মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৯:৩২
ব্রেকিং নিউজ

শেরপুর মুক্ত দিবস উদযাপন

শেরপুর মুক্ত দিবস উদযাপন

উত্তরণবার্তা  প্রতিবেদক : শেরপুরে মুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়েছে আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে শেরপুর অঞ্চলকে শক্রমুক্ত করা হয়। দেশের সীমান্তবর্তী এ জেলায়  প্রথম শক্রমুক্ত হয় ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী, ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শ্রীবরদী উপজেলা এলাকা। এর পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করা হয় শেরপুর অঞ্চলকে। আজ ৭ ডিসেম্বর সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের আয়োজনে বিজয়র‌্যালি ও আলোচনা সভা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুইপ আতিউর রহমান আতিক। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে হেলিকপ্টারযোগে এসে নামেন এবং এক স্বতস্ফূর্ত সমাবেশে তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার। আমরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য শুধু সহযোগিতা করেছি; কিন্তু দেশকে এখন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।  শেরপুরকে হানাদার মুক্ত বলে ঘোষণা দেন। এ সময় তার সাথে আরও দুটি হেলিকপ্টারের বিবিসি তৎকালীন সংবাদদাতা মার্কটালী সহ দেশ বিদেশী সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। শেরপুরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্ত অঞ্চল ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আজিজ। ক্যাপ্টেন আজিজ জন্মস্থান জামালপুর জেলার নান্দিনা এলাকায়।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান জানান, মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩০ থেকে ৪০টি খন্ডযুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৩৯ জন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ৪১ জন শহীদ হন।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলে ঘাঁটি। শেরপুর জেলা শহরের নয়ানী বাজারে টর্চার সেল ও ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ঘাঁটিতে চালায় অমানবিক অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। অন্যদিকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকে শত্রু শিবিরে।

 নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শত্রু বাহিনীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর  সাথে তুমুল যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীরা জয়লাভ করে। এ যুদ্ধে কর্ণেল তাহের আহত হন। ১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এ ঘাঁটির পতন হয়। মোট ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা এবং বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। কামালপুর মুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সকল ক্যাম্প ধ্বংস হয়। অবশেষে পাক সেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে শেরপুর শহরের ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK