রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৫:২৩
ব্রেকিং নিউজ

শীতে জয়েন্টের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার ৮ উপায়

শীতে জয়েন্টের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার ৮ উপায়

সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
 
শীতে জয়েন্টের ব্যথা হওয়া খুব সাধারণ ব্যপার। এই মৌসুমে বেশী ঠান্ডার ফলে হাত পা জমে যায়, ফলে হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হয়। না, এটা আপনার কল্পনা নয়, শীতে অনেকেরই, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের জয়েন্টে ব্যথা দেখা দেয় যা তাদের চলাফেরা করতে বাধা দেয়।
 
শীতে জয়েন্টের ব্যথা বাড়ে কেন?
 
শীতকালে অতি ঠান্ডার ফলে হাত ও পায়ের দিকে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। ফলে জয়েন্টসমূহের প্রদাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যথা, ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন জয়েন্টের চারপাশের ত্বক খুব বেশি ঠান্ডা হলে স্নায়ু প্রান্তগুলোর সংবেদনশীলতা বেশি হয়। শীতকালে শক্ত কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত বা স্পর্শ লাগলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়।
এখানে আমরা শীতে জয়েন্টের ব্যথা কমাতে ৮টি উপায় নিয়ে কথা বলব।
 
১। হাঁটা চলা করুন
বছরের অন্যান্য সময়ের মত শীতকালেও শরীরকে সক্রিয় রাখা জরুরি। আমাদের শরীর একটি যন্ত্রের মত, তাই এর জয়েন্টকে ভাল রাখতে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। শীতে বাইরে হাঁটতে না চাইলে ঘরের ভেতর এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করুন। পারলে ট্রেডমিল ব্যবহার করতে পারেন।
 
২। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
শীতে অনেকেই মুটিয়ে পড়েন। শীতে ঘরে বেশী থাকা হয়, হাঁটাচলা কম হয় কিন্তু খাওয়া বেশী হয়, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। মনে রাখবেন আপনার শরীরের প্রতি কেজি বাড়তি ওজন আপনার হাঁটুর উপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করছে। তাই একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করুন এবং সব সময় হালকা ব্যায়াম করুন।
 
৩। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশী গ্রহণ করুন
শীতে জয়েন্টের ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এসময় বেশীরভাগ মানুষই বাইরে ঘোরাঘুরির চেয়ে বাসায় থাকতে বেশী পছন্দ করেন। ফলে সূর্যের আলো গায়ে লাগে না। সূর্যালোক হচ্ছে ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উৎস। ভিটামিন ডি’র ঘাটতি দেখা দিলে জয়েন্ট এবং মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হলেও এমন খাবার বেছে নিন যাতে ভিটামিন ডি আছে। যেসব খাদ্য ভিটামিন ডি আছেঃ গরুর কলিজা, গরুর মাংস, তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম। এছাড়া ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।
 
৪। বেশী বেশী ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য বেশী খেলে শরীরে কোলাজেন (collagen) উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কোলাজেন হচ্ছে হাড়ের মজ্জার (cartilage) একটি উপাদান। হাড়ের কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে গেলে বাত বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। যেসব খাদ্যে ভিটামিন সি আছেঃ কমলা, লেবু, ক্যাপসিকাম, আনারস, ফুলকপি, স্ট্রবেরি, ইত্যাদি।
 
৫। একটি সুষম খাদ্য তালিকা
আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে পারেন। কিছু কিছু খাদ্য আছে যা জয়েন্টের ব্যথা বাড়াতে পারে আবার কিছু খাদ্য এই ব্যথা দূর করতে পারে। পালং শাক, বাঁধা কপি, আঙ্গুর ইত্যাদি, সাথে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন তৈলাক্ত মাছ, বাদাম ইত্যাদি জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি বর্জন করুন। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য তালিকে অনুসরণ করে ওজন কমাতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন প্রতি কেজি বাড়তি ওজন আপনার হাঁটুর উপর চার গুণ বেশী চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
 
৬। রুম হিটার
চেষ্টা করুন ঘরে গরম পরিবেশে থাকতে। পারলে রুম হিটার ব্যবহার করুন। গরম পরিবেশ আপনার জয়েন্টকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করবে। গরম প্যাড বা গরম পানির বোতল দিয়ে জয়েন্টে সেঁক দেয়ার অভ্যাস করুন। একটি সতর্কবাণী; আপনার ডায়াবেটিস বা অন্য কোন শারিরীক সমস্যা থাকলে বেশী সময় গরম সেঁক দিবেন না। সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন।
 
৭। পর্যাপ্ত পানি পান
শীতে পর্যাপ্ত পানি পান করা সবার জন্য খুবই জরুরি কারণ বেশীরভাগ মানুষই ঠান্ডার কারণে পানি খুব কম পান করেন। অনেকেই পিপাসা না পেলে পানি পান করেন না যার ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। যদি ঠান্ডা পানি পান করতে ভাল না লাগে তাহলে গরম চা বা সুপ পান করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্কের ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ।
 
৮। গ্রীন টি
গ্রীন টি’র উপকারিতা অনেক। শুধু জয়েন্টের ব্যথাই নয়, গ্রিন টি হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখতে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে তা আর্থ্রাইটিসের ফলে মজ্জার ক্ষতি কমায় এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
 
লেখক: খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK