শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৩:২২

জাপার সঙ্গে জোট করবেন না, প্রধানমন্ত্রীকে রওশন

জাপার সঙ্গে জোট করবেন না, প্রধানমন্ত্রীকে  রওশন

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। মঙ্গলবার দুপরে ছেলে সাদ এরশাদকে নিয়ে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ কথা বলেছেন রওশন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের কর্মকাণ্ডে আমার সমর্থন নেই।
রওশনের মুখপাত্রা কাজী মামনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির সাথে যেনো কোনো জোট না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন রওশন এরশাদ।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি ছয় বারের সংসদ সদস্য রওশন এরশাদ। প্রয়াত সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পত্নীর নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল মনোনয়ন দিয়েছে দলের স্থানীয় এক নেতাকে। ওই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগও।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতেন। ২০১৮ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর ওই আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তার ছেলে সাদ এরশাদ।

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটেও সাদ প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি তাকে বাদ দিয়েছে। ওই আসনে মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের।

এদিকে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর লাঙ্গল প্রতীক না পেয়ে রংপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা।

গণভবনের শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদও ছিলেন।

রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, জিএম কাদের জোর করে জাতীয় পার্টি দখল করেছে। দলের আড়াই থেকে তিনশ নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়নি বরং অপমান করেছে। জাতীয় পার্টির সাথে যেনে জোট না হয় সে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি দলীয় পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।

তিনি আরও বলেন, জিএম কাদেরের সাথে আমরা নাই। তারা আমাদের দলের অনেকেই মনোনয়ন দেয়নি ও বহিষ্কার করেছে। তাদের সাথে জোট নয়, জোট করতে হবে আমাদের সাথে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে একত্রে মহাজোট করে জাতীয় পার্টি ২০০৮ সালে ভোটে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পরের নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দ্যোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন রওশন।

সেই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রার্থিতা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন দলে রওশনকে ঘিরে তৈরি হয় একটি বলয়। তারা জানান, ভোট করবেন। দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন। বর্তমান সংসদেও তিনি একই পদে আছেন

জি এম কাদের সে সময় তার ভাইয়ের নির্দেশ মেনে ভোট থেকে দূরে ছিলেন। তবে এরশাদের মনোনয়নপত্র ঢাকা থেকে প্রত্যাহার হলেও রংপুর-৩ ও লালমনিরহাট-১ আসনে থেকে যায়। সেই নির্বাচনে রওশন এরশাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে সেই নির্বাচনে এরশাদকে রংপুর থেকে জয়ী ঘোষণা করা হয়, পরাজিত দেখানো হয় লালমনিরহাটে।

ভোটের পর এরশাদ প্রথমে বলেন, তিনি শপথ নেবেন না। তবে তার আগেই জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সংসদ সদস্যের বেশিরভাগের পছন্দে রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা-নির্বাচিত হন এবং তাকে বিরোধীদলীয় নেতা করা হয়। পরে এরশাদ শেষ সময়ে একা গিয়ে স্পিকারের কাছে শপথ নেন। তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়।

নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি সেবার বিরোধী দলে থাকলেও দলের কয়েকজন মন্ত্রিত্ব নেন। দলটির দ্বিমুখী ওই ভূমিকার কারণে সংসদের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হয় অনেক।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলে আবার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল নিয়ে হয় মহাজোট। নির্বাচনের পর জোট ভেঙে দেয়া হলে জাতীয় পার্টি বসে বিরোধী দলে। ফের বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন।
উত্তরণবার্তা/এআর

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK
আরও সংবাদ