শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২১:৩১

ফাইনাল যেন ভাঙা হাট গ্যালারিতে নেই উত্তাপ

ফাইনাল যেন ভাঙা হাট  গ্যালারিতে নেই উত্তাপ

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : দুবাই স্পোর্টস সিটির কর্মব্যস্ততা নিত্যদিনের মতোই। স্টেডিয়ামের কয়েক’শ গজ সামনে পুলিশ একটা লেন আটকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। অথচ তিন বছর আগে বাংলাদেশ-ভারত এশিয়া কাপ ফাইনালেও এই এলাকাটা ছিল জনারণ্য। কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যানবাহন। গাড়ির সঙ্গে মানুষের স্রোত ছিল দেখার মতো। পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে এক যুবক টিকিট বিক্রি করছিলেন। এমনভাবে টিকিট হাত বদল হতে দেখলাম অনেক জায়গায়। স্টেডিয়াম অভিমুখে একদল লোক হাঁটছেন ঠিকই। তবে সংখ্যাটা খুবই নগন্য। বলা বাহুল্য, বেশিরভাগই গাত্র বর্ণের দিক থেকে ধবধবে সাদা।

১৪ নভেম্বর রবিবার কোনো অবয়বেই বিশ্বকাপ ফাইনালের ছায়া, উত্তাপ খুঁজে পাওয়া গেলো না দুবাই স্টেডিয়ামের চারপাশে। ফাইনাল যেন ভাঙা হাট। অলক্ষ্যে একটা মাতম কিন্তু ঠিকই ফুটে উঠলো। কারণ, বিশ্বকাপ ফাইনালে যে নেই উপমহাদেশের কোনো দেশ। ভারত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। পাকিস্তান অনেক সম্ভাবনা নিয়ে সেমিতে খেলেছে। কিন্তু তারাও এখন ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে অবস্থান করছে। সামগ্রিকভাবে আমিরাতে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা হতাশ। পাকিস্তানকে ফাইনালিস্ট ধরে যারা টিকিট আগেই সংগ্রহ করেছিলেন, তারাই মূলত নিজের টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছেন।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অস্ট্রেলিয়ান জার্সি গায়ে এক দর্শককে যেতে দেখা গেলো। পরেই নিউজিল্যান্ডের তিন দর্শকের দেখা মিললো। পল, অ্যানা দম্পতির সঙ্গে এসেছে তাদের ছেলে চার্লি। পলের কন্ঠেও যেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের নির্মোহ সুর। তবে ফাইনাল জয়ের পূর্ণ আশাবাদ রয়েছে তার। পল বললেন, ‘আমি দারুণ একটা ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে চাই। ভালো একটা ম্যাচ হোক, সেমির মতোই জমাট লড়াই হোক। অবশ্যই দিন শেষে নিউজিল্যান্ডকে সবার উপরে দেখতে চাই। তারা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভালো করছে। ট্রফিটা ওদের প্রাপ্য। অস্ট্রেলিয়াও শক্তিশালী দল। আশা করি আমরাই জিতবো।’ পল-অ্যানা অবশ্য ফাইনালের মঞ্চে জিমি নিশামের আগুণে পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় আছেন। অ্যানা বলেছেন, ‘দেখুন আমার মনে হয় জিমি নিশাম বড় কিছু পেতে চাইছে। ও দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছে। সেমির মতোই ওর কাছে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আশা করছি।’

স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করার পরও ফাইনালটাকে বিবর্ণই মনে হলো। গ্যালারিগুলো ফাঁকা, যেন দর্শকের হাহাকারই অনুরণন তুলছে স্টেডিয়াম জুড়ে। ম্যাচ শুরুর আগে যত দর্শক আসনে বসেছেন, তা গ্যালারির আসনের তুলনায় সত্যিই অপ্রতুল। উপমহাদেশের দর্শকদের অভাবে গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও প্রেসবক্সে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সাংবাদিকই বেশি। ফাইনালের আমেজ হারিয়ে গেছে সাংবাদিকদের মাঝেও। ভারতের কলকাতার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সন্দীপন ব্যানার্জি বলছিলেন, ‘ভাই, এ কেমন ফাইনাল হচ্ছে? কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। একটা ফাইনাল এত রঙচঙ হীন, নিরুত্তাপ হতে পারে এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না।’

তাসমান সাগরের দুই পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল স্বাভাবিকভাবে টানেনি উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। আমিরাতের মরুর বুকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই মলিন। খেলার প্রাণ দর্শকরাই নেই। বহিরাবরণে ফাইনালকে আর দশটা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ম্যাচই মনে হচ্ছে। করোনার প্রভাবে স্বশরীরে মাঠে থাকতে না পারলেও তাসমান সাগরের প্রতিবেশি দুই দেশে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে নিশ্চয়ই আন্দোলন তুলছে ফাইনাল। ট্রফিটার মালিকানা ঠিক হবে ২২ গজের লড়াইয়ে। সার্বিক আবহে স্তব্ধতা বিরাজ করলেও বিনোদনের পূর্ণ খোরাক যোগাতে পারে ফাইনাল।
উত্তরণবার্তা/এআর

 

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK