শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:১৯
ব্রেকিং নিউজ

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবক

  সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,  বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবক

মোহাম্মদ হানিফ হোসেন
 
ভারতীয় উপমহাদেশে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতিতে ভারতে নেহরু পরিবার, পাকিস্তানে ভুট্টো পরিবার, শ্রীলংকায় বন্দরনায়েক, মায়ানমারে অংসান উত্তরাধিকারসূত্রে রাজনীতিতে বহাল আছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পরিবার উত্তরাধিকার রাজনীতির হলেও এবং এই পরিবারের সীমারেখা বঙ্গবন্ধু কিংবা তার কন্যা শেখ হাসিনায় আটকে নেই। ইতিহাসের সিড়ি বেয়ে আওয়ামী লীগ এখন আমজনতার। এ অঞ্চলের সকল অর্জন, সকল ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার অন্দোলন তথা ৬দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- আওয়ামী লীগের শেকড়ে পোতা। আওয়ামী লীগের আজকের অবস্থানে আসা বহু ত্যাগ আর নিমর্মতার ইতিহাস। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২২৩টি আসনের ১৪৩টি আসনই জিতেছিল আওয়ামী লীগ। সেই থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের ডায়নামিক নেতৃত্বে আমাদের স্বাধিকারের পথ দেখায়। পাকিস্তানে সামরিক শাসকদের আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু। তখন এমন কোন অজুহাত নেই যা ব্যবহার করে তাকে জেলে ঢোকানো হয়নি। তিনি জেল খাটেন প্রায় ১৪ বছর। নির্দিষ্ট করে বললে ৪ হাজার ৬৭৫ দিন। তিনিই দিয়েছেন স্বাধীনতার রূপরেখা। দিয়েছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট হত্যা করা হলো জাতির পিতাকে। শুরু হয় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু ও তার ফিরলেন শেখ হাসিনা। ঘুরে দাঁড়ালো আওয়ামী লীগ। সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগ। 
 
গত ১৩ বছর ধরে শাসনক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এ একযুগ সমৃদ্ধির যুগ। উন্নয়নের সোপান বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। বহু সূচকে পাকিস্তান ভারতের চেয়েও এগিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। সহজ করে বললে, বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন রাজনৈতিক মুক্তি। শেখ হাসিনা দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। 
 
বাংলাদেশ এখন নিজের টাকায় পদ্মাসেতু বানায়। বাংলাদেশ এখন উপগ্রহে স্যাটেলাইট পাঠায়। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এ বাংলায়। এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই নেতৃত্বের মাঝে মায়ের পাশে কাজ করছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। যার উপমা পরিচ্ছন্ন মানুষ ও জনকল্যাণমূলক কাজের মানুষ। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী। তার বাবা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও মা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার একমাত্র ভাই। তার খালা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
 
আজ (৯ ডিসেম্বর) সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। আজ ৫০ শে পা রাখছেন তিনি। ১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য তিনি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। সারাবিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি একজন সনদপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর  তিনি বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
 
তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। তার কাজ সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন। মনস্ত¡বিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশে অটিজমবিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন। সেই সঙ্গে তার পরিচালিত সূচনা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ডবিøউএইচওর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। তার উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমের মতো অবহেলিত একটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  যেখানে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অংশগ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভলোপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়। সেই সঙ্গে তার পরামর্শের ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেশিকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
 
মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালে সায়মা ওয়াজেদকে ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যারাবলিতে অটিজম বিষয়টি তিনিই সংযুক্ত করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক চার দূতের একজন মনোনীত হয়েছেন। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজমবিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একজন ট্রাস্টি তিনি। 
 
সুযোগ্য মায়ের সুযোগ্য কন্যা তিনি। মা শেখ হাসিনা যেমন দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও সমাজে অটিস্টিক শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও স্বীকৃতি। মানুষের জন্য কাজ করাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের আদর্শগত বৈশিষ্ট্য। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে যেভাবে দেশ ও বিদেশে কাজ করে আজ তিনি প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। 
 
অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সাময়া ওয়াজেদ পুতুলের অবদান অতুলনীয়। কয়েক বছর পূর্বেও আমাদের দেশে অটিজম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিরূপ ধারণা ছিল। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপক আকারে কাজ করতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। অল্পকথায় বললে তিনি বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবক। তার এই অগ্রযাত্রা নিরন্তর এগিয়ে যাক, আগামীর রাজনীতির পরম্পরায় দেশসেবায় তার অবদান আরও প্রসারিত হোক জন্মদিনে আমাদের প্রত্যশা। শুভ জন্মদিন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
 
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK