শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৮:৪৮
ব্রেকিং নিউজ

২৯৯ আসনে ভোট আজ

২৯৯ আসনে ভোট আজ

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯টি সংসদীয় আসনের প্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্য নির্ধারণে ভোটগ্রহণ করা হবে আজ রোববার। সকাল ৮টা থেকে সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে সিল মেরে নিজেদের রায় জানাবে দেশের প্রায় ১২ কোটি ভোটার।

জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করেছে ইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৮টি দলের দেড় সহস্রাধিক এবং প্রায় সাড়ে চারশ স্বতন্ত্র প্রার্থী। দেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪৪টি।

ভোট বর্জনকারী বিএনপি ভোটের আগের দিন শনিবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে। ভোটের আগে ট্রেন, বাসসহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এবারের নির্বাচন বিএনপিসহ ১৬টি দল বর্জন করেছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে ব্রিফিং করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছতামূলক নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ নিলেও দলীয় প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। এই নির্বাচনে ২২৫টির মতো আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। স্বতন্ত্রদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত।

ইসির নির্দেশে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে সারা দেশ। মাঠ এখন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

ভোটকেন্দ্রে ব্যালট যাচ্ছে সকালে
এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হচ্ছে। অবশ্য দুর্গম কিছু কেন্দ্র; দুই হাজার ৯৭১টি কেন্দ্রের ব্যালট পেপার শনিবারই বিতরণ করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্র রয়েছে। ভোট কক্ষ দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। এর মধ্যে দুর্গম ২ হাজার ৯৭১ কেন্দ্রে গতকাল শনিবার ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভোটের দিন আজ সকালে বাকি ৩৯ হাজার ৫৩ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। এসব কেন্দ্রে ব্যালট সকালে গেলেও আগের দিন (শনিবার) প্রিজাইডিং অফিসারসহ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করে করেছেন।

নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১৯৬৯ জন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৫ জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ২৬৪ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আরও ৪৩৭ জন। সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৯। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী এক হাজার ১৮৭১ জন। ৯৬ জন নারী প্রার্থী, হিজড়া ২ জন ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া অন্যদলগুলো হলো– ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, গণতন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল)।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারিক কর্মকর্তা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাড়ে ৭ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন আনসার সদস্য রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, তাদের এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্যে ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থেকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করছে। বাকি ৯৪ হাজার ৭৬৭ জন ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করছে। দেশের ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১০ হাজারের কিছু বেশি। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে দুই জন পুলিশ, ১২ জন আনসারসহ ১৪-১৫ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশসহ ১৬-১৭ জন দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকাসহ ৮টি মহানগরীর কেন্দ্রগুলোতে তিন জন পুলিশসহ ১৫ জন এবং মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশসহ ১৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ৬২টি জেলায় ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা সদস্য ও দুটি জেলার সম্পূর্ণসহ ১৯টি জেলার আংশিক এলাকায় দুই হাজার ৮২৭ জন নৌ বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন ৪৪ হাজার ৯১২ জন (১১৫১ প্লাটুন), কোস্টকার্ড দুই হাজার ৩৫৫ জন (৭০ প্লাটুন)। র‌্যাবের থাকছে ৫ হাজার ৫৬০ জন  (৬০০ টিম ও ৯৫টি রিজার্ভ টিম)।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই হাজার ৭৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) থেকে মাঠে নেমেছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাঁরা ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে সারা দেশে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। তাঁরা বিভিন্ন অপরাধে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের রেকর্ড সংখ্যক শোকজ, তলব ও জরিমানা করেন। এসব কমিটির সুপারিশে নিয়মিত আদালতে অন্তত অর্ধশতাধিক প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।

মাঠে থাকছেন দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখার জন্য দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকরা মাঠে থাকবে। এরমধ্যে দেশীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন ২০ হাজার ৭৭৩ ও বিদেশি ১৯২ জন। যে বিদেশিরা আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯২ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদের মধ্যে ১২৬ জন পর্যবেক্ষক আর ৭৬ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী রয়েছেন। ৩৪টি দেশ ও  চারটি বিদেশি সংস্থার পক্ষ থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করবে।

নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে ৯৬টি নিবন্ধিত দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪টি এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। এসব সংস্থার মোট ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। এই হিসাবে দেশের মোট ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকে দেশীয় পর্যবেক্ষক থাকছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

নির্বাচন মনিটরিং সেল গঠন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে ইসি। এই মনিটরিং সেলের নেতৃত্ব দেবেন আইডিএ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, মনিটরিং সেল শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৭২ ঘণ্টা পরিচালনা করা হবে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK