শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৪:২০

চীন হামলা করলে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন

চীন হামলা করলে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন

উত্তরণবার্তা  ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তা প্রতিহত করবে। গত বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা নিয়ে আয়োজিত মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অনুষ্ঠানে একজন অংশগ্রহণকারী বাইডেনকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কি তাইওয়ানকে রক্ষা করবেন এবং চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে তিনি কী করবেন? জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ এবং হ্যাঁ।’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তারা বেশি শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, ‘চীন, রাশিয়া ও বাকি বিশ্ব জানে, বিশ্বের ইতিহাসে আমাদের সেনাবাহিনীই সবচেয়ে শক্তিশালী।’

 এরপর সিএনএনের উপস্থাপক দ্বিতীয় দফায় বাইডেনের কাছে জানতে চান, চীন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র কি তাইওয়ানের সুরক্ষায় এগিয়ে যাবে। বাইডেন জবাব দেন, ‘হ্যাঁ। এটা করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’ এদিকে বাইডেনের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সমঝোতার কোনো জায়গা নেই।

তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে চীন। কিন্তু তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে আসছে। চলমান উত্তেজনার জন্য বেইজিংকে দোষারোপ করে আসছে তাইওয়ান। অন্যদিকে তাইওয়ানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে চীন। বাইডেনের বিবৃতিটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা মার্কিন নীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ছিল, যা ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ নামে পরিচিত। এ নীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনে সাহায্য করবে, কিন্তু দ্বীপটির প্রতিরক্ষায় সরাসরি প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না।

এর আগে গত আগস্ট মাসে এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন। তালেবানের জয়ের মুখে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় প্রকৃত মিত্রদের সুরক্ষা দেবে, যার মধ্যে তাইওয়ান রয়েছে। বাইডেন বলেন, কানাডা ও ইউরোপে ন্যাটো মিত্রদের রক্ষা করার জন্য ‘পবিত্র প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই রকম প্রতিশ্রুতি রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের জন্যও। তবে হোয়াইট হাউস পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের বলেছিল যে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন নীতির পরিবর্তন হয়নি।

সিএনএনের টাউন হল অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তরে বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। নিজের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বাইডেন বলেন, তিনি চীনের সঙ্গে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করতে চান না। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমি শুধু চীনকে বোঝাতে চাই যে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না।’ তাইওয়ানের আকাশসীমায় চীনা যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশ নিয়ে তাইপে প্রায়ই অভিযোগ করে আসছে। তাইওয়ানের আকাশসীমায় ইতিমধ্যে পারমাণবিক সক্ষমতার বিমান পাঠিয়েছে চীন।

চীনের প্রতিক্রিয়া
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা নিয়ে বাইডেনের মন্তব্যের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমঝোতার কোনো জায়গা নেই। শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাইওয়ানের স্বাধীনতার সমর্থকদের কোনো ভুল সংকেত পাঠানো বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে। বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, চীনের মূল স্বার্থের ক্ষেত্রে ছাড়ের কোনো জায়গা নেই।

হাইপারসনিক অস্ত্রের মহড়া

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, চীন সম্প্রতি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের নিজস্ব হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরির জন্য ছুটছে। এএফপি জানিয়েছে, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতার পাল্লায় রাশিয়া ও চীনের পর এবার নাম লেখাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সফলভাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরীক্ষা চালানোর দাবি করা হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। স্থানীয় সময় গত বুধবার দেশটির ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে পরীক্ষাটি চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হাইপারসনিক প্রযুক্তির পরীক্ষার বিষয়টি জানিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী। বিবৃতিতে বলা হয়, নৌবাহিনীর নকশায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে এই পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাস্তবিক ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক হাইপারসনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতা কেমন হবে, তা দেখা গেছে। এদিকে ২০২৫ সালের মধ্যেই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের আশা করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা কার্যালয় পেন্টাগন। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।

গতানুগতিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বেশ উন্নত। শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, তাতে তা শনাক্ত করা ও ঠেকানো বেশ কঠিন। চলতি বছরের আগস্টে চীন পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়। তাদের তথ্যমতে, ওই ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণের পর ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। তবে সেটি নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারেনি। যদিও এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা নাকচ করেছে চীন।
বিজ্ঞাপন

চীনের ওই কর্মকাণ্ডের জের ধরে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মুখপাত্র রবার্ট উড। তিনি বলেন, রাশিয়ার কাছেও হাইপারসনিক প্রযুক্তি রয়েছে। এক পক্ষ এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করলে, অন্যান্য দেশও অন্তত নিজেদের প্রতিরক্ষার স্বার্থে একই প্রযুক্তি করায়ত্ত করতে চায়। এতে একধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য করেছিলেন রবার্ট উড।

২০১৯ সালে ডিএফ-১৭ নামের একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সামনে এনেছিল চীন। মাঝারি পাল্লার ওই ক্ষেপণাস্ত্র ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এ ছাড়া সেটি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বলেও জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি রাশিয়াও সাবমেরিন থেকে জারকন নামের একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ করে। পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকেই দেশটির হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ওই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে ২৭ গুণ গতিতে ছুড়তে পারে বলে দাবি করেছিল রাশিয়া।
উত্তরণবার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK