শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা সময়: ১৮:৪১
ব্রেকিং নিউজ

আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস

আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস

উত্তরণবার্তা প্রতিবেদক : আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস। ৫২ বছর আগে ফেনীতে সেদিন সকালটা এসেছিল অন্যরকমভাবে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রক্তাক্ত এ জনপদে সেদিন এসেছিল প্রতিক্ষিত ‘মুক্তি'। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে জনপদে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম সূর্য। 
 
আজ ৬ ডিসেম্বর ২০২১, ফেনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের হটিয়ে ফেনীকে হানাদারমুক্ত করে স্বাধীন করা হয়। ওইদিন সকাল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ২নং সাব সেক্টর কমান্ডার ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক লে. কর্নেল জাফর ইমাম, বীর বিক্রম'র (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) নেতৃত্বে দলে-দলে লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে ফেনী শহরে প্রবেশ করে।
 
সেদিন সকালটা যেমন ছিল-
৭১’র ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিল ফেনী। ফলে সেদিন সকালে ‘জয় বাংলা’  স্লোগান শুনে অনেকেই হকচকিত হয়ে ওঠেন। অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের এ স্লোগান প্রথম বিশ্বাসই করতে পারেননি- সত্যিই আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে অনেকেই পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের মিছিলে দেখতে পান। তখন লোকজনের ভুল ভাঙতে শুরু করে এবং ধীরে-ধীরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষ মিছিলে যোগ দিতে শুরু করেন।
 
৬ ডিসেম্বর সকালের বর্ণনা দিতে গিয়ে লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, বীর বিক্রম বলেন, আমরা যখন ফেনী প্রবেশ করলাম ক্ষণিকের মধ্যে ফেনী শহরে জনতার ঢল এসেছিলো। শুরু হয় বিজয় মিছিল। জয়বাংলা শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। রাস্তায় জনগণ যেখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাৎ হচ্ছে সেখানেই তাৎক্ষণিক তারা আলিঙ্গন করে বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ছিল। অনেকে ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে কোলে করে রাস্তা পরিদর্শন করছিল। রাস্তার দু’পাশ থেকে জনতা দু’হাত নেড়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। মিছিলে-মিছিলে শোভা পাচ্ছিলো বাংলাদেশের পতাকা। অনেককে বিজয়ের আনন্দে কাঁদতে দেখেছি।
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুস্তাফা বলেন, এ দিন আমাদের কম্যান্ডিং অফিসার মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে আমরা ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সৈনিকরা ফেনী মুক্ত করি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৫ বেলুচ রেজিমেন্ট ও ২৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স এর সেনারা উর্ধ্বশ্বাসে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। ফেনীর উল্লসিত জনতা সেই কাঁক-ডাকা ভোরে দলে-দলে তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে, ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানসহ ফুল দিয়ে ও মিষ্টি খাইয়ে বরণ করে নেয় আমাদের। শহরের রাজাঝির দিঘির পাড়ে এসডিও অফিস ও কোর্ট-কাঁচারি সংলগ্ন স্থান থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে জাফর ইমাম ও জননেতা খাজা আহমদ সাহেব হলুদ রঙ’র মানচিত্র খঁচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। হাজার-হাজার জনতা ও মুক্তিযাদ্ধা দরাজ গলায় গাইলেন আমাদের জাতিয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
 
সেদিনের বিবরণ দিতে গিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সকালেই ফুলগাজীর বন্দুয়া থেকে এসে ফেনী সার্কিট হাউজে (বর্তমান ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজ) প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। বিকালের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক জয়নাল আবদীন ভিপির নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী রাজাপুর, কোরাইশ মুন্সী ও সোনাগাজীর নবাবপুর থেকে ট্রাংক রোডে চলে আসে। সন্ধ্যায় সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশ করেন।
 
গেরিলা যুদ্ধের বিবরণ দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবদীন ভিপি বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতেই গেরিলা যুদ্ধের নীতি ‘হিট অ্যান্ড রান’ প্রয়োগ করে যুদ্ধ করতে করতে আমরা পাঁচগাছিয়া এলাকার কাছাকাছি চলে আসি। রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এদিকে এসে হিট (হামলা) করে আবার চলে যাই। ৫ ডিসেম্বর আমরা ঠিক ফেনীর কাছাকাছি যখন আসি তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রণভঙ্গ দিয়ে শেষ রাতের দিকে শুভপুর ও বারইয়ারহাট হয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।
উত্তরণবার্তা/এসএ

  মন্তব্য করুন
     FACEBOOK