শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১০:৩০
ব্রেকিং নিউজ

আজ সেই ভয়াল কালরাত

আজ সেই ভয়াল কালরাত

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা ২৫ মার্চে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, বীভৎস, ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এ রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতা গণহত্যায়, যা কালরাত হিসেবে পরিচিত। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ঐ দিন থেকেই দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পাকিস্তানি বাহিনীর যে নির্মমতার শিকার হয়েছিল বাংলার মানুষ, এক মিনিটের জন্য বাতি নিভিয়ে সেই কালরাত স্মরণ করবে বাংলাদেশ। সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, আজ সোমবার রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক-আউট’ পালন করা হবে। এ সময় সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় কোনো আলোকসজ্জা করা যাবে না। কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনাগুলো ব্ল্যাকআউটের আওতামুক্ত থাকবে।  

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে সব ধরনের বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল তাদের অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হয় রাতের বাতাস। ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল অর্ধলক্ষাধিক বাঙালিকে।

পাকিস্তানি হানাদাররা সেই রাতে অগ্নিসংযোগ, মর্টার শেল ছুড়ে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীকেও।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। মুক্তিকামী বাঙালি তখন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বেলিত। আলোচনার নামে শাসকগোষ্ঠীর সময়ক্ষেপণকে বাঙালিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

২৫ মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে এক দল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেওয়া হয়। এ সময় বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। অবশ্য গ্রেফতার হওয়ার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। এরপর ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতা ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

কর্মসূচি :গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে ২৫ মার্চের সেই কালরাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার বীর বাঙালিদের। রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কালরাত্রি’ স্মরণে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ দুপুর ২টায় ২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে এদিনে গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
উত্তরণবার্তা/এআর


 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ