শনিবার, ২২ জুন ২০২৪, ৮ আষাঢ় ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৬:২৮

নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরে চীনের প্রধানমন্ত্রী

নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরে চীনের প্রধানমন্ত্রী

উত্তরণবার্তা ডেস্ক : বাণিজ্য এবং ‘বন্ধুত্বের’ প্রতি গুরুত্বারোপের কথা বলে উল্লেখ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু করেছেন। উভয় স্বাগতিক দেশের প্রশান্ত মহাসাগরে বেইজিংয়ের প্রভাবের সাথে লড়াইয়ের মধ্যে লি কিয়াংয়ে এটি একটি বিরল সফর।

চীনের রাজনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা  লি ২০১৭ সাল থেকে উভয় দেশেই (নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া) সরকারি সফরে আগত সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তিত্ব। ছয় দিনের সফরে লি পাঁচটি ভিন্ন শহরে পা রাখবেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন, ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে আলোচনা করবেন এবং চীনের ট্রেডমার্ক  ‘পান্ডা কূটনীতিতে’ নিয়োজিত হবেন।

পান্ডা কূটনীতি বলতে বন্ধুত্ব, শুভেচ্ছার প্রতীক বা কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য চীনা সরকারের অন্যান্য দেশকে দৈত্য পান্ডাদের উপহার বা ঋণ দেওয়ার অনুশীলনকে বোঝায়। নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে তার মোটরযান পৌঁছানোর সাথে সাথে উল্লসিত জনতা সমর্থকরা ড্রাম বাজিয়ে এবং ব্যানার নেড়ে লিকে অভ্যর্থনা জানায়।এ সময় চীন বিরোধী বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট দল তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

ওয়েলিংটনে পৌঁছানোর পরপরই লি চীনের সাথে ব্যবসা করার ফলে যে ‘কার্যকর সাফল্য অর্জিত’ হয়েছে তা তুলে ধরে একটি বিবৃতি দেন। লি কিয়াং নিউজিল্যান্ডের সাথে চীনের ‘ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব’ নবায়নের  লক্ষ্যে বাণিজ্য, পর্যটন এবং বিনিয়োগকে শক্তিশালী করার সুযোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

লির পূর্বসূরির এই দেশগুলো সফরের সাত বছরে উভয় স্বাগতিকদের সাথে চীনের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে  দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চলে চীনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসাবে দেখা হয়। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বেইজিংয়ের ভূমিকার সমালোচনায় দেশটি ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠেছে।

এদিকে, চীনের সম্প্রসারিত সামরিক শক্তির প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।কিন্তু একটি ধ্রুবক রয়ে গেছে: চীন এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিওফ্রে মিলার এএফপি’কে বলেছেন, লির- সফর একটি সুস্পস্ট বা বোধগম্য বার্তা বহন করে না: ‘সবকিছু ঝুঁকিতে ফেলবেন না।’

নিউজিল্যান্ড ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ক্যানবেরার মধ্যে এইউকেইউএস নিরাপত্তা চুক্তিতে সীমিত ভূমিকা পালন করবে কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এই চুক্তিকে চীনের সামরিক সম্প্রসারণ মোকাবেলা করার চাবিকাঠি হিসাবে দেখা হয়।একই সময়ে, পররাষ্ট্রন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে তার নিরাপত্তা পদচিহ্নকে শক্তিশালী করার জন্য চীনের প্রচেষ্টার কথা বলেছেন।

ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির মিলার বলেছেন, লি এই অবস্থানকে নরম করার প্রয়াসে কাউকে পুরষ্কারের প্রস্তাব দিয়ে কিছু করতে রাজি করার চেষ্টা ‘গাজর’ বাণিজ্যের আশ্বাস দেবেন।তিনি বলেন, বেইজিং সম্ভবত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে এইউকেইউএস-এ যোগ দিতে সম্মত হলে নিউজিল্যান্ড ‘কী হারাতে পারে’ সেটা দেখানোর জন্য প্রণোদনা দেবে।‘চীন সচেতন যে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাই সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডকে প্রভাবিত করার সুযোগ রয়েছে।’

নিউজিল্যান্ড বেইজিংয়ের সাথে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম উন্নত দেশগুলির মধ্যে একটি এবং আজ তার পণ্য রপ্তানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ চীনে পাঠানো হয়।চীনা ভোক্তাদের বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের প্রিমিয়ম মাংস, দুগ্ধ এবং ওয়াইনের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে।লি শনিবার সকালে নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যিক কেন্দ্র অকল্যান্ড থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার শহর অ্যাডিলেডের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবেন।

বিখ্যাত বারোসা ওয়াইনমেকিং অঞ্চলের দোরগোড়ায় বসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের নিজ শহর অ্যাডিলেড হলে বৈঠক করবেন। পেনি ওংয়ের ক্যানবেরা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে সাহায্য করার জন্য স্বীকৃত। একটি বিদ্বেষপূর্ণ এবং বছরব্যাপী বাণিজ্য বিরোধে বেশ কিছু পণ্যের মধ্যে অস্ট্রেলীয় ওয়াইন যা চীন থেকে কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। সেই বিরোধ সম্প্রতি কমতে শুরু করেছে।

ওয়াইন, কয়লা, কাঠ, বার্লি এবং গরুর মাংস রপ্তানি অনেকাংশে পুনরায় শুরু হলেও অস্ট্রেলিয়ান রক লবস্টারের জন্য বাণিজ্য বাধা রয়ে গেছে।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK