রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:২০
ব্রেকিং নিউজ

কখন ‘রণে ভঙ্গ’ দিবেন পুতিন

কখন ‘রণে ভঙ্গ’ দিবেন পুতিন

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর জন্য কয়েক দফা আলোচনা হয়ে গেছে—যার সর্বশেষটি হলো ইস্তানবুলে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নেতারা নানাভাবে পর্দার আড়ালে দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ চালাচ্ছেন। দুপক্ষই এর আগে যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে তাদের প্রধান কিছু কিছু অবস্হান বা দাবি তুলে ধরেছে। ইউক্রেন বলছে, তারা মস্কোর তোলা নিরপেক্ষতার দাবি বিবেচনা করতে রাজি আছে। তবে ভূখণ্ডের ব্যাপারে কোনো আপোষ করবে না। তাদের ইঙ্গিতটা বোধগম্যভাবেই ডনবাস এলাকা এবং ক্রাইমিয়া নিয়ে। ডনবাসের দোনিয়েত্স্ক এবং লুহানস্ক এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী তত্পরতা চালাচ্ছে রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহীরা, আর রাশিয়া ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর ঠিক আগে এ দুটো এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে। তাছাড়া ২০১৪ সাল থেকেই ক্রিমিয়া অঞ্চলটি রাশিয়া দখল করে নিয়ে এটিকে তাদের অংশ করে নিয়েছে। ইউক্রেন বলছে, যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে তাদের দাবির একটি হচ্ছে এসব ভূখণ্ডের ব্যাপারে কোনো আপোষ না করা। এদিকে পুতিন গোয়াতু‌র্মি করে ইউক্রেনে আক্রমণ করে বসেছেন। তিনিও সম্মান নিয়ে এই যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ইউক্রেনের কতটুকু ক্ষতিসাধন করতে পারলে ‘রণে ভঙ্গ’ দিবেন তিনি?
 
সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, ৪০ লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছে। ১ কোটি লোক দেশের ভেতরে ঘরছাড়া হয়েছে। কিন্তু এ যুদ্ধ থামানোর শর্ত হিসেবে রাশিয়া কী চাইছে? রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেনকে পশ্চিমা ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণের বাইরে থাকতে হবে, নিতে হবে নিরপেক্ষ বা ‘নির্জোট’ অবস্হান। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটিই রাশিয়ার ইউক্রেনে অভিযান চালানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি—কিন্তু ইউক্রেন যদি ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয় তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াবে তা ততটা স্পষ্ট নয়। ভ্লাদিমির পুতিন আরো অভিযোগ করেছেন যে, ইউক্রেনের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে নব্য-নাত্সী গ্রুপগুলো। তবে পুতিনের অভিযোগের সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একমত নন।
 
যুদ্ধ বন্ধ করার আরেকটি শর্ত হিসেবে ক্রেমলিন বাড়তি যা দাবি করেছে তার একটা হলো— ইউক্রেনে রুশ ভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে। ইউক্রেনে ২০১৪ সালে মস্কোর সাথে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠার পর থেকেই রুশ ভাষা রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে ইউক্রেনের আদালত স্কুলে রুশ ভাষা শেখানো নিষিদ্ধ করে। তার পর থেকে দেশটিতে আরো কিছু আইন হয়েছে যার লক্ষ্য ইউক্রেনে রুশ ভাষা ব্যবহার কমানো। জানুয়ারি মাস থেকে নিয়ম করা হয় যে, সেখানে সকল সংবাদপত্র ও সাময়িকী ইউক্রেনীয় ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। শান্তি চুক্তি হতে অনেক সময় লাগবে: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের দাবি যাই হোক না কেন, রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে দরকষাকষিতে অনেক সময় লেগে যাব। কিন্তু একটা শান্তি চুক্তি দুটি দেশের জন্যই দরকার। ইউক্রেনের দরকার। কারণ তাদের বেসামরিক মানুষের মৃতু্য বন্ধ করতে হবে, শহরগুলোর ধ্বংসের ফলে যে গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে, তার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে রাশিয়াও একটি শান্তি চুক্তি চাইবে কারণ এ যুদ্ধে বড় সংখ্যায় তাদের সৈন্যরা মারা যাচ্ছে। তা ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা এর মধ্যেই সাধারণ রুশদের জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ ক্ষতিগুলোও তাদের ঠেকাতে হবে। তাই কোন প্রক্রিয়ায় পুতিন এই যুদ্ধ থেকে সরে যাবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় শান্তিপ্রিয় মানুষ।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK