উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে মন্দায় থাকা মার্কেট ও বিপণিবিতানে বিক্রি বাড়িয়েছে দুর্গাপূজা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার রাজধানীর শপিং মলগুলোতে বিক্রি অনেক বেড়েছে। এত দিন সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকলেও গত দুই সপ্তাহে ভিড় বেড়েছে কয়েক গুণ। বেচাকেনাও বেড়েছে। তাতে ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা বলছেন, করোনার কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া ব্যবসায় গতি আনল দুর্গাপূজা। এবার পূজা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়। বিক্রিও ভালো হয়েছে। তবে গত বছর পূজায় বিক্রি একদম ছিল না। উৎসব পালনে এবার কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ না থাকায় মানুষ ইচ্ছামতো কেনাকাটা করেছে। দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ‘পূজায় বিক্রি বাড়লেও করোনায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আরো অনেক সময় লাগবে।’
বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটসহ ছোট-বড় বেশ কিছু মার্কেট ঘুরে জানা যায়, এবার পূজা উপলক্ষে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ বিক্রি বেড়েছে। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ের মতো পূজায় যে রকম বিক্রি হতো এবারও সে রকম বিক্রি হয়েছে। সাধারণত পূজার কেনাকাটার তালিকায় শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, জুতা ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বিক্রি হয়ে থাকে।
বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাগর পাল বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেই মা-বাবা ও পরিবারের সবার জন্য জামাকাপড় কেনা হয়েছে। এখন আমার নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনতে মার্কেটে এসেছি। গত বছর করোনার বিধি-নিষেধের কারণে তেমনভাবে কেনাকাটা করতে পারিনি। তাই এবার পরিবারের সবার জন্যই নতুন পোশাক কেনা হয়েছে।’
বসুন্ধরা শপিং মলে পোশাকের দোকান লুবনান ও রিচম্যানের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর আমরা বিক্রিই করতে পারিনি। সে তুলনায় এবার বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে পূজা উৎসবে যেমন বিক্রি হয়, ঠিক সেই রকম বিক্রি হয়েছে।’ সাইমা ফ্যাশনের ম্যানেজার মোরশেদ আলী বলেন, ‘আগে তেমন বেচাকেনা না থাকালেও পূজা উপলক্ষে মোটামুটি বেচাকেনা হয়েছে। এ উপলক্ষে এবার ব্যবসায়ীরা জামা-কাপড় বিক্রি করতে পেরেছেন।’
বসুন্ধরা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও অলংকার নিকেতনের এমডি এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘পূজা উপলক্ষে আমাদের ব্যবসায় গতি ফিরেছে। বসুন্ধরা শপিং মলের প্রতিটি দোকানদার ভালো বিক্রি করছেন। এভাবে চললে আমাদের ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’
পূজায় স্বর্ণালংকার বিক্রির হালহকিকত জানতে চাইলে অলংকার নিকেতনের এমডি বলেন, ‘এবার পূজা উপলক্ষে স্বর্ণালংকারও খুব ভালো বিক্রি হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কারণ, বেশির ভাগ মানুষ উৎসবকে ঘিরেই স্বর্ণালংকার কিনে থাকে।’বাড্ডার শাহজাদপুরের হাজি জমির উদ্দিন মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, পূজা উপলক্ষে এবার তাঁরা অনেক শাড়ি বিক্রি করতে পেরেছেন।
মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, পূজায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলোর মধ্যে মিষ্টি অন্যতম। যখনই কোনো উৎসব থাকে, বিক্রি বেড়ে যায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ। দুর্গাপূজায়ও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও অঞ্জনস ফ্যাশন হাউসের মালিক শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সারা বছর আমাদের মূলত দুটি ঈদ, বৈশাখ ও পূজা—এই চারটি বড় উৎসব ঘিরেই বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এবার পূজায় অন্যবারের তুলনায় অনেক ভালো বিক্রি হয়েছে। কারণ, এবার মানুষের মধ্যে অনেক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। এ কারণে এবার ৩০ শতাংশ বিক্রি বেশি হয়েছে।’
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, ‘আমাদের বিক্রিটা মূলত হয় বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে। তবে পূজায় আমাদের গিফট আইটেমগুলো বেশি চলে।’বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আস্তে আস্তে আমাদের ব্যবসা স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে করোনায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কাটিয়ে উঠতে আরো অনেক সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।
উত্তরণবার্তা/এআর