বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৪:০৩
ব্রেকিং নিউজ

‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’

‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মানুষ নেমেছিল পথে পথে। লাল-সাদা বর্ণিল রঙে প্রাণের উচ্ছ্বাসে। কায়মনে বাঙালি হওয়ার প্রত্যয়ে। সর্বান্তকরণে শুদ্ধতম মানুষ হওয়ার অভিলাষে বঙ্গাব্দের প্রথম প্রত্যুষে সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ঐকতান। নবযাত্রার প্রীতিবন্ধনে বাংলাদেশ একসঙ্গে গেয়েছে বর্ষবরণের গান। সব বিভেদ ভুলে সর্বজনের মঙ্গল কামনায় পহেলা বৈশাখ ভোরে বাঙালির কণ্ঠে একযোগে উচ্চারিত হয়েছে নতুন শপথ– ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান’। নানা আয়োজনে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন নতুন বছর বঙ্গাব্দ ১৪৩০। অর্ধশতকের রীতি অনুযায়ী, রাজধানীতে এবারও পহেলা বৈশাখের সূচনা হয় ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজনের মাধ্যমে। রমনার বটমূলে বৈশাখী কথন পর্বে এবারে ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা অভ্যাগত সব সংস্কৃতিমনা মানুষের  উদ্দেশে উচ্চারণ করেন প্রত্যয়ধ্বনি। দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, ‘শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান। সব দুর্বল সংশয় হোক অবসান।’ তিনি বলেন, ‘নববর্ষের সূর্যোদয়ের নবীনকিরণ যখন আমাদের আলোকিত করে, তখন ফিরে দেখি ফেলে আসা দিনগুলো। ধারাবাহিক অগ্রগতি দেশের ভবিষ্যতের পদরেখা হিসেবে প্রাণে আশার সঞ্চার করলেও সামাজিক বিভাজন সব অর্জনের আনন্দ ম্লান করে দেয়। লোভ, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য আমাদের হতাশ করে, সমাজে বিভাজন রেখা গভীর ও বিস্তীর্ণ করে আমাদের অর্জনগুলোও ম্লান হয়।’

এ বছরও কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে শুরু হয় বাংলা বছরের প্রথম দিন। রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা অনুষদ, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিল, পুরান ঢাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়– সবখানেই ছড়িয়ে ছিল উৎসবের আবির। মুক্তমনে সবাই বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। লাল-সাদা শাড়ি, কাচের চুড়ি, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা আর মাথায় ফুলের টায়রা পরা শাশ্বত বাঙালি ললনার পাশাপাশি ছিল পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় সজ্জিত পুরুষ। তবে সারাদেশে প্রবাহিত তাপপ্রবাহ ও রমজানে দুপুরের পরেই মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে।পহেলা বৈশাখের দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে আহির ভৈরব সুরে সারেঙ্গি বাদনের মধ্য দিয়ে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজন। ১০টি সম্মেলক গান, ১১টি একক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সবশেষে জাতীয় সংগীতে সাজানো হয় এ অনুষ্ঠানমালা।করোনা মহামারি-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। এর ফলে কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। তাই যুদ্ধ নয়, পৃথিবীতে নেমে আসুক শান্তির বৃষ্টি। এমন কামনা নিয়ে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কলি ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।

এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ দুই মোটিফ হলো মায়ের কোলে শিশু এবং নীলগাই। মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ, প্রতীকীভাবে বৈশ্বিক শান্তির বার্তা রয়েছে সেখানে। এ ছাড়া বিপন্ন হয়ে যাওয়া প্রাণীদের প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে নীলগাই। এ ছাড়া আরও চারটি মোটিফ শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত হয়। সেগুলো হলো– বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হাতি। তবে রমজানের কারণে চারুকলায় এ-বছর পান্তা-ইলিশের আয়োজন ছিল না।এদিন শিশু-কিশোরদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘শুভ নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে খেলাঘর ঢাকা মহানগরী। রমনা উদ্যানের পশ্চিমে শিশুপার্কের নারিকেল বীথি চত্বরে ‘নব আনন্দে জাগো’ স্লোগান নিয়ে পহেলা বৈশাখের সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র-চত্বরে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নববর্ষ বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে বসে বৈশাখী মেলা। নতুন বছর বরণ করতে শিল্পকলা একাডেমিতে সকাল থেকেই ছিল নানা আয়োজন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নৃত্য ‘বৈসাবী’, সমবেত নৃত্য ‘সহজ মানুষ’, নাটক ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’, আলপনা অঙ্কন কর্মশালাসহ বিভিন্ন আয়োজনে সাজানো হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন, নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করে। এছাড়া সিলেট, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ সারাদেশে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমি এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK