সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৯:৩৮

এই ১৫টি কারণে আপনার উচিৎ বেশী বেশী মাছ খাওয়া

এই ১৫টি কারণে আপনার উচিৎ বেশী বেশী মাছ খাওয়া

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
মাছ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। পৃথিবীর মানুষ ৫০,০০০ বছর ধরে মাছ খেয়ে আসছে। ৪০,০০০ বছর আগের পুরাতত্ত্বের নিদর্শনে দেখা যায় তিয়ানুয়ান মানুষ প্রতিনিয়ত মিঠা পানির মাছ খেতেন। নীল নদে ছিল প্রচুর মাছ; প্রাচিন মিশরিয়দের প্রধান খাদ্য ছিল তাজা ও শুকনো মাছ। 
 
মাছে আছে শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি প্রচুর পুষ্টি। খাদ্য থেকে আহরিত প্রোটিন বা আমিষের জন্য মাছ একটি উৎকৃষ্ট সূত্র। মাছে আরো আছে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। মাছের প্রোটিন আপনাকে সাহায্য করবে পাতলা শরীর ও শক্ত পেশী গঠন করতে। মাছ আপনার ব্রেইন, লিভার এবং ঘুমের জন্যও অনেক উপকারী। আপনি কেন প্রতিনিয়ত মাছ খাবেন, এর জন্য আছে হাজারো কারণ। এখানে আমি আপনাদের প্রতিনিয়ত মাছ খাওয়ার পেছনে ১৫টি কারণ দেখাচ্ছিঃ   
 
১। মাছ হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়
এমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিনিয়ত মাছ খাওয়া ও হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকার মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। মাছে থাকা প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হার্টের জন্য খুবই উপকারি। 
 
২। মাছ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় 
বেইলর ইউনিভার্সিটি মেডিকেল প্রসিডিংস -এর মতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ রক্তে কোলেস্টেরল জমানোর লিপিড কমাতেও সহায়তা করে।
 
৩। মাছ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
সার্কুলেশন (Circulation) জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা মতে  আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহ’লে আপনার উচিৎ প্রতিনিয়ত মাছ খাওয়া। গবেষণায় বলা হয় মাছে বেশী পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকাতে তা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
 
৪। মাছ আলযহাইমার্স ডিজিয হওয়ার ঝুঁকি কমায়
মাছ আপনার ব্রেইনের জন্য খুবই উপকারি। ২০১৬ সালে জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশয়ানে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের মগজে গ্রে ম্যাটার বৃদ্ধি পায়। মগজে গ্রে ম্যাটার কমে গেলে স্মৃতিশক্তিও কমে যায়। গবেষকরা বলেন যে যদিও মাছ খাওয়ার সাথে মগজে অতি মাত্রায় মার্কারি থাকার যোগসূত্র আছে, তথাপি তা ব্রেইন নিউরোপ্যাথির সাথে সম্পর্কিত নয়। 
 
৫। মাছ দৃষ্টিশক্তি ও চোখের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করে
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের মগজে ও চোখে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ আছে, তাই আমাদের চোখ ও ব্রেইনের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে দরকার এই ফ্যাটি এসিড। 
 
৬। মাছ রুমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে
ব্রিগহ্যাম এন্ড উইমেন্স হসপিটাল এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের যৌথ উদ্যোগে চালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যেসব রুমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগী সপ্তাহে ২ বা অধিক বার মাছ খেয়েছেন, তাদের রুমাটয়েড আর্থ্রাইটিসজনিত উপসর্গ অনেকাংশে কমে। অবস্থার আরো উন্নতি হয় যারা সপ্তাহে ২ বারের বেশী মাছ খান।
 
৭। মাছ বিষণ্ণতা কমায়
যাদের মানসিক সমস্যা আছে তাদের উচিৎ প্রতিনিয়ত মাছ খাওয়া। জার্নাল অফ সাইকায়াট্রি এন্ড নিউরোসায়েন্স (Journal of Psychiatry & Neuroscience) এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সিলেক্টিভ সেরোটোনিন আপটেইক ইনহিবিটর নামে এক ধরনের এন্টি ডিপ্রেসেন্টের সাথে মাছ খেলে বিষণ্ণতার লক্ষণ কমে। তথাপি, গবেষকদের মতে এ ব্যপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
 
৮। মাছ ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে
আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে, আপনার উচিৎ বেশী বেশী মাছ খাওয়া। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল স্লীপ মেডিসিন (Journal of Clinical Sleep Medicine) -এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের ঘুম খুব ভাল হয়। গবেষকরা মনে করেন  এর কারণ মাছে প্রচুর পরিমাণে ভাইটামিন ডি আছে যা ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে।
 
৯। মাছ হার্ট অকেজো (heart failure) হওয়ার সম্ভাবনা কমায়
ব্রিগহ্যাম এন্ড উইমেন্স হসপিটালের এক গবেষণায় দেখা গেছে অল্প পরিমাণে মাছ খেলেও তা হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভাল রাখে ও হার্ট ফেইলিওর থেকে রক্ষা করে।
 
১০। মাছ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
আপনি যদি অটোইমিউন ডিজিয, যেমন টাইপ ১ ডায়াবেটিস থেকে রেহাই পেতে চান তাহ’লে আপনার উচিৎ প্রতিনিয়ত মাছ খাওয়া। নিউট্রিশান এন্ড ডায়াবেটিস (Nutrition and Diabetes) -এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে মাছে প্রচুর ভাইটামিন ডি থাকার ফলে তা শরীরে গ্লুকোজ মেটাবলিযম এবং ইমিউনিটি তে সাহায্য করে।
 
১১। মাছ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
বৃটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকায় নিয়মিত মাছ খেলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে।
 
১২। মাছ শরীরের মেটাবলিযম গতিশীল করে
আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহ’লে আপনার উচিৎ বেশী বেশী মাছ খাওয়া। কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ গেলফ এর গবেষণায় দেখা গেছে মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ থাকায় প্রতিনিয়ত মাছ খেলে তা মেটাবলিযম গতিশীল করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় ওমেগা-৩ বয়স্ক নারীর শরীরে বিশ্রাম ও ফ্যাট অক্সিডেশনের উন্নতি সাধন করে।
 
১৩। মাছ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে মাছ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী যারা প্রচুর পরিমাণে মাছ খেয়েছিলেন তাদের ফ্যারিনক্স, মুখ, প্যাঙ্ক্রিয়াস ও কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল। 
 
১৪। মাছ লিভার ডিজিয সারাতে সাহায্য করে
নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকার ফলে নিয়মিত মাছ খেলে তা লিভারের রোগ সারাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় ওমেগা-৩ লিভারের ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড ধ্বংস ক’রে লিভারকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
 
১৫। মাছ প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোমের (premenstrual syndrome) উপসর্গ উপশম করে
জার্নাল অফ সাইকোসোমাটিক অবস্ট্রেটিক্স এন্ড গাইনোকলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মহিলা প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোমে ভুগেন তারা মাছ খেলে তা PMS এর উপসর্গ সারাতে সাহায্য করে।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK