বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:১০
ব্রেকিং নিউজ

এখন হাতের কাছে টিকা

এখন হাতের কাছে টিকা

উত্তরণ বার্তা ডেস্ক : অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা গত পরশু যুক্তরাজ্য অনুমোদন দেয়ার পর নতুন বছরের প্রথম দিন সায় দিল ভারতের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। বহু প্রত্যাশিত এই টিকা এখন বাংলাদেশের আরো নাগালে চলে এলো। ভারতে টিকাটি উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, যাদের কাছ থেকে টিকা আমদানির চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত থেকে টিকা আনার জন্য আগামীকাল রবিবার প্রথম চালানের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হবে। আর দু-এক দিনের মধ্যে দেশের ঔষধ প্রশাসনের সায়ও মিলবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রথম ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসতে দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্যানেল জরুরি ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধক কোভিশিল্ডকে ছাড়পত্র দিয়েছে গতকাল শুক্রবার। এখন দেশটির ওষুধ প্রশাসনের ছাড়পত্র পেলে সেখানে টিকা দেওয়া শুরু হবে। এই টিকা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড সরকারকে এনে দেবে। আপাতত এই টিকাই প্রথম রক্ষাকবচ হয়ে আসছে দেশের সরকার ও মানুষের কাছে।
 
গত নভেম্বরে অক্সফোর্ডের টিকা আমদানির জন্য বেক্সিমকো ও সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করে সরকার। সেরাম থেকে বাংলাদেশ সরকার তিন কোটি ডোজ টিকা আনবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদনের পর বাংলাদেশে টিকা নিয়ে আসতে এখন আর কোনো বাধা রইল না। এর পরের ধাপ হচ্ছে দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিশেষ কমিটির অনুমোদন।
 
এর আগে দেশে অক্সফোর্ডের টিকা আমদানির জন্য গত আগস্টে সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে বেক্সিমকো। তখন বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে টিকাটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে প্রথম যে দেশগুলো পাবে বাংলাদেশ হবে তার মধ্যে একটি।সেরামের তৈরি এই টিকা বাংলাদেশের বাজারে শুধু বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই সরবরাহ করতে পারবে।
 
যুক্তরাজ্যের পর ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন পাওয়ার পর গতকাল তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘খবরটি শুনে খুবই ভালো লাগছে। এটা নতুন বছরের প্রথম দিনের বড় উপহার হয়ে এলো। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা প্রত্যাশিত টিকা দেশে নিয়ে আসতে পারব।’
 
টিকা নিয়ে আসায় আর কোনো বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের বিষয়টি জরুরি বিবেচনায় শিথিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক ধরনের নির্দেশনা পাওয়া গেছে বলেও তিনি  জানিয়েছেন। আগে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন না দেয়া পর্যন্ত কোনো টিকা বাংলাদেশে আনা হবে না। পরে জরুরি বিবেচনায় সাতটি দেশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেকোনোটির অনুমোদন পেলে দেশে টিকা আমদানির নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। গত বুধবার দেশটি কোভিশিল্ডকে অনুমোদন দেয়।
 
গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘টিকা আনার ক্ষেত্রে আমরা এখন একেবারেই দোরগোড়ায় আছি। এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আইন ও বিধিবিধানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জরুরি পর্যায়ের প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনার জন্য এক ধরনের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। ফলে এখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একেবারেই না হলেই নয় এমন কিছু বিষয় ছাড়া আর কোনো দেরি হবে না বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘রবিবার আমরা প্রথম লটের টাকা পাঠিয়ে দিব।’
 
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ভারত থেকে কিভাবে টিকা আনা হবে, দেশে কিভাবে এই টিকা সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রয়োগ করা হবে তা পুরোপুরি পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে। বেক্সিমকো ও সেরামের সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী সেরাম থেকে প্রথম লটে ৫০ লাখ ডোজ টিক আসবে, যা ২৫ লাখ মানুষের দেহে প্রয়োগ করা যাবে। এর পর প্রতি মাসে আরো ৫০ লাখ ডোজ করে আসবে। এই টিকা সংরক্ষণের তাপমাত্রা নিয়ে বাড়তি কোনো জটিলতা হবে না। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে প্রতি ডোজ টিকার দাম ধরা হয়েছে দুই ডলার করে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হবে। আনুষঙ্গিক খরচসহ জনপ্রতি টিকার পেছনে ব্যয় হবে পাঁচ ডলার করে।
উত্তরণ বার্তা/এআর
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK