বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৭:২৫
ব্রেকিং নিউজ

করোনার ঝুঁকি কমাবে যেসব খাবার

করোনার ঝুঁকি কমাবে যেসব খাবার

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরণটি বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ আপাততঃ মৃদু হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্বন্ধে এখনও পরিষ্কারভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ভাইরাস থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। কিছু খাবার আছে যেসব খেলে ও জীবনধারার পরিবর্তন আনলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। আসুন দেখা যাক কি কি খাবার খেলে আপনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
 
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়ন করে। এই ভিটামিন আমাদের রক্তে শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে যা যে কোন সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য খুবই দরকারি।
যেসব ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যাবেঃ
  • কমলালেবু
  • আনারস
  • আম
  • জাম্বুরা
  • লেবু
আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি উৎপাদন করে না এটা আমাদেরকে খাদ্য থেকে নিতে হবে।
 
জিংকসমৃদ্ধ খাবার
চেষ্টা করবেন বেশী বেশী জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার খেতে। গবেষণায় ধারণা পাওয়া গেছে, জিংক বা শিষা শরীরের কোষে ভাইরাসের সংযুক্তি প্রতিহত করে অথবা ভাইরাস রেপ্লিকেট করতে অর্থাৎ এর প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়। ইউনিভার্সিটি অব টাম্পার নিউট্রিশন অ্যান্ড কাইনসিওলজির অধ্যাপক মেলিসা মরিস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন খাবারের তালিকায় জিঙ্ক উপরের দিকে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘জিঙ্ক সংক্রমণ দমনকারী কোষকে সহযোগিতা করে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাকে।‘ যেসব খাবার জিঙ্ক পাওয়া যাবেঃ
  • গরুর মাংস
  • বাদাম (কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম)
  • মসুর ডাল
  • ছোলা
  • ডিম
  • মিষ্টি কুমড়ার বীজ
চিকেন সুপ
সর্দি-কাশি বা অন্যান্য অসুখের খুব সাধারণ পথ্য হচ্ছে চিকেন সুপ। এর কারণ  এটা সর্দি-কাশি ভাল করার সাথে সাথে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মুরগীর মাংসে আছে প্রচুর ভাইটামিন বি-৬। শুধুমাত্র ৮৫ গ্রাম মুরগীর মাংসেই আছে প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৫০% ভাইটামিন বি-৬। ভাইটামিন বি-৬ শরীরের বিভিন্ন প্রকারের কেমিক্যাল রিয়েকশানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া এটি নতুন লাল রক্ত কণিকা তৈরীতেও ভূমিকা রাখে। মুরগী সেদ্ধ করার সময় এর হাড় থেকে বের হয় জেলাটিন, কনড্রয়টিন এবং অন্যান নিউট্রিয়েন্ট, যা অন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চিকেন সুপ ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে।
 
গ্রিন টি 
গ্রীন টি এবং ব্ল্যাক টি দু’টোতেই আছে প্রচুর ফ্ল্যাভনয়েড নামক এক ধরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট। গ্রীন টি এপিগ্যালকাটেকিন গ্যালেট (epigallocatechin gallate or EGCG) নামের এক ধরণের শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্টের জন্য বিখ্যাত। গবেষণায় দেখা গেছে ইজিসিজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ব্ল্যাক টি প্রস্তুতের সময় যে পরিমাণ গাঁজন (fermentation) হয় এতে অনেক পরিমাণে ইজিসিজি ধ্বংস হয়ে যায়। 
 
অন্যদিকে গ্রীন টি প্রস্তুতের সময় এটা গাঁজনের পরিবর্তে স্টীম করা হয় তাই ইজিসিজি’র পরিমাণ ঠিক থাকে। এছাড়া গ্রীন টি’তে আছে অনেক পরিমাণে এল-থিয়ানিন নামক এক ধরণের এমিনো এসিড, যা শরীরের টি-সেলের জীবাণু ধ্বংস করার উপাদান তৈরি করে।
 
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
করোনাভাইরাসের নতুন-পুরোনো ধরন থেকে সুরক্ষা পেতে খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ডি’ রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘ডি’ ছিল তাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের হার কম। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ভিটামিন ডির অন্যতম উৎস। সূর্য যখন প্রখর থাকে, তখনই অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছায়। চেষ্টা করুন প্রতিদিন ভর দুপুরে রোদে ১৫-৩০ দাঁড়িয়ে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে। কাঁচের জানালার ভেতর থেকে রোদ পোহালে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না। এছাড়া ভিটামিন ডি এর অন্যান্য উৎস হচ্ছে গরুর কলিজা, তৈলাক্ত মাছ, ডিম, পনির ইত্যাদি।
 
ভিটামিন ‘এ’
গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন এ ও জিঙ্কের সমন্বয় ভাইরাস প্রতিহত করতে পারে বা ভাইরাসের মারাত্মক ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। যেসব খাবারে ভিটামিন এ পাবেনঃ
  • গাজর
  • মিষ্টি আলু
  • গাঢ় সবুজ শাকসব্জি
  • লাল ক্যাপসিকাম
  • BIGGAPON
  • টক দই
দই হচ্ছে প্রোবায়োটিক, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে। দইয়ে থাকা ভাল ব্যাক্টেরিয়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। টক দই খেতে না চাইলে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
 
আদা/রসুন
আমাদের রান্নায় আমরা আদা রসুন বেশী ব্যবহার করে থাকি। এই মশলা দু’টি স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা। আদা শরীরের প্রদাহ কমায়। এই কারণেই আদা চা পান করলে গলা ব্যথা এবং গলার খুসখুসে ভাব দূর হয়। আদার প্রধান উপাদান হচ্ছে জিঞ্জারল (gingerol) দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা (chronic pain) কমায়। প্রাচীনকালের মানুষ সংক্রমণ রোধে রসুন ব্যবহার করত। রসুনের এলিসিন (allicin) নামক উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 
 
 
 
 

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK