উত্তরণবার্তা প্রতিবেদন : বাংলাদেশ পুলিশের রেডিও ডিভাইস ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদন সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্বরষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। গত ৩ মার্চ দেওয়া এ আদেশের অনুলিপি সম্প্রতি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
আদালতে রিটকারী প্রতিষ্ঠান হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিন্টু কুমার মন্ডল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২ আগস্ট ২০২৩ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ টেলিকম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের বেতার যোগাযোগ সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দুইটি দরপত্র আহ্বান করে [যার আন্তর্জাতিক দরপত্র নং : ৪৪.০১.০০০০.০৫৭.১১.০০৫.২৩/১২৬/বেতার, তারিখ : ০২/০৮/২০২৩ খ্রি. এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র নং : ৪৪.০১.০০০০.০৫৭.১১.০০৭.২৩/১২৯/বেতার, তারিখ : ০৩/০৮/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ]। এই আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৩টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউকেন্স এন্ড ইলেট্রোনিক্স পিটিআই লিমিটেড, চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড এবং চীনের কালটা টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড। স্যাম্পলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইপূর্বক ১৬ অক্টোবর পণ্য ডেমোনোস্ট্রেশনের জন্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। স্যাম্পল টেস্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড ১১ জন বিদেশি এক্সপাট; টেকনিক্স কমিউনিকেশন একজন এবং ক্যালটা টেকনোলজিস ৮ জন বিদেশী এক্সপার্ট আনে। হাইটেরাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্যাম্পল এবং ফিল্ড টেস্টের জন্য তাদের নিজ খরচায় টেকনিশিয়ান আনতে হয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা, যেমনÑ ফ্লাইট টিকিট, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, খাবার ইত্যাদি সম্পূর্ণ ব্যয়ভার প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করতে হয়েছে।
এডভোকেট মিন্টু কুমার মণ্ডল জানান, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড জানিয়েছে, পুলিশ টেলিকম সংস্থা একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি তথাকথিত সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউকেন্স এন্ড ইলেট্রোনিক্স পিটিআই লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সর্বশেষ দরপত্রের তাদের সরবরাহকৃত পণ্য স্যাম্পল পরীক্ষায় বাদ পড়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর যাবৎ এমডিএম ট্রেডার্স এককভাবে টেন্ডার পাচ্ছেন এবং রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করছে। এমনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া আহ্বান করা হতো যেখানে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারত না। ২০১৫ থেকে ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ টেলিকম সংস্থার রেডিও ডিভাইস ক্রয়ের ৪১টি টেন্ডারের এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডই পেয়েছে ৪০টি। গত বছর ২০২৩ সালে চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকার একটি কার্যাদেশ পেয়েছে। ৯ বছরে টেকনিক্স কমিউকেন্স কাজ পেয়েছে প্রায় ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিস্ময়করভাবে গত দুই অর্থবছরে পুলিশ টেলিকম সংস্থা প্রায় ২২১ কোটি টাকার রেডিও ডিভাইস ক্রয় করেছে।
পরে আদেশের বিষযে মিন্টু কুমার মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ টেলিকম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের রেডিও ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্র অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ করতে না পারায় শুধু হাইটেরা কমিউনিকেশন্স টিকে থাকে। এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগার কথা থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ দিনেও দরপত্র নিষ্পত্তি করা হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হাইটেরা কমিউনিকেশন্সের চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ টেলিকম সংস্থা একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি তথাকথিত সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউকেন্স এন্ড ইলেট্রোনিক্স পিটিআই লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সর্বশেষ দরপত্রের তাদের সরবরাহকৃত পণ্য স্যাম্পল পরীক্ষায় বাদ পড়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর যাবৎ এমডিএম ট্রেডার্স এককভাবে টেন্ডার পাচ্ছেন এবং রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করছে। এমনভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া আহ্বান করা হতো যেখানে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারত না। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ টেলিকম সংস্থার রেডিও ডিভাইস ক্রয়ের ৪১টি টেন্ডারের এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডই পেয়েছে ৪০টি।
হাইটেরা কমিউনিকেশন্স করপোরেশন লিমিটেড জানিয়েছে সর্বশেষ ২০২৩ সালে টেকনিক্স কমিউকেশন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড নৌবাহিনীর একটি টেন্ডারের অনিয়ম করায় তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে কালো তালিকাভুক্ত করার চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেডিও ডিভাইস বাংলাদেশের নিরাপত্তার যোগাযোগের অন্যতম রাষ্ট্রীয় মাধ্যম। এখানে মানহীন পণ্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
উত্তরণবার্তা/আএ