শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ২২:৫১
ব্রেকিং নিউজ

জানা–অজানা : গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি কি আসলেই তিন সেকেন্ডের?

জানা–অজানা : গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি কি আসলেই তিন সেকেন্ডের?

উত্তরণ বার্তা অন্যান্য ডেস্ক : অ্যাকুয়ারিয়াম মানেই যেন গোল্ডফিশ। ওদের দিকে তাকালে মন ভালো না হয়ে উপায় কী! আদরের পোষ্য তালিকায় ওদের নাম থাকবে ওপরের দিকেই। বর্ণিল, প্রাণবন্ত, সস্তাও বটে—কাজেই জনপ্রিয় হওয়ার সব যোগ্যতা আছে এই গোল্ডফিশের। তবে একটা ‘অপবাদ’ও আছে ওদের নামে। অপবাদ না বলে বৈশিষ্ট্য বলাই যুক্তিযুক্ত হবে হয়তো। বৈশিষ্ট্যটা হলো ওদের স্মৃতিশক্তি নাকি মোটে তিন সেকেন্ডের। এটাকে পৃথিবীর অন্যতম প্রচলিত এক তথ্য বললে মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না। কোনো মানুষ বা গোষ্ঠীর স্মৃতিশক্তি কমজোরি হলে বলা হয় গোল্ডফিশ মেমোরি। আসলেই কি গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি তিন সেকেন্ডের?
প্রথম কথা হলো এ তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবু বছরের পর বছর ধরে মাছটির স্মৃতিশক্তিবিষয়ক এ তথ্য অনেকেই বিশ্বাস করেন। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুয়ারি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মৎস্য বিশেষজ্ঞ কালাম ব্রাউন বলেন, ‘এ বিভ্রান্তিটা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় মোটামুটি একই। কোথাও হয়তো বলা হয় গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি দুই সেকেন্ডের, আবার কোথাও বলা হয় ১০ সেকেন্ডের। তবে সেটা সব সময় স্বল্পই হয়ে থাকে।’
বাস্তবে গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি আরও দীর্ঘমেয়াদি। যা সপ্তাহ, মাস, এমনকি বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে। আর এর পেছনে বিজ্ঞানের যুক্তি ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে একই। ব্রাউন বলেন, ‘গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি যে ভালো, তা আমরা পঞ্চাশ–ষাটের দশক থেকেই জানি। মানুষ যা–ই বলুক না কেন, গোল্ডফিশরা বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন।’
অধ্যাপক ব্রাউন গোল্ডফিশসহ নানান মাছের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন। তিনি মনে করেন, এই যে ভুল ধারণাগুলো আমরা পোষণ করি, তার মূলে আছে মাছের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে অবহেলা এবং তাদের ছোট ছোট ট্যাংকে বা পাত্রে রাখা।
গোল্ডফিশসহ আরও অনেক মাছের ওপর বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তি নিয়ে অসংখ্য গবেষণা করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, মনে রাখা এবং শেখার জন্য মাছ সাধারণ এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। ব্রাউন বলেন, এসব গবেষণা থেকেই জানা গেছে, গোল্ডফিশের আছে চমৎকার স্মৃতিশক্তি।
দেখা গেছে, ট্যাংকের কোনো এক পাশ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে যদি নিয়মিত খাবার দেয়া হয়, তাহলে গোল্ডফিশ ঠিক সে পাশেই খাবার খেতে চলে আসে। আরেকটা পরীক্ষার কথাও বলা যায় এখানে। পানির ট্যাংকে দুই রঙের দুটি ছোট বল রাখা হয়। এখন নির্দিষ্ট একটি বলে আঘাত করার পর গোল্ডফিশকে যদি খাবার দেয়া হয় এবং অন্য বলটি আঘাত করলে যদি খাবার না দেয়া হয়, তাহলে কী হয়? গবেষকেরা দেখেছেন, এমনটা করলে গোল্ডফিশ তা পরের বারের জন্য মনে রাখে। এমনকি তা দীর্ঘ সময় পরও মনে রাখতে সক্ষম ওরা। ব্রাউন বলেন, একইভাবে পানির বুদ্‌বুদ এবং সুরের মাধ্যমেও পরীক্ষাটা করে দেখা হয়েছে।
গোল্ডফিশ সমস্যার সমাধানও করতে পারে। অধ্যাপক ব্রাউন জানিয়েছেন, গোল্ডফিশদের জাল এবং গোলকধাঁধার মতো পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসা শেখানো হয়েছিল। আর ওরা কৌশলগুলো সপ্তাহ, এমনকি মাসের পর মাসও মনে রাখতে পেরেছে।
শুধু যে গবেষণা থেকে গোল্ডফিশের বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়, ব্যাপারটা এমন নয়। যাঁরা গোল্ডফিশ পুষেছেন, তাঁদের কাছ থেকেও কিছু বিষয় জানা গেছে।যেমন যিনি মাছ পালন করছেন, তাঁকে অন্যদের থেকে ভালোভাবে চিনতে পারে গোল্ডফিশ।
তবে গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি ঠিক কতটা সময় ধরে থাকে, তা বলা কঠিন। তা সপ্তাহ, মাস, বছরও হতে পারে। তবে এটা অন্তত নিশ্চিত যে গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি শুধু তিন সেকেন্ডের নয়। গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও ওদের আয়ু নিয়ে সন্দেহ নেই। ঠিকভাবে যত্ন নিলে গোল্ডফিশ অ্যাকুয়ারিয়ামে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। প্রাকৃতিক জলাশয়ে থাকলে ওদের আয়ু ৪০ বছর পর্যন্ত গড়ায়!
গোল্ডফিশের দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতার জন্য বড় শর্ত হলো ওদের পাত্রটা যেন ছোট না হয়। ছোটাছুটি করার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে, এমন পাত্রই ওদের জন্য জুতসই। কেবল গোল্ডফিশ নয়, সব পোষা মাছের বেলায়ই এটা মেনে চলা ভালো।
মাছদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে অনেকেই উদাসীন থাকেন। ঘরের কুকুর বা বিড়ালের সঙ্গে যেমন সময় দেয়া হয় বা কথা বলা হয়, সে রকম মাছের সঙ্গে করা হয় না। এ কারণে মাছ সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকেই যায়। তাই আপনার মাছকে আরও সময় দিন।
গোল্ডফিশ রাখার পাত্রে ছোটখাটো খেলনা রাখা জরুরি। এতে ওরা আরও ভালো থাকে। এটা অনেকটা আমাদের শরীরচর্চার মতো বলতে পারেন। শরীরচর্চায় শরীর তো বটেই, মাছের ‘মন’ও ভালো থাকে। মন যারা ভালো রাখে, তাদের মন ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
উত্তরণ বার্তা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK