বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৫:০০

কোন কোন খাবারকে সুপারফুড বলা হয় এবং কেন?

কোন কোন খাবারকে সুপারফুড বলা হয় এবং কেন?

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভূবনে – কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য। তাবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশা সকলেরই। যদি সুস্থভাবে বেশী দিন বাঁচতে চান তবে আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা বদলাতে হবে। কিছু কিছু খাবার আছে যাদেরকে বলা হয় সুপারফুড কিংবা খাবারের রাজা। এসব খাবারকে সুপারফুড বলা হয় কারণ এগুলোতে যেসব স্বাস্থ্যকর উপাদান এবং পুষ্টি আছে তা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে অনেক মাত্রায় বেশী। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কোন কোন খাদ্যকে সুপারফুড বলা হয়।
 
১। কমলা
এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভাইবার বা আঁশ, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পরিপোষক। এতে থাকা পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কমায়, খারাপ প্রোটিনকে দূর করে এবং অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম শরীর থেকে বের করে দেয়। কমলালেবুতে থাকা পেকটিন নামক উপাদান খাবারে থাকা কোলেস্টেরলকে শুষে নেয়।
 
২। রসুন
রসুন শুধু রান্নার মশলাই নয়, এর রয়েছে হাজারো গুণাবলী। রসুন হৃদপিন্ডের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটা উচ্চ রক্তচাপ কমায়, ধমনীতে ব্লক হতে বাধা দেয়, এবং ধমনী সংকুচিত হওয়া বন্ধ করে।
 
৩। চকোলেট
চকোলেট প্রেমিদের জন্য সুখবর। চকোলেট হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে শরীরকে দূরে রাখে। ডার্ক চকোলেট এবং কাচা কোকো রক্তনালীকে নমনীয় রাখে, হৃদরোগ দূর করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
 
৪। মসুর ডাল
খাদ্য তালিকায় সবসময় মুসর ডাল এবং অন্যান্য ধরনের কলাই বা শুঁটি রাখবে কারণ এগুলো হার্টের বিভিন্ন অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। মসুর ডালে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও প্রোটিন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ধমনীতে প্ল্যাক জমাট হতে দেয় না।
 
৫। কাঠবাদাম বা আলমন্ড
মজাদার স্ন্যাক হিসেবে আলমন্ড খুবই জনপ্রিয়। এটা মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তির উন্নতি করে, এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া কাঠবাদাম ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বা এলডিএল কোলেস্টেরল শুষে নেয় এবং হৃদপিন্ডের সব সমস্যা দূর করে।
 
৬। বেদানা
বেদানায় আছে বিভিন্ন ধরণের এন্টি অক্সিডেন্ট যা ধমনীর আবরণে প্ল্যাক জমাট বাঁধা রোধ করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। এই সুপার ফুড প্রতিরোধ করে প্রস্টেট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, এমনকি আলযহাইমার্স রোগ (Alzheimer’s disease)। শুধু তাই নয়, বেদানা আপনার ত্বক, দাঁত এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল।
 
৭। ব্লুবেরি
ব্লুবেরিতে একই সাথে আছে বিভিন্ন ধরণের পরিপোষক বা নিউট্রিয়েন্ট এবং এন্টি অক্সিডেন্ট। এই সুস্বাদু ফলটি কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ধমনির দেয়ালে প্ল্যাক জমতে বাধা দেয় এবং হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
 
৮। বীট
বীট আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কালে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটা সালাদে কিংবা জুস বানিয়ে পান করা যায়। বীটে আছে বেটাইন (betaine) নামক উপাদান এবং ফোলেট ও ভিটামিন বি। এই সব্জিটি শরীরে হোমোসিস্টিন (homocysteine) নামক এমিনো এসিডের মাত্রা কমায় ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। বীট শরীরে শক্তি যোগায় এবং ক্যান্সার রোধ করে।
 
৯। স্যামন মাছ
স্যামন (Salmon) মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ যা পশ্চিমা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। তবে এখন এটা আমাদের দেশের সুপার শপগুলোতেও পাওয়া যায়। স্যামনে আছে বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের (Triglyceride) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তনালী নমনীয় থাকে এবং রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ করে। এছাড়া এই মাছ সব ধরণের কার্ডিওভাস্কুলার 
রোগ থেকে শরীরকে নিরাপদ রাখে।
 
১০। হলুদ
প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে থাকা কারকিউমিন (curcumin) একটি খুব কার্যকরি উপাদান যা হৃদপিন্ড প্রসারিত হতে বাধা দেয়। এছাড়া কারকিউমিন স্থূলতা রোধ করে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সার থেকে শরীরকে নিরাপদ রাখে।
 
১১। চিয়া সীড
চিয়া সীডে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার, ওমেগা-৩, এন্টি অক্সিডেন্ট, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর নিউট্রিয়েন্ট এবং আছে খুব কম ক্যালরি। এই সুপার ফুডটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে।
 
১২ আপেল
কথায় আছে প্রতিদিন একটি আপেল খেলে তা ডাক্তারকে দূরে রাখবে। আপেলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট। আপেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আপেলে থাকা ফাইবার বা আঁশ খুবই স্বাস্থ্যোপকারি। প্রতিনিয়ত আপেল খেলে তা দাঁতকে ভাল রাখে।
 
১৩। আভোকাডো
এই সুপার ফুডে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও স্বাস্থ্যকর মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। আভোকাডো কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে।
 
১৫। ব্রকলি
ব্রকলি শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এটি ভাইটামিন, মিনারেল, আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর এই সব্জিটি। এন্টি অক্সিডেন্টের জন্য বিখ্যাত ব্রকলি ক্যান্সার রোধ করে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে, বয়োঃবৃদ্ধির গতি কমায় এবং রক্ত শূন্যতা দূর করে, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ব্রকলি মস্থিষ্কের কার্যকারিতার উন্নয়ন করে ও স্মৃতিশক্তি রক্ষা করে। এছাড়া ব্রকলিতে আছে সালফোর্যাফেইন (sulforaphane) নামক উপাদান যা অন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সালফোর্যাফেইন অন্ত্রে ক্ষতিকারক অণুজীব জন্মাতেও বাধা দেয়।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK