সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২১:২৪
ব্রেকিং নিউজ

জিয়ার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

জিয়ার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর জিয়াউর রহমান কর্তৃক ‘সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে হত্যা, লাশ গুম ও চাকরিচ্যুতির ঘটনা’র বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের দাবি তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এসময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবিটি তুলে ধরেন। সভাটির আয়োজন করে 'শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড। সভায় সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বেশ কয়েকটি কলঙ্কজনিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে । তার মধ্যে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনা অন্যতম। এসব কলঙ্কময় দিনের মূল কুশীলব ছিল খুনি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে সে ক্ষান্ত হয়নি এর পরও অসংখ্য দেশপ্রেমিককে হত্যা করা হয়েছে। গত চারশো’ বছরের ইতিহাস যদি ঘাটি তাহলে যে মানুষটিকে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম খুনি বলে আমরা বিচার করবো- সে আর কেউ নয়, সে খুনি জিয়াউর রহমান। তার হাত ছিল রক্তে কলঙ্কিত, তার হাতে রক্তের দাগ ছিল। এ কারণে সে কিন্তু ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনাকে খুনের একটি উসিলা হিসেবে নিয়েছিল।

‘সে সময়ে ফাঁসি দেয়ার পরে রায় দেয়া হয়েছে’ দাবি করে এই বিচারপতি বলেন, ‘এমন নজির সারাবিশ্বে কোথাও খুঁজে পাবেন না। ফাঁসি দেয়া হলে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু জিয়া সেটিও হতে দেয়নি। এতেই বোঝা যায় সে কতটা নিষ্ঠুর ও নির্মম ছিল। লাশ কোথায় কবর দেয়া হয়েছে তাও কেউ জানে না। সেদিন কি ঘটেছিল তা কিন্তু এখনও দেশের মানুষ জানে না। প্রহসনের বিচারের নামে জিয়া সেদিন ২২শ’ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। কর্নেল তাহের হত্যা মামলার বিচার করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেখানে বহুলোক আমার আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিল, জিয়া প্রহসনের বিচারের নামে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রভুদের নির্দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে।’

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমার মত, দেশের কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। এর পেছনে অনেক যুক্তি রয়েছে যে, মানুষ পঁচাত্তর সালের পরে জয় বাংলা স্লোগান বাতিল, রাজাকারদের ক্ষমতায় বসানোসহ মুক্তিযুদ্ধে চিহ্ন মুছে দেয়ার পাঁয়তারা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়ার কর্মকাণ্ডে খুশি হয়ে পাকিস্তান থেকে তাকে চিঠি পাঠিয়ে তার কাজে খুশি প্রকাশ করেছিল। তাই সে মুক্তিযোদ্ধা নয় সেটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’ ‘জিয়াউর রহমান একেতো খুনি ছিল, তারপর আবার পাকিস্তানি চর ছিল’ উল্লেখ করে শামসুদ্দিন মানিক বলেন, ‘সে পাকিস্তানে খবর পাচার করতো বলে তাকে রাজাকার ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বিচারের সময় দেখেছি, যে অপরাধে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল তাতে তার ফাঁসি হয় না। ঠিক একইভাবে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।’

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ডের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, আপনাদের ৭ দফা দাবির সঙ্গে আমিও একটি দাবি রাখতে চাই। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনা জাতি জানতে চায়। তারা জানতে চায় সেদিন কী হয়েছিল, কেন কীভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, তাদের কবর দেয়া হয়েছিল কিনা, কোথায় তাদের কবর সেসব চিহ্নিত করা এবং তাদের একটি তালিকা করতে একটি স্বাধীন শক্তিশালী তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই খুনি জিয়ার মরণোত্তর ফাঁসি চাই এবং তার মুখোশ জাতির সামনে তুলে ধরার দাবি জানাই।

সভায় সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, জিয়াউর রহমান এক আদর্শহীন নায়ক। তিনি সকাল বেলা হত্যাকাণ্ডের খবর নিয়ে কাজ শুরু করতেন। তার একমাত্র বিশ্বাসের জায়গা ছিল পাকিস্তান। তার বিশ্বাসের জায়গা ছিল আইএসআই। তার ছাত্র ছিলেন রশিদ-ফারুক। ১৯৬৪-৬৫ সালে তাদের তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। আমি শুধু বলবো, বাংলাদেশকে সত্যিকারভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়োজিত করতে হয়, তাহলে জিয়াউর কিংবা এরশাদের কোনও চিহ্ন দেশের রাজনীতিতে রাখা চলবে না। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান বা যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে তাদের প্রত্যেকের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। তাই যত বিলম্বই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ডের দাবিগুলো হলো- ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা, যারা ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকুরিচ্যুত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র‌্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করা, যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা ও বিমান বাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি হয়েছে, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা, সেসব সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করা, সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি কারাদন্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিল এবং এখনও আছে কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের পাকিস্তানী বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা এবং অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে খুনি জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা। এসময় বক্তব্য রাখেন বীর বিক্রম মাহবুব উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক বজলুল হক, ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে নিহত সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নুরে আলম, মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী লায়লা আরজুমান মানু প্রমুখ।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK