শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২২:৪২
ব্রেকিং নিউজ

পৃথিবীর জলভাগের সবচেয়ে দুর্গম স্থান পয়েন্ট নেমো

পৃথিবীর জলভাগের সবচেয়ে দুর্গম স্থান পয়েন্ট নেমো

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়ে থাকা মহাসাগরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো প্রশান্ত মহাসাগর। এ মহাসাগর পৃথিবীর এতোটা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত যে, নিজের অ্যান্টিপও নিজেই ধারণ করে। তারমানে পৃথিবীর এক প্রান্তের কেন্দ্র থেকে যদি একটি গর্ত করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে এসে সেই গর্ত শেষ হয় তবু দেখা যাবে প্রশান্ত মহাসাগরেই আছেন আপনি।
 
মহাসাগরের জলের ভেতরেই আছে অনেক অদ্ভুত জায়গার অবস্থানও। একটি স্থানের নাম পয়েন্ট নেমো। এ স্থান পৃথিবীর জলভাগের সবচেয়ে দুর্গম স্থানগুলোর একটি। এতোটাই দুর্গম যে, এই স্থানের কাছাকাছি যখন কোন মানুষ যায়, তখন তারা হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারী। তাও আবার ৪০০ কিলোমিটার দূরে। আবার এ প্রশান্ত মহাসাগরেই আছে পৃথিবীর বা সমুদ্রের সবচেয়ে গভীর স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ বা চ্যালেঞ্জার ডিপ।
 
অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে যেতে পেরেছে। কিন্তু ১১ কিলোমিটার গভীরে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে যেতে পেরেছেন মাত্র কয়েকজন। পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর এ মহাসাগর যেখানে গভীরে সূর্যের আলো পৌঁছাতেই পারে না, সেই সমুদ্রের নিচে আবাস প্রায় ২ প্রজাতির হাজার প্রাণীর।
 
এই জলের আধারে অনেক প্রাণির আবাসস্থল। এরমধ্যে চমকপ্রদ এক প্রাণী স্নেইলফিশ। বিজ্ঞানীরা এ প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। প্যাসিফিকের ভৌগলিক অবস্থানও বেশ চমৎকার। একা এই মহাসাগরই অন্তত ২৫ হাজার দ্বীপের আবাস রয়েছে। প্লেট টেকটনিকের কারণে প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিবছর ১ ইঞ্চি করে নেমে যাচ্ছে।
 
অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগর প্রতি বছরে ১ ইঞ্চি করে বাড়ছে। প্যাসিফিক মহাসাগরে বিপজ্জনক একটি অঞ্চল আছে, যেটাকে বলা হয় রিং অব ফায়ার। ৪০ হাজার কিলোমিটারের এ অঞ্চলে পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ স্বক্রিয় আগ্নেয়গিরির অবস্থান। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এখনো হয় পানির নিচেই। কোন কোন স্থানে পানির তাপমাত্রা পৌঁছায় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।
 
প্রশান্ত মহাসাগর এমনভাবেই বিস্তৃত যে, সব ঋতুই ছুঁয়ে যায় এ মহাসাগরকে। এ মহাসাগরের দক্ষিণ আর উত্তর অংশের পানি বেশিরভাগ সময় বরফ হয়ে থাকে। কোন কোন স্থানে এ মহাসাগররে পানি উষ্ণ থাকে, উপকূলীয় এলাকার মানুষকে জীবিকার জন্য সহযোগিতা করে।
 
ভিন্ন স্বভাব আর বৈশিষ্ট্যের অনেক প্রাণী প্রশান্ত মহাসাগরের পানির নিচে থাকে। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ প্রশান্ত মহাসাগরেই অবস্থিত, বিশ্বের বৃহত্তম এ কোরালের সারি মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। এ মহাসাগর বিশ্বের ১০ শতাংশ ভিন্ন প্রজাতির মাছের আবাস। এ মহাসাগরে কিছু কোরাল আছে, যেগুলোর বয়স ২ কোটি বছর। বলতেই হয়, পুরো গ্রহের জীবন জীবিকা এ মহাসাগরের বাস্তুসংস্থানের ওপর নির্ভরশীল। এই গ্রহের ৭০ শতাংশ অক্সিজেন প্রশান্ত মহাসাগরের জলজ উদ্ভিদ তৈরি করে।
 
জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশ দূষণরে কারণে এ প্রশান্ত মহাসাগরের বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের মুখে। গত ৫০ বছরে প্রশান্ত মহাসাগররে দূষণ ১০০ গুণ বেড়ে গেছে। টনের পর টন প্লাস্টিক ভাসছে এই মহাসাগরের পানিতে। এই মহাসাগরের পানি দূষিত হচ্ছে জ্বালানি তেল, আবর্জনা এমনকি স্যাটেলাইট বিধ্বস্ত হওয়ার বর্জ্য দিয়েও। প্রশান্ত মহাসাগরের জৌলুস ফিরিয়ে দিতে সতর্ক হতে হবে পৃথিবীর মানুষকেই।
উত্তরণবার্তা/সাব্বির
 
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ