শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১১:৩৩

বিরিয়ানী-কাবাবে পেট ভরে বাবরদের আয়েশি জয়

বিরিয়ানী-কাবাবে পেট ভরে বাবরদের আয়েশি জয়

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : নিরাপত্তার কারণে হোটেলবন্দী থেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের যা-তা অবস্থা! হাসান আলী অভিযোগ করেছিলেন, চার দেয়ালে বন্দি থেকে মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। কলকাতায় পা রেখেও তাদের হোটেল থেকে বের হওয়ার সুযোগ মেলেনি। তবে ‘সিটি অব জয়’- খ্যাত কলকাতায় এসে প্রাণে জোয়ার পেয়েছেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা।

বিখ্যাত জমজম হোটেলের বিরিয়ানী, কাবাব ও চাপ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন। কথায় আছে না, মন শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। পারফরম্যান্সেও সেই ছাপ পড়ল। নয়তো শাহীন শাহ আফ্রিদি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে প্রথম ওভারেই উইকেট পেলেন কিভাবে? কিংবা পাড়ার বোলার হয়ে উঠা হারিস রউফের গতিতেই কিভাবে রাতারাতি পরিবর্তন হলো! আরও আছে। দলে ফেরা ফখর জামান কিভাবে হুট করেই মাঠ মাতালেন ৭ ছক্কায়। সবই সম্ভব হলো বাংলাদেশের এগার ক্রিকেটারের ‘বদৌলতে’।

মঞ্চ ইডেন গার্ডেন। যেখানে ২০১৬ সালে পাকিস্তানের সমর্থন চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার সেই জোয়ার নেই। লাল-সবুজের পতাকা উড়ল ইডেনের চারপাশে। গ্যালারিতে বাংলাদেশ ‘জিতে’ গেলেও হেরে গেল ২২ গজের লড়াইয়ে।

চার হারের পর পাকিস্তানের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে আরেকটি পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল। প্রথম দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেমিফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ল। সেরা চারের লড়াইয়ে টিকে রাইল ৯২’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন আর নেই। শেষ তিন ম্যাচে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের আটে থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিশ্চিত করা। সেই লড়াইয়ে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের হারে শুরুতেই পিছিয়ে পড়লো।

সামনে দিল্লিতে শ্রীলঙ্কা ও পুনেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে। ম্যাচগুলোর ফলাফল পক্ষে না আসলে নিজেদের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপের সঙ্গে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকেও বাদ পড়বে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এদিন ইডেনে টস জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আগে ব্যাটিং নিয়েছিলেন। উইকেটে রান হবে এমনটাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপর বিশ্বাস রাখা বড্ড বাড়াবাড়ি। তাইতো বাজে শুরুর পর শেষটাতে বিবর্ণ হয়ে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে থাকা পাকিস্তানের চোখ শুধু জয়ে-ই ছিল না। রান রেট বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটাও তাদের ছিল। যেখানে তারা সফল। ফখর জামানের ৭৪ বলে ৮১ রানের ঝড়ো ইনিংসে কাজটা সহজ হয়ে যায়। যেখানে ৩ চারের সঙ্গে ছিল ৭ ছক্কার মার। সঙ্গে আব্দুল্লাহ শফিক ৬৯ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রান করে রাখেন অবদান। বাবর রান পাননি। ফিরেছেন ৯ রানে। তাতেও সমস্যা হয়নি তাদের। ৩২.৩ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে অতি সহজেই।

অফস্পিনে হাত ঘুরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছেন ৩ উইকেট।

ফখর ও আব্দুল্লাহ যেখানে ১২৮ রানের জুটি গড়েছিলেন সেখানে দুপুরের সতেজ উইকেটে বাংলাদেশ ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায়। তানজিদ শূন্যরানে আফ্রিদির বলে এলবিডব্লিউ হন। এই উইকেট নিয়ে আফ্রিদি দ্রুততম পেসার হিসেবে শততম উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন। শান্ত টানা সপ্তম ইনিংসে ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। মুশফিককে চারে আসলেও ৫ রানের বেশি করতে পারেননি।

সাত ম্যাচে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ১৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সামনে তখন দুটো পথই খোলা ছিল। এক, আত্মসমর্পণ। দুই, লড়াই। মাহমুদউল্লাহ পাঁচে নেমে লিটনকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় অপশনটাই বেছে নিলেন। হারিস রউফকে দুই অনড্রাইভে উইকেটে স্বাগত জানানো লিটন বেশ সাচ্ছন্দ্যে খেলছিলেন। মাহমুদউল্লাহও ক্রিজে এসে প্রতি আক্রমণ চালান। নবম বলে আফ্রিদিকে যে ড্রাইভ করেছিলেন তা চোঁখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিল। পাঁচ বল পর ওয়াসিমকে কভার ড্রাইভে যে চার হাঁকান তাতে মনে হয়েছিল আরেকটি বড় ইনিংস তার ব্যাটেই আঁকা হচ্ছে। সেই পথেই ছিলেন তিনি। ফিফটি তুলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিবের ধীর গতির ব্যাটিং ও লিটন নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসায় সব ভেস্তে যায় বাংলাদেশের ইনিংসে।

অফস্পিনার ইফতেখার আহমেদের স্লোয়ার বল আলতো টোকায় খেলতে গিয়ে লিটন মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৪৫ রানে। ৬৪ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬ বাউন্ডারিতে। লিটনের আউটের আগ পর্যন্ত শত স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ সঙ্গী হারানোর পর থমকে যান। ৪৫ বলে ৪৬ রান করা মাহমুদউল্লাহ পরের ২৫ বলে করেন কেবল ১০ রান। সবমিলিয়ে ৭০ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটি থেমে যায় আফ্রিদির দুর্দান্ত অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে।

সাকিবের শুরুটাও তেমন ভালো ছিল না। ২০ বলে প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় বাউন্ডারির জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় ৩২ বল। এরপর টানা দুই বলে আরও দুটি বাউন্ডারি পান। আগের দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা নেটে ব্যাটিং করে নিজের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সাকিব। মাঠে সেই আত্মবিশ্বাসের দেখা মেলেছে সামান্যই। বিশ্বকাপে এবার শর্ট বলে ভুগছিলেন তিনি। রউফ সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করে পেয়েছেন সাফল্য। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ছয় ইনিংসে পাঁচটিতেই শর্ট বলে আউট সাকিব। ৬৪ বলে ৪৩ রানে তার ইনিংসটি থামে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে।

ব্যাটিংয়ে এমন ব্যর্থতার গল্পগুলোতে বোলাররাও এখন জড়িয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপে দুই বিভাগেই বাংলাদেশ সুপার ফ্লপ। কলকাতায় বাংলাদেশের মিশন শেষ হলো আরেকটি বিব্রতকর হারে। সামনে দিল্লি মিশন। প্রতিপক্ষ সিংহের দল শ্রীলঙ্কা। বাঘ সিংহের লড়াইয়ে কে জেতে সেটাই দেখার।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK