সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
কিশমিশ হচ্ছে আঙ্গুরের শুকনো রূপ। আঙ্গুরকে সূর্য বা কৃত্রিম উপায়ে শুকিয়ে এর থেকে পানি পুরোপুরি সরিয়ে ফেললেই আঙ্গুর কিশমিশের রূপ নেয়। কিশমিশ আমরা জর্দা, ফিরনি,পায়েশ, সেমাই, ইত্যাদির টপিং হিসেবেই খেয়ে থাকি। কিন্তু এটা এমনিতে খেতে কোন বাধা নেই, আর এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্বন্ধে জানলে আপনি হয়তো সবসময় কিশমিশ খালি খালিই খেতে চাইবেন। তাহলে আসুন দেখা যাক কিশমিশের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা কি কি।
পুষ্টিগুণে ভরপুর কিশমিশ
১ কাপ কিশমিশে আছেঃ
-
ক্যালরিঃ ৪৫০
-
প্রোটিনঃ ৩ গ্রাম
-
ফ্যাটঃ ০.৫ গ্রাম
-
শর্করাঃ ১২৩ গ্রাম
-
ফাইবারঃ ১১.২ গ্রাম
-
চিনিঃ ৮০ গ্রাম
-
ক্যালসিয়ামঃ ৪০.৬ গ্রাম
-
আয়রনঃ ৩.৭৬ মিলিগ্রাম
-
ম্যাগনেশিয়ামঃ ৪৩.৫ মিলিগ্রাম
-
পটাশিয়ামঃ ১১৯৬ মিলিগ্রাম
-
ভিটামিন সিঃ ৭.৮ মিলিগ্রাম
কিশমিশের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১। কিশমিশ হজমে সহায়ক
কিশমিশে আছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ, যা পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং পাকস্থলিকে রেচক রাখে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খেলে বা ঘুম থেকে উঠে সারা রাত ভিজিয়ে রাখা কিশমিশ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, এবং শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন অপসারিত হয়। এছাড়া পেট ফেপে থাকলে ও গ্যাসের সমস্যায় কিশমিশ খেলে উপকার পাবেন।
২। দৃষ্টিশক্তির উন্নয়ন করে কিশমিশ
কিশমিশের ভিটামিন এ, এ-ক্যারটিনয়েড, এবং বেটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে।
৩। কিশমিশ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
শরীরে অতি মাত্রায় লবণ থাকলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। কিশমিশে আছু খুবই কম লবণ এবং অনেক বেশী পটাশিয়াম, যা শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৪। হাড় মজবুত করে কিশমিশ
কিশমিশে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া শক্ত হাড়ের জন্য প্রয়োজন বোরন, যা কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণে।
৫। কিশমিশ খেলে ওজন কমে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কিশমিশ ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটা হয় এতে থাকা ফাইবারের ফলে, তবে কিশমিশে আছে প্রচুর ক্যালরি তাই ওজন কমাতে এটা পরিমিত ভাবে খেতে হবে।
৬। কিশমিশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমিতা বৃদ্ধি করে
কিশমিশে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে।
৭। কিশমিশ এনিমিয়া রোধ করে
এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধ করতে কিশমিশ খুবই কার্যকর। কিশমিশে আছে প্রচুর আয়রন, কপার, এবং ভিটামিন যা লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।
৮। কিশমিশ খেলে পেট ফাঁপা দূর হয়।
কিশমিশে আছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যা এসিডিটি দূর করে ও পেট ফাঁপা ভাল করে।
৯। দাঁত ভাল রাখে কিশমিশ
কিশমিশে আছে ওলিয়ানোলিক এসিড যা দাঁতের ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যাভিটি হওয়া বন্ধ করে। এছাড়া কিশমিশে থাকা ক্যালসিয়াম ও বোরন দাঁত সুন্দর ও চকচকে রাখতে সহায়তা করে।
১০। যৌন অক্ষমতা দূর করে কিশমিশ
প্রাচীন কাল থেকেই কামোত্তেজক হিসেবে কিশমিশ সুপরিচিত। এতে আরজিনাইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড যা লিঙ্গ শিথিলতা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়া আরজিনাইন বীর্যের সচলতা বৃদ্ধি করে ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবণা বাড়ে।
১১। কিশমিশ কোলেস্টেরল কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কিশমিশ খেলে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) হ্রাস পায় এবং ভাল কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বৃদ্ধি পায়।
১২। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে কিশমিশ
গবেষণায় দেখা গেছে কিশমিশে থাকা রেযভার্যাট্রল রক্ত থেকে বিষাক্ত কোষ দূর করে ও রক্ত পরিশোধিত করে। ত্বকের কোষও ড্যামেজ থেকে রক্ষা পায় এবং বলিরেখা দূর হয়। এছাড়া নিয়মিত কিশমিশ খেলে চুল চকচকে থাকে, চুল পড়া রোধ হয়, এবং খুশকি দূর হয়।
কিশমিশ কিভাবে খাবেন?
কিশমিশ সবাই কাঁচা খেতেই ভালবাসেন, তবে কিশমিশের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সবচেয়ে বেশী পাবেন যদি কিশমিশ সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খান। এর ফলে কিশমিশের নিউট্রিয়েন্ট বৃদ্ধি পায় এবং এন্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতাও বেড়ে যায়। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের উচিৎ এভাবে কিশমিশ খাওয়া।
কিশমিশের ইতিহাস
কিশমিশের জন্মস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। এরপর এটা ইউরোপ হয়ে এশিয়ায় আসে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান কালের মানুষের কাছেও কিশমিশ ছিল জনপ্রিয়। প্রাচীন কালে মুদ্রা হিসেবে, খেলায় বিজয়ীকে পুরস্কৃত করতে ও ফুড পয়জনিং এর চিকিৎসায় কিশমিশ ব্যবহৃত হতো।
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক