শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৮:৩১
ব্রেকিং নিউজ

অনন্য ঔষধিগুণের শিয়ালকাঁটা

অনন্য ঔষধিগুণের শিয়ালকাঁটা

উত্তরণ বার্তা প্রতিবেদক : প্রায় দুই দশক আগে ড. নওয়াজেশ আহমদ-এর লেখা 'Wild Flowers of Bangladesh' গ্রন্থের প্রচ্ছদে শিয়ালকাঁটা ফুলের মনোমুগ্ধকর ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। কী জীবন্ত সেই ছবি! যেন একটু পর হাওয়ায় দুলতে শুরু করবে। একটি বুনোফুল এতটা আকর্ষণীয় হতে পারে! তারপর ফুলটি খুঁজেছি সারাদেশে। অনেক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে গাছের দেখা পেলেও ফুল ছিল অধরা। কারণ ফুলের সঠিক মৌসুমে গাছটির সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া। তবে স্বীকার করতেই হবে, শিয়ালকাঁটা বর্তমানে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি যশোরের বেনাপোল বেড়াতে গিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শিয়ালকাঁটা ফুলের দেখা পেলাম। দ্রুতগামী গাড়ির জানালা গলে চটজলদি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মরীচিকার মতো হলুদ রেখা অনুসরণ করে ফুলটির বড় একটি আবাস খুঁজে পাই। পথের ধারে পরিত্যক্ত স্থানে অজস্র ফুল ফুটে আছে। একসঙ্গে অনেক ফুল দেখে মনটা ভরে গেল। ফাল্গুনের দামাল বাতাসে বার বার নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। পাশেই ভাঁটফুলের বন থেকে মাতাল করা গন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে।

সুদূর মেক্সিকোর এই বুনোফুল প্রায় ৫০০ বছর আগে আমাদের দেশে এসে এখানকার প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা যায়, ষোড়শ শতকের দিকে স্প্যানিশ বাণিজ্যিক জাহাজে আলুর বস্তা ও মাটির সঙ্গে এই গাছের সরিষার মতো ছোটো ছোটো বীজ চলে এসেছিল এদেশে। এভাবেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটি। এটি একাধারে বিষাক্ত আগাছা এবং ঔষধি গুল্ম। গাছটির অনেক নাম- স্বর্ণক্ষীরা, স্বর্ণদুগ্ধা, রুক্সিণী, সুবর্ণা, হেমদুগ্ধী, কাঞ্চনী ইত্যাদি। ইংরেজি নাম Mexican poppy, Mexican prickly poppy, flowering thistle।

শিয়ালকাঁটা (Argemone mexicana) ২ থেকে ৩ ফিট উচ্চতার বীরুৎ শ্রেণির কণ্টকিত উদ্ভিদ। পাতা অসমান ও তীক্ষষ্ট কাঁটায় ভরা। দেখতে অনেকটা আফিম বা পপিগাছের মতো, একই পরিবারের উদ্ভিদ। গাছটির বীজের তেল দেখতে অনেকটা সর্ষের তেলের মতো হওয়ায় একসময় এটি সর্ষের তেলের ভেজাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে ভোজ্যতেলে শেয়ালকাঁটার তেলের ভেজালের মাত্রা শতকরা ১ ভাগের বেশি হলে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ১৯৭৭ সালে কলকাতায় এর বিষক্রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। ১৯৯৮ সালে উত্তর ভারতে দিল্লির আশপাশে প্রায় আড়াই হাজার লোকের মধ্যে এই ভেজালের কারণে বিষক্রিয়া দেখা দেয় এবং তাতে অন্তত ৬৫ জন মারা যায়।

শিয়ালকাঁটা ঔষধিগুণেও অনন্য। রাজনিঘুণ্টতেও গাছটির ঔষধিগুণের প্রশংসা করা হয়েছে। 'স্বর্ণক্ষীরী হিমা তিক্তা ক্রিমিপিত্তকফাপহা/মূত্রকৃচ্ছাশ্মরী-শোফ-দাহজ্বরহরা পরা।' এই গাছ কৃমি, পিত্ত ও কফনাশক। জ্বর ও মূত্রকৃচ্ছ্রয়ও কার্যকর। মূলের রস কুষ্ঠরোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। গাছের পীতবর্ণের নির্যাস গনোরিয়া ও উপদংশ রোগে বেশ উপকারী। কারণ, এ গাছের রসে আছে কয়েক ধরনের অ্যালকালয়েডস। আরও আছে অলিক, লিনোলিক ও রিচিনোলিক অ্যাসিড। আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় ক্রমেই আকর্ষণীয় এই বুনোফুল বিপন্ন হয়ে উঠছে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK