শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:০৯

উন্নত অবকাঠামো রাজশাহীর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে

উন্নত অবকাঠামো রাজশাহীর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : রাজশাহী বিভাগে বিগত ১৫ বছরের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমিতে নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও জীবিকাকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি স্থানীয়দের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। উন্নত অবকাঠামো এই অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে পরিবহন খরচ হ্রাস, বিপণন ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষি পণ্যের বিপণন সুবিধার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছে।
বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার সর্বত্র বাস্তবায়িত হওয়া প্রকল্পের ফল পাচ্ছে- প্রান্তিক ও জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষসহ তৃণমূলের সাধারণ বাসিন্দারা। এরা সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সুফল পাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, গ্রামীণ উন্নয়ন ও উন্নত অবকাঠামোর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় আয় বৃদ্ধি ও গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করেছে। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩১টি উপজেলায় ‘বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক সাত বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে- যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২০৫.৩৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, উপজেলার ব্রিজ ও কালভার্ট এবং ইউনিয়ন ও গ্রামের সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, গ্রামীণ বাজার, বৃক্ষরোপণ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, নলকূপ স্থাপন, জীবিকা নির্বাহ ও দরিদ্রদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কাজ করা হয়েছে।
গ্রামীণ এলাকার পরিবহন নেটওয়ার্কের সার্বিক উন্নতির জন্য ৬৪ কিলোমিটারেরও বেশি উপজেলা সড়ক ও ২২২ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়কের পাশাপাশি ৯৮৬ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও মোট ৩১টি গ্রামীণ বাজার উন্নত করা হয়েছে- যা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
১৫৯ কিলোমিটার উন্নত সড়কে রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে- যা বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমানোর পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ কমাতে অনেক অবদান রেখেছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য ৭ হাজার ১২০ টির বেশি দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারকে টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন সরবরাহ করা হয়েছে এবং নিরাপদ পানীয় পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ফলে এই অঞ্চলে পানিবাহী রোগের বিস্তার হ্রাস পেয়েছে।
‘গ্রামীণ সড়ক, সেতু, কালভার্ট ও অনগ্রসর উপজেলার অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন’ শীর্ষক আরেকটি ছয় বছর মেয়াদী প্রকল্প গ্রামীণ পরিবহন ও বাজার পরিষেবার স্থায়িত্ব বাড়ানোর সাথে সাথে গ্রামীণ মানুষের নানা সেবায় সরাসরি প্রবেশাধিকারের পথও প্রশস্ত হয়েছে। এলজিইডি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কে এম জুলফিকার আলী  জানান, প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি সুবিধাবঞ্চিত উপজেলায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের আওতায় ১০৫ দশমিক ৭০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৩২৩ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক ও ৫০২ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার গ্রামের সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রতিটি ইউনিয়নের সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী উন্নত সড়কে এক হাজার মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট এবং পরবর্তী উচ্চতর সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫.৭৫ কিমি জলমগ্ন রাস্তা এবং ৪ কিমি সড়ক সুরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
সামগ্রিক গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আরও ১.৫৩৮ কিলোমিটার সেতু ও কালভার্টসহ ১ হাজার ৬৯৬ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কৃষি ও অ-কৃষি অর্থনীতির সুবিধার্থে ২ হাজার ০৮০ দশমিক ৪০ কোটি টাকার ‘রাজশাহী বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতীত)’ প্রকল্পটি ৫৮টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে । এটি স্কুল ও হাসপাতালের মতো প্রাথমিক পরিষেবা সরবরাহ কেন্দ্রগুলিতে সহজ এবং দ্রুত প্রবেশের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনমানকেও উন্নত করবে।
প্রকৌশলী জুলফিকার আলী জানান, পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় ৭৬২ মিটার সেতুসহ ১৪০ মিটার সেতুসহ ১৭২ দশমিক ৯ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৬৩৬ মিটার সেতুসহ ৩৬৭ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ১ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার গ্রামের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পটিতে ৪৬টি গ্রোথ সেন্টার, ২৫০ মিটার স্কুল সংযোগ সড়ক, ৩৯৬.৮৩ মিটার কালভার্ট এবং ৩৩.২৮ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা রয়েছে। ৩২৭ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হচ্ছে, ১৭১ দশমিক ০৭ কিলোমিটার গ্রামের রাস্তা এবং ২৪০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার উপজেলা রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে বলেন, ভৌত অবকাঠামো গ্রামবাসীদের আস্থার স্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান ও জীবিকার অবস্থার উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছে। কৃষি ও অ-কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লালিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাস্তা, সেতু, কালভার্ট ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ গ্রামীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, হাসপাতাল এবং গ্রামের বাজারের মতো প্রাথমিক পরিষেবা সরবরাহ কেন্দ্রগুলিতে সহজে ও দ্রুত সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায়, গ্রামীণ জনগণের উন্নত জীবনমানও দৃশ্যমান হয়েছে।

উত্তরণবার্তা/ডেল

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK