বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৫:০৫
ব্রেকিং নিউজ

বাদামি চাল বনাম সাদা চালঃ পুষ্টি বিশ্লেষণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

বাদামি চাল বনাম সাদা চালঃ পুষ্টি বিশ্লেষণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
বাদামি চাল বনাম সাদা চাল – কোনটা বেশী স্বাস্থ্যকর? এই প্রশ্ন শুধু ডায়াবেটিস রোগীরাই নন, সুস্থ মানুষের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে। ওজন কমাতে ও শরীর সুস্থ রাখতে কোন চাল বেছে নেয়া উচিৎ? আসুন দেখা যাক। সব সাদা চালই শুরুতে থাকে বাদামি। মিলে প্রক্রিয়াজাতের সময় চালের খোসা, ব্র্যান এবং জার্ম সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে চালের রঙ হয়ে যায় সাদা এবং যদিও এর জীবনকাল বৃদ্ধি পায়, এই চাল হারায় বেশীরিভাব পরিপোষক, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ।
 
সাদা চাল এবং বাদামি চাল (ব্রাউন রাইস) দু’টোতেই আছে প্রচুর শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট। বাদামি চাল একটি গোটা শস্য (Whole grain)। এতে আছে সাদা চালের তুলনায় বেশী পুষ্টি। গবেষণায় দেখা গেছে গোটা শস্য কোলেস্টেরল কমায় এবং স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
 
বাদামি চাল বনাম সাদা চালঃ পরিপোষক 
১/৩ কাপ সেদ্ধ করা ভাতেঃ
বাদামি চাল বনাম সাদা চালঃ মূল পুষ্টিগত পার্থক্য
এখন আমি আপনাদের বলব বাদামি চাল এবং সাদা চালের মধ্যে কি কি পুষ্টিগত পার্থক্য আছে। সাদা চালের প্রকারের মধ্যে এর ভেদাভেদ হতে পারে।
 
ফাইবার বা আঁশ
বাদামি চালে সাদা চালের তুলনায় বেশী ফাইবার আছে। বাদামি চালে আপনি পাবেন একই পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ১ থেকে ৩ গ্রাম বেশী ফাইবার।
  • ফাইবার শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই দূর করে না, এর আছে আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। ফাইবার আপনাকে সাহায্য করবেঃ
  • দ্রুত পেট ভরা রাখতে, যা ওজন কমাতে সহায়ক
  • কোলেস্টেরল কমাতে
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
  • অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার খাবার যোগাতে
প্রতিটি পুরুষের প্রয়োজন প্রতিদিন ৩৮ গ্রাম ফাইবার (যাদের বয়স ৫০ এর নীচে), ৩০ গ্রাম ফাইবার (যাদের বয়স ৫০ এর বেশী)। প্রতিটি নারীর প্রয়োজন প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ফাইবার (যাদের বয়স ৫০ এর নীচে), ২১ গ্রাম ফাইবার (যাদের বয়স ৫০ এর বেশী)।
 
ম্যাঙ্গানিজ 
ম্যাঙ্গানিজ একটি খনিজ যা শক্তি উৎপাদন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকারিতায় প্রয়োজন। বাদামি চালে আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, অন্যদিকে সাদা চালে পর্যাপ্ত ম্যাঙ্গানিজ নেই।
 
সেলেনিয়াম
বাদামি চালে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেলেনিয়াম, যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন, এন্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা, এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া সেলেনিয়াম ভিটামিন ই এর সাথে কাজ করে ক্যান্সার থেকে শরীরের কোষকে নিরাপদ রাখতে।
 
ম্যাগনেশিয়াম
সাদা চালের তুলনায় বাদামি চালে আছে অনেক বেশী ম্যাগনেশিয়াম। আধা কাপ সেদ্ধ করা বাদামি চালে আপনি পাবেন দিনের চাহিদার ১১% ম্যাগনেশিয়াম।
 
ম্যাগনেশিয়াম যে কারণে প্রয়োজনঃ
  • রক্ত জমাট বাঁধতে
  • পেশীর সংকোচনে
  • কোষ উৎপাদনে
  • হাড়ের উন্নয়নে
ফোলেট
পরিশোধিত সাদা চালে আছে প্রচুর ফোলেট। শুধু ১ কাপ সাদা চালে আছে ১৯৫-২২২ মাইক্রো গ্রাম ফোলেট, যা দিনের চাহিদের ৫০%। ফোলেট শরীরে ডিএনএ ও অন্যান্য জিনগত উপাদান উৎপাদনে সহায়তা করে। এটা কোষ ভাগ হতেও (cell division) সাহায্য করে। ফোলেট সবার জন্যই দরকারি, তবে এটা বেশী প্রয়োজন গর্ভবতি নারীদের।
 
ডায়াবেটিস এবং ভাত
সাদা এবং বাদামি, উভয় চালেরই গ্লাইসেমিক সূচক উচ্চ। সাদা চালের গ্লাইসেমিক সূচক ৭২, তাই এটা সহজেই রক্তে মিশে যায়। বাদামি চালের গ্লাইসেমিক সূচক ৫০। বাদামি চাল আপনার ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করবে ধীরে কিন্তু তবুও ব্লাড সুগারে এর প্রভাব পড়বে।  তারপরও ভাত যেহেতু আমাদের প্রধান খাদ্য তাই ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে ভাত খেলে কম পরিমাণে খেতে হবে। ছোট দানার সাদা চালের গ্লাইসেমিক সূচক ৭০ বা তার বেশী, তাই এটা পরিহার করা উচিৎ। 
 
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাল চাল হচ্ছে 
  • বাদামি চাল
  • বাসমতি চাল
  • ওয়াইল্ড রাইস
পরিশেষে 
বাদামি চাল সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশী পুষ্টিকর। এতে আছে প্রচুর ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম, এবং অন্যান্য পরিপোষক। এটা সাদা চালের মত কৃত্রিমভাবে পরিশোধিত নয়। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ভাত খাওয়ার ব্যাপারে আপনার উচিৎ হবে একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তেরের পরামর্শ নেয়া।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK