শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২০:৫০
ব্রেকিং নিউজ

সাদা চাল বাদামি চাল লাল চাল এবং কালো চাল – কোন চাল সবচেয়ে বেশী উপকারি?

সাদা চাল  বাদামি চাল  লাল চাল  এবং কালো চাল – কোন চাল সবচেয়ে বেশী উপকারি?

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অসংখ্য দেশের কয়েক শ’ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। আমরা যে সাদা চাল খাই এটারও আছে বিভিন্ন প্রকার যেমন, মিনিকেট, বাসমতি, নাজিরশাই, ইত্যাদি। কিন্তু এসব সাদা চাল ছাড়াও অন্যান্য কয়েক ধরণের চাল আছে যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারি। এসব চাল আসে বিভিন্ন রঙ্গে যেমন বাদামি চাল, লাল চাল ও কালো চাল। এখন কথা হচ্ছে সাদা চাল, বাদামি চাল, লাল চাল, এবং কালো চাল, এগুলোর মধ্যে কোন চাল সবচেয়ে বেশী উপকারি? আসুন দেখা যাক।
 
বাদামি চাল
বাদামি চাল বা ব্রাউন রাইস এক ধরণের গোটা শস্য যাতে আছে দু’টি স্তর বিদ্যমান – ব্র্যান এবং জার্ম। এই দু’টি স্তরে আছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারি পরিপোষক। সাদা চালে এই স্তর দু’টি নেই। বাদামি চালে এপিজেনিন (Apigenin) এবং লুটিওলিন (Luteolin) নামক দু’ প্রকারের ফ্ল্যাভনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এই দু’টি এন্টিঅক্সিডেন্ট রোগ-বালাই দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 
গবেষণায় দেখা গেছে ফ্ল্যাভনয়েড যুক্ত খাবার খেলে হৃদরোগ এবং কয়েক ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।  বাদামি চালে সাদা চালের সম পরিমাণ ক্যালরি ও শর্করা আছে, কিন্তু বাদামে চালে সাদা চালের ৩ গুণ ফাইবার বা আঁশ এবং উচ্চ মাত্রার প্রোটিন আছে। আপনি যদি সাদা চালের পরিবর্তে বাদামি চালের ভাত খান তাহলে আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 
 
স্থূলকায় মানুষের উপর চালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৫ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ গ্রাম বাদামি চালের ভাত খেয়েছেন, তাদের ফাস্টিং ব্লাড সুগার এবং ইন্সুলিন লেভেল অন্যান্যদের (যারা সমপরিমাণ সাদা চালের ভাত খেয়েছেন) তুলনায় কম ছিল। গবেষকদের মতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাদামি চাল একটি উৎকৃষ্ট খাবার।
 
লাল চাল
লাল চালে আছে সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশী প্রোটিন ও ফাইবার, তবে এটার আসল উপকারিতা আসে এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট থেকে। এই চালে আছে এন্থোসায়ানিন (Anthocyanins), এপিজেনিন (apigenin), (মাইরাইসটিন), এবং কোয়েরসেটিন (quercetin) নামক ফ্ল্যাভনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট।
 
গবেষণায় দেখা গেছে ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করতে লাল চাল বাদামি চালের চেয়ে বেশী কার্যকর এবং এই চালে বাদামি চালের তুলনায় বেশী মাত্রায় ফ্ল্যাভনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
 
সাদা চাল
সাদা চাল অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত, ফলে খোসা ছাড়াও এর থেকে ব্র্যান এবং জার্ম সরিয়ে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে এই চাল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, কিন্তু এর বেশীরভাগ নিউট্রিয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এতে আছে বাদামে চালের তুলনায় কম পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এবং কয়েক প্রকারের ভিটামিন ও মিনারেল।
 
সাদা চালে আছে বাদামি, লাল, কালো, ও ওয়াইল্ড রাসের তুলনায় অনেক কম মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট। যেহেতু সাদা চালে অনেক কম পরিমাণে ফাইবার ও প্রোটিন আছে, তাই এটা খেলে পেট ভরতে সময় লাগে এবং এই চাল ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করে।
 
কালো চাল
কালো চালের আরেক নাম ‘নিষিদ্ধ চাল’, কারণ প্রাচীন চীন দেশে এই চাল শুধু মাত্রা রাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকত। এই চাল দেখতে গাঢ় কালো রঙের তবে রান্না্র পর বেগুনি রঙ ধারণ করে। 
 
গবেষণায় দেখা গেছে কালো চালে অন্যান্য সব চালের তুলনায় সবচেয়ে বেশী মাত্রায় এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই এটা অন্যান্য সব চালের তুলনায় বেশী স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে কালো চালে আছে বেশী পরিমাণে এন্থোসায়ানিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট যাতে আছে শক্তিশালী প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণ। গবেষণায় দেখা গেছে এন্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে মলাশয় ক্যান্সার সহ বেশ কয়েক ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
 
কোন ধরণের চাল বেছে নিবেন?
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে প্রক্রিয়াজাত শস্যের চেয়ে গোটা শস্য বা হোল গ্রেইন অনেক বেশী স্বাস্থ্য উপকারি। প্রায় ২ লক্ষ মানুষের উপর চালিত এক গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সাদা চালের পরিবর্তে সম পরিমাণ বাদামি চাল খাওয়ার ফলে অংশগ্রহনকারীদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬% হ্রাস পেয়েছিল। এছাড়া গোটা শস্য স্থূলতা, হৃদরোগ, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ গোটা শস্য স্বাস্থ্যকে অনেক ভাবে সুরক্ষিত রাখবে। তাই গবেষকদের মতে সাদা চালের তুলনায় বাদামি, লাল, বা কালো চাল অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK