উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (আরএমইউ) দেশের উত্তরাঞ্চলে মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তির ব্যবস্থার ফলে এই অঞ্চলে মেডিকেল শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে আরএমইউ সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আরএমইউ’র রেজিস্টার অফিস সমস্ত নির্ধারিত কাজ দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করায় ৮০টি মেডিকেল, নার্সিং, ডেন্টাল কলেজ এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর একাডেমিক কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। উপাচার্য অধ্যাপক এ. জেড. এম মোস্তাক হোসেন বলেন, তারা তাদের প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আশা করছেন চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে। উপাচার্য বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর খুব শিগগির অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনে অবদান রাখবে।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষক, পরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মীরা অত্যন্ত সন্তষ্ট যে তাদের হিসাব বিভাগে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবলের কারণে তাদের দীর্ঘ দিনের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। কলেজ পরিদর্শন সংক্রান্ত কাজও হালনাগাদ করা হয়েছে। মোস্তাক হোসেন বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। উপাচার্য আরও বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের নিয়োগের ফলে কর্মকান্ডে গতিশীলতা এসেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত বিধি অনুসরণের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও বরাদ্দের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। বুধবার বিকালে অধ্যাপক মোস্তাক হোসেন তার অফিসে একান্ত আলাপকালে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করেছি এবং এটি একনেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি।’ তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন, তারা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এমনকি কভিড-১৯ মহামারির সময়েও একাডেমিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়নি।পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভাগে অভিজ্ঞ এবং যোগ্য নেতৃত্বের ফলে আরএমএউ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রায় এক বছর এগিয়ে আছে।
চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অধ্যাপক হোসেন বলেন, সময়ের চাহিদা মেটাতে তিনি চিকিৎসা শিক্ষার উচ্চতর আসনে উন্নীত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শিক্ষক ও পেশাজীবীদের নিয়ে একটি যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রশাসন গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক হোসেন বলেন, কভিড-১৯ এর মতো মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তৈরি করার এটাই উপযুক্ত সময়। ‘আমি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বৃদ্ধি করে আরএমএউকে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাস্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য রাজশাহী নগরীর শিলিন্দা এলাকায় ৬৮ একর জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে এবং সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকবে ১,২০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। দক্ষ নার্স তৈরির জন্য ক্যাম্পাসে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের বিদ্যমান সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিকে আরএমএউ’র আওতাধীন করা হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৩টি সরকারী ও ১৩টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ, দু’টি সরকারী ও পাঁচটি বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ, ছয়টি সরকারী ও ৩১টি বেসরকারী নার্সিং কলেজ, একটি সরকারী ও দু’টি বেসরকারী স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ ৭৪ টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরএমইউ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সফলভাবে এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপিতে এবং ইউনানি মেডিসিন অ্যন্ড সার্জারি (বিইউএমএস) কোর্স সফলভাবে পরিচালনা করছে। ডাটা এন্ট্রি, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সকল কার্যক্রম ডিজিটালভাবে ৎসঁ.বফঁ.নফ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কোন স্থান থেকে এবং যে কোন সময় সম্পাদিত হচ্ছে। অধ্যাপক মোস্তাক বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আটটি অনুষদের অধীনে পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
উত্তরণবার্তা/এআর