বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০১:৪১
ব্রেকিং নিউজ

৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে সিরাজগঞ্জের দুই শিল্পাঞ্চলে

৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে সিরাজগঞ্জের দুই শিল্পাঞ্চলে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : নিজ এলাকাতেই গড়ে উঠছে কর্মের সু ব্যবস্থা। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে শিল্পে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে যমুনার পারে গড়ে উঠেছে সুবিশাল ২টি শিল্পাঞ্চল। এর একটি বেসরকারি ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক’ জোন ও অপরটি সরকারি ‘বিসিক শিল্প পার্ক’। এতে জল, স্থল, রেলপথে উৎপাদিত পণ্য ও কাচাঁমাল আনা-নেয়ায় সহজ ব্যবস্থা বিদ্যামান থাকায় ইতিমধ্যেই অষ্টোলিয়া, কোরিয়া, চিন, ভারত সহ দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে ইকোনমিক জোনে ২৩টি ভাড়ী শিল্প কারখানা করতে দেশের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপগুলো প্লট বরাদ্ধ নিয়েছে।

এদিকে এই দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে বলে কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হবে কারখানা স্থাপনের কাজ।সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর ও নতুন সরকার গঠন হওয়ায় বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি টিম যমুনা পাড়ের সম্ভবনাময় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫ লাখ ও সরকারি বিসিক শিল্পপার্কে ২ লাখসহ মোট ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হলে উত্তরবঙ্গে বাড়বে সামগ্রীক অর্থনৈতিক অগ্রগতি।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু ও যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন। রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাগুলোর উপর উত্তরাঞ্চলের মানুষের চাপ কমাতে ঘরের কাছেই বিশেষ কর্মের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের শিল্প উদ্যোক্তা জাবির সিনেটর শেখ মনোয়ার হোসেন।

পরে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর সহযোগীতায় শুরু হয় এর কাজ। দেশের শীর্ষ ১১টি শিল্পগোষ্টির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এর পুরো নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ এর জন্য সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নে খাসবড়শিমুল, পঞ্চসোনা, চকবয়রা এবং বেলকুচি উপজেলার বেলছুটি ও বড়বেরা খারুয়া মৌজার ১০৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পুরো নির্মাণ কাজ। তখন হতে শুরু হওয়া এ মাটি ভরাট কাজ এখন ৮০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে। এছাড়া সয়দাবাদ হতে ইকোনমিক জোন ফটক হয়ে ২৭শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে, বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণ, গ্যাস সংযোগের অনুমোদন, নিরাপত্তা প্রাচীরের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রতিষ্ঠিত ১৩টি গ্রুপ ২৩টি ভাড়ী শিল্প কারখানা গড়তে ১১০ এক জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে। তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এখানে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে অর্থনৈতিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান।

তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলে শিল্প পরিচালনায় দক্ষ শ্রমিক থাকায় সহজতর হবে ইকোনমিক জোনে উৎপাদন। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সয়দাবাদে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) তৈরির প্রক্রিয়া রয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়ক দিয়ে যেমন সারাদেশের সাথে সহজ যোযোগাযোগসহ নদী পথে চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াত ও রেলপথে এশিয় আঞ্চলিক দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনে ব্যবস্থা থাকায় সব দিক বিবেচনা করে চিন, জাপান, কোরিয়া অষ্টোলিয়া, ভারত, জার্মানসহ দেশী-বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী এখানে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী। আশা করছি, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সিরাজগঞ্জের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে, উত্তরবঙ্গের মানুষের আয়বৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখতে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড়ে মহাসড়কের উত্তরপাশে কালিয়া হরিপুর ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের ৪০০ একর জায়গায় ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠেছে সরকারের বিসিক শিল্প পার্ক। ‘সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক’ নামে এ শিল্পাঞ্চলে ৮২৯টি কারখানা গড়তে এখন পুরো প্রস্তুত। আগামী জুনের পর কারখানাগুলো স্থাপন হলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বললেন প্রকল্পের পরিচালক জাফর বায়েজিদ। তিনি জানান, খুব শিগ্রহ আমরা প্লট বরাদ্দ দেব। আশা করছি, এখানে ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সিরাজগঞ্জে ২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জেলাবাসী বেশ আশাবাদী। ঘরের কাছে কর্মের ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা বাড়বে। কর্মের নতুন ক্ষেত্র ও অর্থনীতিক বিকেন্দ্রীকরণে দেশের মধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি অন্যতম ভূমিকা রাখবে বললে আশাবাদি সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের এমপি ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনি জানান, শিল্প ব্যবস্থপনা ও পরিচালনায় অভিজ্ঞ সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য স্বপ্ন দুয়ার হচ্ছে এ শিল্পাঞ্চল দুটি। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আমাদের জন্য আশির্বাদ।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK