রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৫:১০
ব্রেকিং নিউজ

বিশ্বের যেখানে শরীরে ফোস্কা পরার মতো গরম

বিশ্বের যেখানে শরীরে ফোস্কা পরার মতো গরম

উত্তরণ বার্তা তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ক্যালিফোর্নিয়ার ডেড ভ্যালিকে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গা হিসেবে অভিহিত করে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হয়। বিস্তীর্ণ মরুভূমির এই এলাকার তাপমাত্রা ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৩৪.১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছোঁয়ার রেকর্ড রয়েছে। ডেল ভ্যালিতে গ্রীষ্মকালের ভয়াবহ গরম সহ্য করেও কয়েক শ মানুষের বসবাস রয়েছে।

তবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সম্পর্কিত নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইরানের লুত (দাস্ত-ই-লুত) এবং উত্তর আমেরিকার সনোরাল অঞ্চলের তাপমাত্রা আরো বেশি চরম। গত দুই দশকের উচ্চ রেজ্যুলেশনের স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই দুই মরুভূমি এলাকার তাপমাত্রা মাঝে মধ্যে ৮০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৭৭.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়েছে।

বিজ্ঞানীদের কাছে, লুত মরুভূমি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গা হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ২০০২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এলাকাটির তাপমাত্রা নিয়মিত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এলাকাটি পাহাড়ে ভরা, যার কারণে গরম বাতাসকে আটকে থাকে। প্রায় ২০০ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত লুত মরুভূমি, এখানকার তাপমাত্রা শরীরে ফোস্কা পরার মতো গরম।

নতুন গবেষণাটি পূর্ববর্তী একটি গবেষণাকে সমর্থন করছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছিল যে, লুত মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। আগের গবেষণায় সর্বোচ্চ ৭০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৫৯.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করে লুত মরুভূমিকে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। তবে নতুন গবেষণাপত্রের লেখকরা বলছেন, সম্ভবত তা যর্থাথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

প্রথম গবেষণাটির পরে, নাসা তাদের স্যাটেলাইট সফটওয়্যারের নতুন ভার্সন প্রকাশ করে এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরো ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়। নাসার নতুন সফটওয়্যারের ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলেছেন, লুত মরুভূমির তাপমাত্রা আগের ধারণার চেয়ে আসলে আরো ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

অপরদিকে, সোনোরান মরুভূমি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর সীমানা চিহ্নিত করে, সেটিও একই ধরনের চরম তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারে। কিন্তু তা লুত মরুভূমির মতো ঘন ঘন নয়।

জলবায়ু পরিবর্তন এই চরম তাপমাত্রার ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রেখেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লা নিনোর সময়েও সবচেয়ে উষ্ণতম দিনগুলো রেকর্ড করেছে স্যাটেলাইট। গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতের গবেষণাগুলো কেবল অতীতে কীভাবে আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন ঘটেছে তা নিয়ে নয় বরং বিষয়টি ভবিষ্যতে কীভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে সেদিকেও আলোকপাত করবে।

নতুন গবেষণায় পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চল খোঁজার পাশাপাশি সবচেয়ে শীতলতম অঞ্চলও শনাক্ত করা হয়েছে। শীতলতম স্থানের দখল স্বাভাবিকভাবেই জিতে নিয়েছে অ্যান্টার্কটিকা মাইনাস ১১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ১৯৯.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা নিয়ে, যা আগের ধারণার তুলনায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

বর্তমান সময়ে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা নির্ধারণের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণাপত্রটি আমেরিকান মেটিরিওলজিক্যাল সোসাইটির বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে।
উত্তরণ বার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK