রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৯:৩৮

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপস বন্ধের পরামর্শ

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপস বন্ধের পরামর্শ

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক  :  কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপস বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, টিকটক ও লাইকির মতো এমন অনেক অ্যাপস আছে যা উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে এসব বিতর্কিত অ্যাপস প্রয়োজনে বন্ধ করা যেতে পারে। ঢাকা শহরে শিশুদের উপযুক্ত খেলার মাঠ, সুস্থ বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কম, যে কারণে শিশুরা অসুস্থ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আসক্ত হচ্ছে।

২৩ মার্চ শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরোক্ষ প্রভাব থাকলেও সরাসরি কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মিরপুরে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিশোর অপরাধে জড়িত মদদদাতাদেরও তালিকা তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও আইন প্রয়োগে সেটা বড় কোনো সমস্যা হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতাকে বেশি উস্কে দিচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, লাইকি, ইমু, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদুসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কিশোর অপরাধের মাত্রাকে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে মদদ দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করছে। স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি, চাঁদাবাজি, মিছিল—মিটিং, দখলবাজি-দলবাজি ইত্যাদি কাজে যাতে শিশু কিশোরদের ব্যবহার করা না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে রাজনৈতিক উচ্চপর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে সদিচ্ছা পোষণ জরুরি। প্রচলিত শিশু আইনে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল মনে হলে প্রয়োজনে তা সংস্কার করা যেতে পারে।

এ সময় কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান দশ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন:

১) কিশোর অপরাধ রোধে রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে সদিচ্ছা প্রদান করা ২) প্রচলিত শিশু আইনে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল মনে হলে প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করা। ৩) সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন অনুযায়ী বিতর্কিত অ্যাপসগুলো বন্ধ করতে বিটিআরসিকে উদ্যোগ গ্রহণ করা। রাত ১০ টার পর অতি জরুরী নয় এ ধরণের অ্যাপসগুলো বন্ধ রাখা ৪) স্কুল কলেজগুলোতে পাঠ দানে বৈচিত্রতা তৈরি করে শিশু কিশোরদের আরও বেশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা। এলাকাভিত্তিক পাঠাগার, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিনোদন ব্যবস্থা করা ৫) পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ৬) সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সিটিজেন মনিটরিং কমিটি গঠন করা ৭) আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা ৮) সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে কাউন্সেলিং গাইডলাইন প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়ন করা ৯) সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের ভূমিকা বাড়ানোর লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ করা ১০) কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রগুলি আধুনিকায়ন করে সেখানে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা।

‘সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ ব্যবহারের কারণে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিতার্কিকদের পরাজিত করে সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. রাশেদা রওনক খান, সাংবাদিক এস এম ফয়েজ, সাংবাদিক মাসুদা লাবনী এবং সাংবাদিক জুমাতুল বিদা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ