সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:০৬
ব্রেকিং নিউজ

প্রতিদিন হলুদ দুধ পান করার ১০টি উপকারিতা ও একটি রেসিপি

প্রতিদিন হলুদ দুধ পান করার ১০টি উপকারিতা ও একটি রেসিপি

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
হলুদ দুধ, হলদি দুধ বা “গোল্ডেন মিল্ক” ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ বহু বছর ধরে পান করে আসছে। কিন্তু এখন হলুদ দুধ পশ্চিমা বিশ্বেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এটার পেছনে একটাই কারণ তা হচ্ছে এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।
 
এখানে দেয়া হল হলুদ দুধের ১০টি বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যোপকারিতাঃ
১। হলুদ দুধের প্রধান উপাদান এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন (Curcumin) নামক কম্পাউন্ড এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীর জন্য সুখ্যাত। এর ফলে হলুদ আয়ুর্বেদ ঔষধে শত শত বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এন্টি অক্সিডেন্ট দেহের কোষকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করে। এন্টি অক্সিডেন্ট কোষের কার্যকারিতার জন্য খুবই জরুরি, এবং গবেষণায় প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে যে এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা আমাদের বিভিন্ন ইনফেকশান ও অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। বেশীরভাগ সময় হলদি দুধে দারুচিনি এবং আদাও ব্যবহার করা হয়, যার ফলে এটা এন্টি অক্সিডেন্টে আরো বেশী ভরপুর হয়ে উঠে।
 
২। প্রদাহ এবং জয়েন্টের ব্যথা কমায়
হলুদ দুধে আছে সব ধরনের প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণ। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সার, মেটাবলিক সিন্ড্রোম, আলযহাইমার্স রোগ (Alzheimer’s disease) এবং হৃদরোগের জন্য দায়ী। এজন্যে এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে হ’লে আপনাকে খেতে হবে সেই সব খাবার যাতে আছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে আদা, দারুচিনি এবং হলুদ – হলদি দুধের আসল উপাদানে – আছে শক্তিশালী প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণ। গবেষণায় আরো দেখা গেছে কারকিউমিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব ঔষধের মতই কার্যকারী এবং এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এসব প্রদাহ-বিরোধী গুণাগুণ অস্টিওআর্থ্রাইটিস (osteoarthritis) এবং রুমাটয়েড আর্থ্রাইটিস জনিত জয়েন্টের ব্যথা কমাতে পারে।
 
৩। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
গবেষণায় দেখা গেছে হলুদ খেলে মস্তিষ্কে ব্রেইন ডেরাইভড নিউরোটফিক ফ্যাক্টেরের (brain-derived neurotrophic factor BDNF) মাত্রা বাড়ে। BDNF মস্তিষ্কের নতুন যোগাযোগ এবং মস্তিষ্কের কোষের বিকাশে সহায়তা করে। মস্তিষ্কে কম মাত্রায় BDNF থাকলে আলযহাইমার্স রোগসহ বিভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
 
৪। হলুদের কারকিউমিন (curcumin) মেজাজ ভাল রাখে
হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন মেজাজ ভাল রাখে এবং বিষন্নতা দূর করে। একটি গবেষণায় ৬০ জন বিষাদ্গ্রস্ত ব্যক্তিকে ৬ সপ্তাহ ধরে কারকিউমিন, ঔষধ অথবা দু’টির কম্বিনেশান দেয়া হয়। যারা শুধু কারকিউমিন খেয়েছেন তাঁদের মানসক অবস্থার উন্নয়ন হয় ঔষধ খাওয়া দলের অংশগ্রহনকারীদের মতই। কিন্তু, সবচেয়ে বেশী উন্নতি হয় যারা ঔষধের সাথে কারকিউমিনও খেয়েছেন।
 
৫। হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে
বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশী। হলুদ দুধের ৩টি উপাদানই (হলুদ, দারুচি এবং আদা) হৃদরোগ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। ১০টি গবেষণার একটি রিভিউতে দেখা গেছে প্রতিদিন ১২০ মিলিগ্র্যাম দারুচিনি খেলে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে। 
 
৬। হলুদ দুধ ব্লাড সুগার কমায়
হলুদ দুধের সব উপাদান, বিশেষ করে আদা এবং দারুচিনি ব্লাড সুগার কমায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন ১ থেকে ৬ গ্র্যাম দারুচিনি খেলে ফাস্টিং ব্লাড সুগার ২৯% কমাতে পারে। এছাড়া দারুচিনি ইন্সুলিন রেযিস্ট্যান্সও (insulin resistance) কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্য গ্রহণের পর আপনার অন্ত্র যতখানি গ্লুকোজ শুষে নিতে পারে, দারুচিনি তা কমায় এবং এর ফলে ব্লাড সুগারের উন্নতি হয়।
 
৭। হলুদ দুধ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপায়ে ক্যান্সারের চিকিৎসা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে হলদি দুধের উপাদান এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।
 
৮। হলুদ দুধে আছে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া বিরোধী গুণাবলী
ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিকটবর্তী দেশগুলিতে সর্দি জ্বরের ঔষধ হিসেবে হলদি দুধ দেয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে কারকিউমিনের ভাইরাস বিরোধী গুণাগুণ ইনফেকশানের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়া আদার উপাদান ব্যাক্টেরিয়া হতে শরীরকে রক্ষা করে। আদার উপাদান হিউম্যান রেস্পিরেটরি সিঙ্কটিয়াল ভাইরাসের (human respiratory syncytial virus HRSV) বিরুদ্ধে কাজ করে। HRSV হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশানের অন্যতম কারণ।
 
৯। আদা এবং হলুদ হজমশক্তি বাড়ায়
দীর্ঘস্থায়ী হজমের সমস্যাকে বলা হয় ডিসপেপ্সিয়া (dyspepsia)। এই সমস্যার সময় পাকস্থলীর উপরের অংশে ব্যথা এবং অস্বস্তিকর অবস্থা হয়। হলুদ দুধের উপাদান আদা এই সমস্যা দূর করতে পারে। এটা ডিসপেপ্সিয়ায় ভোগা রোগীদের সমস্যা সমাধান করে। আরো গবেষণায় দেখা গেছে যে হলদি দুধের উপাদান হলুদ বদহজমের উপসর্গ কমায়। এছাড়া হলুদ চর্বি হজম করতেও সহায়তা করে।
 
১০। ক্যালশিয়াম ও ভাইটামিন ডি শক্ত হাড় গঠনে সহায়তা করে
হলদি দুধ আপনার হাড় শক্ত করে। দুধের ক্যালশিয়াম ও ভাইটামিন ডি’র কারণে এটা হয়। আপনার খাদ্যে যদি ক্যালশিয়ামের মাত্রা কম থাকে তখন আপনার শরীর হাড়ে থাকা ক্যালশিয়াম সরিয়ে তা রক্তের ক্যালশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। এভাবে চলতে থাকলে আপনার হাড় হয়ে পড়ে দুর্বল এবং অস্টীওপেনিয়া এবং অস্টিওপরসিস হাড়ের রোগ হওয়ার সম্ভাবণা বাড়ে।
হলুদ দুধ রেসিপি উপাদান
  • ১/২ কাপ দুধ
  • ১ চা চামচ হলুদ
  • একটি ছোট আদা (গ্রেট করা) অথবা ১/২ চা চামচ আদার পাউডার
  • ১/২ চা চামচ দারুচিনি পাউডার
  • সামান্য গোল মরিচ
  • ১ চা চামচ মধু (ঐচ্ছিক)
প্রস্তুত প্রণালী
একতি সস প্যানে সব উপাদান মিশিয়ে বলক আসা পর্যন্ত জ্বাল দিন। এখন তাপ কমিয়ে ১০ মিনিট রাখুন যতক্ষণ না এটার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ছেঁকে মগে ঢালুন এবং উপরে সামান্য দারুচিনি ছিটিয়ে দিন। এটা ফ্রিজে ৫ দিন পর্যন্ত রাখা যাবে এবং খাওয়ার আগে গরম করে নিতে হবে।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK