রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৮:৫৩

নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রাণ ফিরেছে ফিশারিঘাটে, ইলিশ আসবে আরও পরে

নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রাণ ফিরেছে ফিশারিঘাটে, ইলিশ আসবে আরও পরে

উত্তরণবার্তা  প্রতিবেদক : মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে  ৪ নভেম্বর শনিবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরতে নামা কিছু ট্রলার ফিরতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র কক্সবাজার ফিশারি ঘাটে। তবে ট্রলারগুলো ইলিশ ছাড়া ছোট-বড় হরেক রকমের মাছ নিয়ে ফিরছে। ইলিশ ধরার ট্রলারগুলো ঘাটে পৌঁছাতে আরও ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘাটে আসা বেশির ভাগই আইড় মাছ (গুইজ্যা), পোপা, ছুরি, লইট্টা, ফাইস্যাসহ বিভিন্ন ছোট প্রজাতির মাছ।

শনিবার সকালে সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী মোহনায় নুনিয়ারছড়া ৬ নম্বর ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার মাছের আড়তগুলো খুলেছে। মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আনাগোনা বেড়েছে। তারা সদ্য আসা ট্রলার থেকে মাছ নামিয়ে বরফজাতে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।

ফিশারি ঘাটের ব্যবসায়ী শফিউল আলম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে সবেমাত্র ট্রলারগুলো ইলিশ ধরতে গেলো। ইলিশ নিয়ে আসতে আরও ৪/৫ দিন সময় লাগবে ট্রলারগুলোর। আমরাও ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছি। বড় বড় ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো ফিরলে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।’

ঘাটে ফেরা ‘এফবি মায়ের দোয়া’ ফিশিং ট্রলারের জেলে রাশেদ নূর বলেন, ‘বেশিরভাগ ট্রলার শুক্রবার দুপুরের পর রওনা করেছে। শনিবার দুপুরে ফিশারীঘাটে ১০-১২টি ট্রলার ভিড়েছে। তবে ইলিশ নিয়ে এখনো ট্রলার ঘাটে পৌঁছায়নি। ইলিশের ট্রলারগুলো আরও পরে আসবে। আমরা ছোট-বড় নানান জাতের মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছি।’

ট্রলার মালিকরা জানান, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ জাল বা ভাসা জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এছাড়া ফইল্যা জালের বোটগুলো ৫ থেকে ৬ দিনের রসদ নিয়ে মাছ ধরতে যায়। তবে চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফুলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।

বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। এখন ধরা পড়ছে পোয়া, ফাইস্যা, চোখফুলা, অলুয়া, কামিলা ও কৈ পুটি মাছ। এছাড়া ককশিটের বোটগুলোও একই ধরনের জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এই ইঞ্জিনবিহীন বোটগুলো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার সাগরে আসা-যাওয়া করে।

দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর দরিয়ানগর ঘাট থেকে ফইল্যা জাল, চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জাল নিয়ে ছোট আকারের ইঞ্জিন বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে নেমেছে। এরমধ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ককশিটের বোটগুলো কয়েক দফায় মাছ ধরে ঘাটে আসা যাওয়া করেছে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে প্রায় ৭ হাজার ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। নিবন্ধিত জেলে আছেন প্রায় ৬৪ হাজার।’

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘শুক্রবারের মধ্যেই বেশিরভাগ ট্রলার মাছ ধরতে সাগরে নেমেছে। ইলিশ জাল বা ভাসা জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে সাগরে গেছে। সাগরে ইলিশ পেলেই ৩/৪ দিনের মধ্যেও উপকূলে ফিরে আসে।’

ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, ‘ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র একদকমই ফাঁকা ছিল। শুক্রবার থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরুর পর জেলে পল্লীগুলোতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘কক্সবাজার উপকূলে ইলিশ ধরা মৌসুমে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগরে যায়নি। এতে সাগরে ইলিশ প্রজনের পাশাপাশি অন্যান্য মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। জেলায় প্রায় ২৪ হাজার জেলেকে কর্মহীন সময়ে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ