণ্ড উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎকে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। এর ৩২৮ ফুট ব্যাসের মধ্যে নিরাপদ থাকা সম্ভব। ওপরে বসানো থাকে লাইটিং অ্যারেস্টার, যা নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে হওয়া বজ্রপাত টেনে মাটিতে নামিয়ে আনে। কতটি বজ্রপাত হয়েছে তা গণনাও করে এই যন্ত্র। বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে আরো বেশি এলাকায় বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর। বেলকুচির সাবেক পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, “প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বজ্র নিরোধক দণ্ড বসাতে হবে।” বজ্রনিরোধক দণ্ডের সংখ্যা ও পরিধি বাড়ানো চেষ্টা রয়েছে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, “সমস্ত এলাকায় যাতে এই ব্যবস্থা নেয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। ”
উত্তরণবার্তা/এআর