শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১০:৩৪
ব্রেকিং নিউজ

৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জমুক্ত দিবস

৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জমুক্ত দিবস

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক :  স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ জেলা গোপালগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর। গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জ শহর পাকিন্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল। 
 
এ দিনটি গোপালগঞ্জ বাসীর কাছে আজও তাই স্মরণীয় ঘটনা, শ্রেষ্ঠ এক স্মৃতি। আনন্দ ও উৎসবের দিন। এ দিনে সূর্য ওঠার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন। হাতে তাদের উদ্যত রাইফেল  ও বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত রক্ত লাল সূর্য সম্বলিত গাঢ় সবুজ জমিনের পতাকা। মুখে বিজয়ের হাসি।আজ আর শহরে হানাদার বাহিনী নেই। আজ এ শহর মুক্ত।  আজ এ শহর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের দখলে।  এ যেন বন্দিত্ব মোচনের সুপ্রভাত। এ যেন মুক্তির অনাবিল সুখ। 
 
৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে  মিত্র দেশ ভারত প্রবাসী মুজিবনগর সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করায় হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ বলয় রচিত হওয়ার খবর পেয়ে পাকিস্তানী সেনারা গোপালগঞ্জ সদর  উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ের  মিনি ক্যান্টনমেন্ট (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়) ছেড়ে পালিয়ে যায়। মেজর সেলিমের অধীনে হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকা  ও অন্য একটি দল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ দিন তাই পরম পাওয়ার একটি  দিন। শত দুঃখ কষ্ট ও আত্মত্যাগের পর  বিজয়ের আনন্দঘন এক মুহূর্ত। পাকিস্তানি সেনারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে আর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে আসছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে  মুক্তিকামী জনতার মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে শহরের মুক্তিকামী মানুষ  বেড়িয়ে আসেন। সূর্যোদয়ের মতো আভা ছড়িয়ে বিস্তৃত করেছিল দিক দিগদিগন্ত। শহরবাসী মেতে উঠেছিল অসীম আনন্দ উৎসবে।
 
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আজো অম্লান হয়ে আছে। আজো এসব বীর সেনানীর মনে শ্রেষ্ঠ স্মৃতি ও উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছে এ মুক্তিযুদ্ধ। ৭ ডিসেম্বর শহর হানাদার মুক্ত দিবস এলেই মুক্তিযুদ্ধের এসব বীর সৈনিকেরা মুখর হয়ে  ওঠেন স্মৃতিচারণায়। ফিরে যান  স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় দিন গুলোতে। রণাঙ্গনের সেই ভয়াল স্মৃতি, যুদ্ধদিনের বিবরণ ও গৌরবময় বীরত্বগাথা স্মরণ করে হয়ে ওঠেন গর্বিত।
 
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিকদার নূর মোহাম্মদ দুলু বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৯৭১ সালের মার্চে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করি। এরপর শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে ২৫ টি স্থানে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপালগঞ্জ সদর  থনা পরিষদ-সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ের  মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। রণাঙ্গনের সেই ভয়াল স্মৃতি, যুদ্ধদিনের বিবরণ ও গৌরবময় বীরত্বগাথা স্মরণ করে আমরা  গর্বিত হয়ে উঠি।
  
প্রবীণ সাংবাদিক  রবীন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে গোপালগঞ্জের সূর্য সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৭ মার্চ গোপালগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়।  আসে বহু প্রতিক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিকামী মানুষ বিজয় উৎসবে যোগ দিয়ে স্বজন হারানো বেদনায় অশ্রুপাত করেন। বেদনা ও আনন্দ মিশ্রিত দিনটি শহরের মানুষ উদযাপন করেন।
 
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা বদর বলেন, ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জবাসীর কাছে একটি গৌরবের দিন। তাই এ দিনটি আমরা উৎসব মুখর পরিবেশে উৎযাপন করে আসছি। এ বছরও দিবসটি উদযাপনে র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ আনন্দ আয়োজন করা হচ্ছে।
উত্তরণবার্তা/এসএ
 

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK