মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ০৭:৫০

মানবতাবিরোধী আরো একটি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

মানবতাবিরোধী আরো একটি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত অপহরণ, হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনা মামলায় ঠাকুরগাঁওয়ের আবেদ হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
 
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান  বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
 
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) রাষ্ট্রপক্ষে মোট নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে আসামিপক্ষেও একজন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। বিচারের শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে মামলাটি রায়ের জন্য রাখা হবে।
 
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে এ মামলার তদন্ত শুরু করে ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট শেষ করা হয়। ওইদিন আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আসামি আবেদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন মে থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসিকিউটর জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানার বোবড়া এলাকার আবু তৈয়বের ছেলে আবেদ হোসেন। তাকে ২০১৯ সালের ২৫ জুন গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপহরণ, হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।
 
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মে মাসের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার আধারিদিঘীর পাড়ে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকার আবেদ হোসেনসহ অন্য রাজাকাররা আধারদিঘীর পার্শ্ববর্তী বোবড়া ও অন্য গ্রাম থেকে সাতজন নিরীহ লোককে আটক করে ব্যাংকার তৈরির কাজে শ্রমসাধ্য মাটি খননের কাজ করায়। ব্যাংকার তৈরির কাজে যেতে না চাইলে তখন আসামি আবেদ হোসেন ও তার সহযোগীরা কাজে যেতে বাধ্য করতো।
 
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজখবর দিয়ে সহায়তার কারণে পবেদ আলী, দুমপেল ও মজনুকে ধরে নিয়ে তীরনই নদীর পাড়ে গুলি করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় পবেদ আলী হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হলেও বাকি দু’জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, আহত পবেদ আলীকে আবার ধরে নিয়ে তীরনই নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়। পরে পবেদ আলীর মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। 
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারশেষে প্রায় অর্ধশত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আরো বেশকটি মামলার বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর ছয় আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। তারা হলেন-জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মোহাম্মদ কামারুজ্জান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। চূড়ান্ত রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাজা ভোগকরাকালীন ইন্তেকাল করেন। আপিল বিভাগে আরো বেশকটি আপিল মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে এটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়।
উত্তরণবার্তা/এসএ
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ