বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:০০
ব্রেকিং নিউজ

নীরব ঘাতক ব্লাড প্রেশার সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য যা সবার জানা দরকার

নীরব ঘাতক ব্লাড প্রেশার সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য যা সবার জানা দরকার

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ 
 
ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ হচ্ছে রক্তের বেগ যার মাধ্যমে রক্ত ধমনীর মধ্য দিয়ে আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটা একটি নরমাল শারীরিক ক্রিয়াকলাপ। রক্তের এই চাপ না থাকলে আমাদের শরীর অক্সিজেনের অভাবে মরে যেত। এছাড়া ব্লাড প্রেশারের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য পদার্থ লিভার এবং কিডনিতে পৌঁছে।
 
আমাদের হৃদপিন্ড এই ব্লাড প্রেশার সৃষ্টি করে যখন প্রতিটি স্পন্দনের সাথে এটা সংকুচিত হয়ে রক্তকে ধাক্কা দিয়ে বের করে। ব্লাড প্রেশার কোন সমস্যা নয় তবে এটা তখনই সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় যখন এটা বেশী হয়ে যায় কিংবা অনেক কমে যায়, যাকে আমরা বলি হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ এবং লো ব্লাড প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ।
 
উচ্চ রক্তচাপ কি?
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হয় যখন আপনার রক্তের চাপ সবসময় বেশী থাকে। এটাকে ইংরেজিতে হাইপারটেনশ (Hypertension) ও বলা হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ খুবই মারাত্মক অসুখ। এর ফলে আমাদের হৃদপিন্ডকে রক্ত পাম্প করতে অনেক বেগ পেতে হয়। ফলে ধমনী শক্ত হয়ে পড়ে, যাকে বলা হয় এথেরোসক্লেরোসিস (Atherosclerosis). উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়ায়। 
 
উচ্চ রক্তচাপের কোন উপসর্গ নেই। অনেকের মধ্যে এই রোগ বহু বছর ধরেই আছে, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এ জন্যেই উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার। 
 
উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়?
উচ্চ রক্তচাপের সঠিক কারণ কেউ বলতে পারে না, তবে কিছু কিছু বিষয় এটাকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমনঃ
  • ধূমপান
  • অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
  • শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
  • খাবার সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
  • অত্যধিক মদ্যপান
  • মানসিক চাপ
  • বয়োবৃদ্ধি
  • জেনেটিক
  • পরিবারের কোন সদস্যের উচ্চ রক্তচাপ
  • দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • স্লিপ এপনিয়া
উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ
উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোন উপসর্গ নেই। বেশীরভাগ মানুষের মধ্যেই এর কোন উপসর্গ দেখা যায় না। কখনও অনেক বছর বা যুগ পর, যখন সমস্যা তীব্র হয়ে পড়ে, তখনই উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ দেখা দেয়। 
 
অতি উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গঃ
  • মাথা ব্যথা
  • দম কমে যাওয়া
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • মাথা ঘোরানো
  • বুকে ব্যথা
  • দৃষ্টিতে সমস্যা
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরী না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। এসব উপসর্গ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সবার মধ্যে নাও দেখা দিতে পারে তবে উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গের জন্য অপেক্ষা না করে এটা চেক করানো উচিৎ।
 
কিভাবে রক্তচাপ নর্মাল রাখা যায়?
আপনার রক্তচাপ নর্মাল থাকলে ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে এ সমস্যা থেকে দূরে থাকতে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা এবং জীবনধারা অনুসরণ করতে হবে।
 
নিম্নোক্ত উপায়ে আপনি আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পারেনঃ
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • বেশী বেশী ফলমূল, শকসব্জি এবং লো-ফ্যাট দুধ খাওয়া
  • লবণ খাওয়া কমানো
  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, জগিং, সাঁতার ইত্যাদি করা। প্রতিদিন অন্ততঃ আধ ঘন্টা এসব ব্যায়াম করা উচিৎ
  • মদ্যপান একদম কমানো, পারলে পরিহার করা
  • ধূমপান পরিহার করা
নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেশার
অনেকেই মনে করেন নিম্ন রক্তচাপ কোন সমস্যা নয় কারণ এর ফলে কোন মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু খুব বেশী নিম্ন রক্তচাপ সমস্যার কারণ হতে পারে। শরীরে পানি শূণ্যতা বা কোন জটিল রোগের কারণে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।
 
নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ
নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হতে পারেঃ
  • মাথা ঘোরানো
  • মাথা হালকা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • ঝাপসা দেখা
  • ক্লান্তি
  • মনোযোগের অভাব
  • বিভ্রান্তি
  • ঠান্ডা, সাদা ত্বক
  • শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা
  • দুর্বল পালস
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
যদি আপনার মধ্যে বিভ্রান্তি, ঠান্ডা ত্বক, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা বা পালস দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
 
ব্লাড প্রেশার বোঝার উপায়
ব্লাড প্রেশারের দু’টি সংখ্যা আছেঃ সিস্টোলিক (উপরের সংখ্যা) এবং ডায়াস্টোলিক (নীচের সংখ্যা)।
 
রক্তচাপের ধরণঃ
  • নর্মাল
  • উচ্চ
  • হাইপারটেনশন স্টেজ ১
  • হাইপারটেনশন স্টেজ ২
  • হাইপারটেন্সিভ ক্রাইসিস (দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন)
ব্লাড প্রেশার চার্ট
 
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK