শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:৫২
ব্রেকিং নিউজ

চিনাদী বিলের পদ্মরাজ্য

চিনাদী বিলের পদ্মরাজ্য

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক :  শরৎকাল। চারদিকে কাশফুলের শুভ্রসমারোহ। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো বিছিয়ে দেয়া মেঘ। বিলে-ঝিলে শাপলা আর পদ্মের জয়জয়কার। একটু ইচ্ছে করলেই হাত দিয়ে কাশফুল ছোঁয়া যায়। শাপলাও দেখা যায়। কিন্তু গোলাপি-লাল-সাদা মায়ায় মেশানো পাতার ফাঁকে ফাঁকে গোখরোর মতো ফণা তোলা পদ্মফুলের দেখা পাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য। হৃদয় হরণকরা পদ্মের পবিত্র মায়া মেশানো এমনই এক রাজ্য চিনাদী বিল। ৫৫০ বিঘার বিশাল এলাকাজুড়ে এক মনোরম নৈসর্গিক পরিবেশ নিয়ে এই বিল। পদ্মফুল, চিল, পানকৌড়ি, সাদাবক, মাছরাঙা, বালিহাঁস, বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ, মাছ ধরার ছোট নৌকা, ডিঙি নৌকা, মাঝি, জেলে, সুস্বাদু মাছ আর গোধূলির অপার সৌন্দর্যের দেখা মিলবে এখানে।
 
বিল থেকে সদ্য উঠে আসা সতেজ আর্দ্র বাতাস প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। শরীর-মন জুড়িয়ে যায় নিমিষে। বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য পদ্মফুলের রাজ্য দেখতে চাইলে নৌকায় যেতে হবে বিলে। এখানে ছোট ডিঙি মাঝিসহ ভাড়ায় পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে নৌকা পাশ কেটে যায়—জেলেদের মাছ ধরা চোখে পড়ে। জীবন এখানে স্থবির অথচ সুন্দর সাবলীল। চিল পানিতে ছোঁ মেরে মাছ নিয়ে আকাশে উড়ে যায়। পানকৌড়ি ডুব দিয়ে হারিয়ে যায়, আবার ঠোঁটে মাছ নিয়ে ভেসে ওঠে। একদল বক আমাদের দেখে ভয়ে অদূরে কোথাও উড়ে গিয়ে বসে। সঙ্গে থাকা সঙ্গিনী আহ্লাদে আটখানা হয়ে নিটোল জলে পা ডোবায়। মোবাইলফোনে তুলে যায় অনর্গল ছবি। পদ্মফুল জড়িয়ে আমোদে আহ্লাদিত হয়, সেলফি তোলে। ভুবন বিজয়িনী মুক্তোঝরা হাসি বিলের স্বচ্ছ জলে প্রতিবিম্বিত হয়। বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি। কখনো তাকে দেখি, কখনো পদ্মফুল।
 
 
আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। আমাদের ভাগ্য ভালো, আমরা সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি পেয়েছি। তার বৃষ্টিতে ভিজতে বেজায় ভালো লাগে, আমি বৃষ্টি দেখতে ভালোবাসি। বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে আসা চিনাদী বিল অসাধারণ এক মুহূর্তের অবতারণা করে আমাদের সামনে। ভিজে যাওয়ার ভয় ছিল না। মাঝি ভাইয়ের বড় লম্বা পরিষ্কার পলিথিনে নিজেদের আপাদমস্তক ঢেকে নিয়েছি। বৃষ্টির খই ফোঁটা শব্দ আর ঠান্ডা পরশে অপার্থিব মায়াবনে হারিয়ে গিয়েছি। বৃষ্টি হচ্ছে অথচ মাঝি একমনে নৌকা বেয়ে চলেছেন। জেলেরা মাছ ধরছেন নিবিষ্ট চিত্তে। তাঁদের ভেজার ভয় নেই। কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই।
 
বৃষ্টি শেষ হলে প্রকৃতি আরও সতেজ হয়ে ওঠে। পদ্মপাতায় বৃষ্টির কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। বৃষ্টিতে ভিজে পদ্মফুল আরো প্রান্তবন্ত হয়। ইচ্ছে করে সব পদ্মফুল তুলে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। পদ্মবীজ খেয়েও দেখেছি, কেমন। পদ্মবনে এভাবেই হারিয়ে যেতে যেতে চলে আসে গোধূলিবেলা। শরতের সূর্য অস্তাচলে। চিনাদী বিলের স্বচ্ছ-নিটোল পানি আবির রং মেখেছে। এবার নীড়ে ফেরার পালা। পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে নিজ নিজ আবাসস্থলে। চিনাদী থেকে পদ্মরাজ্যের একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে এই বিল। ঢাকা থেকে গিয়ে নামতে হবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ইটাখোলা বাসস্ট্যান্ডে। ইটাখোলা থেকে অটোরিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সোজা চিনাদী বিল।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK