সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:৪৯

ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন? উপকার পাবেন এসব খাবারে

ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন? উপকার পাবেন এসব খাবারে

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ সারা বিশ্বে খুব সাধারণ একটি রোগ। বাংলাদেশেও এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম হাসপাতাল ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির গবেষকদের অংশ গ্রহণে একটি গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত।
 
ফ্যাটি লিভার কি?
অতিরিক্ত চর্বি যখন লিভারে জমা হয় তখন সেই অবস্থাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এই সমস্যার চিকিৎসা না করলে পরণতিতে সিরোসিস এবং লিভার ফেইলিউর হতে পারে। লিভার আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে এবং বাইল নামক প্রোটিন উৎপাদন করে যা চর্বিকে ফ্যাটি এসিডে রূপান্তর করে হজম হওয়ার জন্য। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভার নষ্ট করে এবং এই প্রক্রিয়া চলতে ব্যাহত করে।
 
ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভার সারানোর কোন ঔষধ নেই। এই সমস্যার কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে ওজন কমানো, স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ, স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। এখানে আমি আপনাদের দিলাম ১০টি খাবার যা আপনার ফ্যাটি লিভার সারাতে সাহায্য করবে।
 
১। কফি – অস্বাভাবিক এনযাইমের মাত্রা কমাতে
আপনাদের প্রতিদিনের কফি আপনাকে ফ্যাটি লিভার থেকে দূরে রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে কফির উপাদান ক্যাফিন লিভারের অস্বাভাবিক এনযাইমের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
 
২। সবুজ শাকসব্জি – ফ্যাট জমা হওয়া রোধ করতে
পালং শাক, পাট শাক ইত্যাদি সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাকসব্জি ফ্যাটি লিভার রোধ করতে সাহায্য করে। ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা পালং শাক ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমায়। কাচা পালং শাক নিয়ে গবেষণাটি করা হয় কারণ রান্না করা শাকে পলিফেনল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকলাপ কম থাকে।
 
৩। বিন এবং সয় – ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে
গবেষণায় দেখা গেছে মুগ ডাল, মুসুর ডাল, ছোলা, সয়বিন এবং মটর শুটি শুধু পরিপোষকে ভরপুরই নয়, এতে থাকা রেযিস্ট্যান্ট স্টার্চ অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
 
৪। মাছ – প্রদাহ ও চর্বির মাত্রা কমাতে
তৈলাক্ত মাছ যেমন ইলিশ, পাবদা, পাঙ্গাস, স্যামন, টুনা, ইত্যাদিতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা গবেষণা মতে লিভারের চর্বি কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায় ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
 
৬। বাদাম – প্রদাহ কমাতে
কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, ইত্যাদি খেলে প্রদাহ, ইন্সুলিন রেযিস্ট্যান্স, এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত মানুষ বেশী বেশী কাঠবাদাম খে্যেছেন তাদের ফ্যাটি লিভারের উপসর্গের উন্নয়ন হয়েছে।
 
৫। ওট – ফাইবার পেতে
ওট-এর মত গোটা শস্য, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে।
 
৭। হলুদ – লিভারের ক্ষতি কমাতে
হলুদের উপাদান কারকিউমিন লিভার ড্যামেজের মার্কার হ্রাস করে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এলানাইন এমিনোট্র্যান্সফারেইয (এএলটি) এবং এসপার্টেইট এমিনোট্র্যান্সফারেইয (এএসটি) – এই দু’টি এনযাইম অস্বাভাবিক হারে বেশী থাকে। গবেষণায় দেখ গেছে হলুদ এসব এনযাইমের মাত্রা কমায়।
 
৮। সূর্যমুখীর বীজ – এন্টিঅক্সিডেন্ট পেতে
সূর্যমুখীর বীজে আছে প্রচুর ভিটামিন ই যা ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় কার্যকর। তাই গবেষকদের মতে ফ্যাটি লিভার সারাতে বেশী বেশী সানফ্লাওয়ার সিড খাওয়া উচিৎ।
 
৯। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট – ফ্যাটি লিভার সারাতে
মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, ইত্যাদির পরিবর্তে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন আভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম, তৈলাক্ত মাছ, ইত্যাদি খেলে তা ফ্যাটি লিভার সারাতে সহায়ক হবে।
 
১০। রসুন – সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওজন ও চর্বি কমাতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যেসব ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত ব্যক্তি ১৫ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম রসুনের পাউডার খেয়েছেন তাদের লিভারের চর্বি কমেছে এবং এনযাইমের উন্নয়ন হয়েছে।
 
ফ্যাটি লিভার হলে যেসব খাবার বর্জন করতে হবেঃ 
  • অতিরিক্ত চিনি
  • মদ্যপান
  • ভাজা-পোড়া খাবার
  • অতিরিক্ত লবণ
  • ময়দা দিয়ে বানানো খাবার যেমন পাউরুটি, ভাত, পাস্তা, ইত্যাদি
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK