শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১০:৩৮
ব্রেকিং নিউজ

ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্য উপকারি?

ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্য উপকারি?

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
আজকাল সুপারমার্কেটে ডিমের সেকশানে গেলেই চোখে পড়বে ওমেগা-৩ ডিম নামের এক ধরনের ডিম। বলা হয় এই ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে তাই এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এগুলো দামে অন্যান্য ডিমের চেয়ে বেশী এবং অনেকেই দেখা যাচ্ছে বেশী দাম দিয়ে এই ডিম কিনছেন। এই ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি এটা এক ধরনের মার্কেটিং গিমিক?  
 
ওমেগা-৩ কি? 
ওমেগা-৩ হচ্ছে এক ধরনের চর্বি যেটা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। ওমেগা-৩ আমাদের হৃদপিন্ড, রক্তের ধমনী, ইমিউন সিস্টেম, মস্তিষ্ক ও দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে খুবই জরুরী।   
 
ওমেগা-৩ দু’ধরনের হয়ঃ ডকোসাহ্যাক্সাইনোইক এসিড (docosahexaenoic acid ডিএইচএ) এবং আলফা লিনোলেনিক এসিড (alpha linolenic acid এএলএ)। DHA আছে তৈলাক্ত মাছে। ডিএইচএ মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। এএলএ আছে তিসির বীজ (flaxseed), তিসির তেল (flax oil), আখরোট এবং আখরোটের তেলে। এই এএলএ -ও হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।  
 
ডিমে ওমেগা-৩ এলো কি করে? 
সব ডিমেই কিছু পরিমাণ ওমেগা-৩ থাকে (প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ডিএইচএ এবং ২৫ গ্রাম এএলএ)। এই ওমেগা-৩-এর মাত্রা বাড়াতে মুরগীকে খাওয়ানো হয় তিসির বীজ। মুরগী যখন তিসির বীজ খায় তখন কিছু এএলএ ভেঙ্গে ডিএইচএ -তে রূপান্তরিত হয় এবং দু’টোই ডিমের কুসুমে জমা হয়। 
একটি ওমেগা-৩ ডিমে সাধারণতঃ ৩৪০ গ্রাম এএলএ এবং ৭৫-১০০ ডিএইচএ থাকে। কোন কোন কম্পানী ডিমে ডিএইচএ -এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে মুরগীকে মাছের তেলও খাওয়ায়। ঠান্ডা পানির মাছে আরেক ধরণের ওমেগা-৩ আছে যার নাম আইকোস্যাপেন্টেনইক এসিড (eicosapentaenoic acid ইপিএ)
 
ওমেগা-৩ ডিম কি স্বাস্থ্যোপকারি?  
গবেষণা অনুযায়ী ওমেগা-৩ এর উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম (ডিএইচএ এবং ইপিএ সম্মিলিতভাবে) খেতে হবে। কিন্তু, ওমেগা-৩ ডিমে আছে খুবই সামান্য পরিমাণে ডিএইচএ এবং ইপিএ।
 
ওমেগা-৩ পেতে আপনি বেশী বেশী ডিম খেতে পারেন কিন্তু আপনার যদি হৃদপিন্ডের সমস্যা থাকে তাহলে আপনার উচিৎ হবে না বেশী ডিম খাওয়া, যেহেতু ডিমে আছে কোলেস্টেরল। তাই, বিশেষজ্ঞদের মতে তৈলাক্ত মাছ খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।  
 
একটি ওমেগা-৩ ডিমে সাধারণতঃ ৩৪০ গ্রাম এএলএ এবং ৭৫-১০০ ডিএইচএ থাকে।  আর শুধু ১৭০ গ্রাম স্যামন মাছে আছে ৩,৬০০ মিলিগ্রাম ডিএইচএ + ইপিএ। শুধু সপ্তাহে একবার এই পরিমাণ খেলে আপনি প্রতিদিন পাচ্ছেন ৫১৪ গ্রাম ডিএইচএ + ইপিএ আর সপ্তাহে দু’বার এই পরিমাণ স্যামন মাছ থেকে আপনি প্রতিদিন পাচ্ছেন ১,০২৮ ডিএইচএ + ইপিএ। 
 
পরিশেষে
আপনি যদি নিয়মিত মাছ খেয়ে থাকেন তাহ’লে আপনাকে বেশী দাম দিয়ে ওমেগা-৩ ডিম কেনার দরকার নেই। এছাড়া আপনি যদি নিয়মিত তিসির বীজের গুড়ো (২ চা চামচ) বা চিয়া সীড (২ চা চামচ) খান তাহলেও আপনার ওমেগা-৩ ডিম খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
ওমেগা-৩ ডিমে সামান্য হলেও ওমেগা-৩ আপনি পাবেন এবং সাথে ডিমের অন্যান্য গুণাবলীও পাবেন। মনে রাখতে হবে সব ধরনের ডিমের মধ্যে চারণভূমিতে পালিত মুরগীর ডিম সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK